Thank you for trying Sticky AMP!!

বিদেশে শ্রমিক যাচ্ছেন কম, শ্রমবাজার মন্দা

>
  • জনশক্তি রপ্তানি
  • মধ্যপ্রাচ্যের বাজার সংকুচিত
  • বন্ধ হয়ে আছে মালয়েশিয়ার দুয়ার
  • সংকট সমাধানে সরকারি তৎপরতা মন্থর।
  • দেশের শ্রম রপ্তানি মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক ৮০%
  • সৌদি আরবে বেকারত্ব বেড়ে এখন ১২%
  • দেশে বাজার সংকুচিত হয়ে পড়েছে
  • বড় শ্রমবাজার মালয়েশিয়া
  • গত বছর জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে ১,৭৫,৯২৭
  • গত সেপ্টেম্বরের পর নতুন করে ভিসা দেয়নি দেশটি

বিদ্যমান শ্রমবাজারে সংকট তৈরি হওয়ায় ২০১৮ সালে জনশক্তি রপ্তানি কমেছে ২৭ শতাংশ। এ বছরের প্রথম তিন মাসেও নিম্নমুখী ধারায় আছে শ্রম রপ্তানি। এর থেকে উত্তরণের জন্য নতুন বাজার খোঁজার বিকল্প নেই। কিন্তু সেখানেও লক্ষণীয় কোনো উদ্যোগ নেই।

দেশের শ্রম রপ্তানির ৮০ শতাংশের বেশি মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক। বড় শ্রমবাজারের অন্যতম সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়া। সৌদি আরবে বেকারত্ব বেড়ে এখন ১২ শতাংশ। ফলে সে দেশে বাজার সংকুচিত হয়ে পড়েছে। আরব আমিরাতের বাজার খুললেও তা সীমাবদ্ধ শুধু গৃহশ্রমিক খাতে। মালয়েশিয়ার বাজার বন্ধ আছে প্রায় ৬ মাস। এই তিন বড় বাজারে সংকটের কারণে জনশক্তি রপ্তানি কমে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে বৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ জন কর্মী কাজ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যান। আগের বছর এটি ছিল ১০ লাখ ৮ হাজার ৫২৫ জন। আবার গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) জনশক্তি রপ্তানি ছিল ২ লাখ ৪ হাজার ২০১ জন। এ বছর তা ১৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৬৯৯ জন।

তবে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রৌনক জাহান প্রথম আলোকে বলেন, সংখ্যাগত বৃদ্ধি নয়, দক্ষ জনশক্তি রপ্তানিতে জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রতি উপজেলায় দক্ষ জনশক্তি তৈরির উদ্যোগ চলছে। পুরোনো শ্রমবাজারের ওপর নির্ভরতা কমাতে নতুন বাজার তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।

সংকুচিত হচ্ছে পুরোনো শ্রমবাজার
অভ্যন্তরীণ বেকারত্ব কমাতে ১২ ধরনের কাজে কোনো বিদেশি নেবে না সৌদি আরব। এসব কাজে যুক্ত পুরোনো প্রবাসীরাও দেশে ফিরে আসছেন। সরকারের পক্ষ থেকে আরব আমিরাতের বাজার খুলে যাওয়ার দাবি করা হলেও বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে না। পুরুষ শ্রমিকদের বাজার সেখানে কার্যত বন্ধ। গত বছর সেখানে শ্রম রপ্তানি ছিল ১ শতাংশের কম। এ বছর তিন মাসে গেছেন মাত্র কয়েক শ নারী শ্রমিক। তবে দুই দেশের সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী, ধীরে ধীরে ১৯টি পেশায় পুরুষ কর্মী নেওয়ার কথা রয়েছে।

মালয়েশিয়ার দুয়ার খুলেও খুলছে না
অনিয়মের জের ধরে থমকে গেছে বড় শ্রমবাজার মালয়েশিয়ার দুয়ার। গত বছর দেশটিতে জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯২৭ জন। গত সেপ্টেম্বরের পর থেকে নতুন করে আর ভিসা দেয়নি মালয়েশিয়া। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে রপ্তানি হয়েছে ৩৮ হাজার ৮৬৫ জন। আর এ বছর ওই সময়ে গেছে ৫০ জনের কম।
গত বছর মালয়েশিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর আগের কর্মী নিয়োগ পদ্ধতি (মাত্র ১০ এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠানো) বাতিল করে সে দেশের সরকার। এ খাতের ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, প্রবাসীকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মালয়েশিয়া সফরে গেলে বিষয়টির দ্রুত সমাধান হতে পারে।

বাড়তি বিমান ভাড়ায় ব্যাহত মধ্যপ্রাচ্য যাত্রা
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিমান ভাড়া বেড়ে গেছে দ্বিগুণের বেশি। ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার ভাড়া ৬০ হাজার টাকা হয়ে গেছে। ভিসা পেয়েও অতিরিক্ত ভাড়ার জন্য অনেক শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্যে যেতে পারছেন না বলে জানিয়েছে জনশক্তি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা)।
বাড়তি বিমান ভাড়ার বিষয়টি সমাধান করতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এতে আকাশপথের ভাড়া নিয়োগকর্তার বহন করার নির্দেশনা আছে। বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এবং শ্রম শাখাগুলোতে তা পাঠানোও হয়েছে। কিন্তু এখনো তার কোনো ফল আসেনি।

জাপান ও থাইল্যান্ডে সম্ভাবনা
নতুন সম্ভাবনাময় বাজার হতে যাচ্ছে জাপান। বিএমইটি সূত্র জানায়, গত বছর জাপানে গেছেন ১৬৩ জন। এ বছর প্রথম তিন মাসে গেছেন ৪০ জন। তবে ইতিমধ্যেই জাপান যেতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। ২৬টি স্থানে প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে। চলমান এ প্রক্রিয়ায় কয়েক মাসের মধ্যেই জাপানে জনশক্তি রপ্তানি বাড়তে পারে।

থাইল্যান্ডে বেকারত্বের হার বর্তমানে দশমিক ৮ শতাংশ। ফলে সেখানে বাইরের লোকের কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে নার্সের সহকারী, গৃহশ্রমিক, নির্মাণকাজ ও মাছ ধরার ট্রলারে শ্রমিকের চাহিদা আছে। এই সংখ্যা প্রায় তিন লাখ হতে পারে বলে মনে করছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। বায়রার এক শীর্ষ নেতা জানান, থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা বিমান ভাড়াসহ তিন মাসের প্রশিক্ষণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

সূত্র জানায়, এর আগেও একবার থাইল্যান্ডের বাজার নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দুই সরকারের মধ্যে চুক্তির প্রস্তাব দিলে বিষয়টি থেমে যায়।

সার্বিক বিষয়ে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান তাসনিম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, এ খাতের উন্নয়নে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে কোনো নেতৃত্ব দেখা যাচ্ছে না। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া পরিস্থিতির উত্তরণও হবে না।