Thank you for trying Sticky AMP!!

বিনিয়োগে বিশেষ আগ্রহ জাপানিদের, তবে...

বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসা করার ক্ষেত্রে জাপানি কোম্পানিগুলো এখন বিশেষ আগ্রহ দেখাচ্ছে। তবে এ দেশে অংশীদার পেতে তারা বাংলাদেশি কোম্পানিতে করপোরেট সুশাসনের অভাব বোধ করে। বিশেষ করে বাংলাদেশি কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে তাদের আস্থা কম। মালিকানার চিত্র নিয়েও প্রশ্ন থাকে তাদের।

জাপানি প্রতিষ্ঠান ও জাপানের সঙ্গে ব্যবসা করে, এমন বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা এ মতামত দিয়েছেন। তাঁরা ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) ও জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (জেবিসিসিআই) আয়োজিত ‘জাপানিদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের ক্ষেত্রে করপোরেট সুশাসনের গুরুত্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ নিয়ে কথা বলেন। মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে আমারি হোটেলে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে ঢাকায় জাপানি দূতাবাস, দেশটির বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান, জাপান-বাংলাদেশ চেম্বারের নেতারা ও বাংলাদেশি শীর্ষস্থানীয় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে ২৬৯টি জাপানি কোম্পানি ব্যবসা করছে। এ সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে।

সভাটির দুটি অধিবেশন ছিল। প্রথম অধিবেশনে বাংলাদেশে করপোরেট সুশাসনের চর্চা নিয়ে আলোচনা হয়। দ্বিতীয় অধিবেশনে পারিবারিক ব্যবসায় সুশাসন নিয়ে আলোচনা করেন জাপান ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।

দ্বিতীয় অধিবেশনে জাপান-বাংলাদেশ চেম্বারের মহাসচিব তারেক রাফি ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ বাড়ছে। এ দেশে বছরে ৭ শতাংশের বেশি হারে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। বাজার বড় হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যার একটি অংশ হচ্ছে জাপানি অর্থায়নে। এসব ক্ষেত্রে জাপানি কোম্পানিগুলোর ব্যবসার আগ্রহ বাড়ছে।

বাংলাদেশে জাপানি কোম্পানিগুলোর সংগঠন শু-কো-কাইয়ের সভাপতি আকিহিশা তোমিওকা বলেন, পারিবারিক ব্যবসা খারাপ কিছু নয়। তবে জাপানি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ব্যবসা করতে হলে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা দরকার। কোম্পানিতে কমপ্লায়েন্স বা সার্বিক মান থাকতে হবে। তিনি বলেন, কোনো কোম্পানি যদি মনে করে তাদের বিদেশি মূলধন দরকার নেই, প্রযুক্তি না হলেও চলবে, সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে করপোরেট সুশাসন জরুরি।

একই অধিবেশনে পারিবারিক ব্যবসা নিয়ে নানা কথা হয়। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচারক উজমা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য যতটা উন্নতির দিকে যাবে, করপোরেট সুশাসন ততটাই বাড়বে। এটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

এ অধিবেশনে রহিমআফরোজ গ্রুপের পরিচালক মুদাসসির মুর্তাজা মঈন ও শু-কো-কাইয়ের সহসভাপতি প্রদীপ দাস বক্তব্য দেন।

প্রথম অধিবেশনে জাপান-বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি ও জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) বাংলাদেশ প্রতিনিধি দাইসুকি আরাই বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনা অনেক বড়। জাপানিরাও বিনিয়োগে আগ্রহী। কিন্তু কিছু কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। তিনি একপর্যায়ে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে কর্মরত ৬২ শতাংশ জাপানি কোম্পানি মনে করে, এ দেশে কর্মীদের মান (শ্রমিক নয়) যথাযথ নয়।

আবদুল মোনেম লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম মাঈনুদ্দিন মোনেম বলেন, হোন্ডার মতো ১০টি জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে আনতে হলে করপোরেট সুশাসন জরুরি।

ব্রামার অ্যান্ড পার্টনারসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খালিদ কাদির বলেন, এ দেশে কোম্পানিগুলোর পরিচালকেরা যেনতেনভাবে লভ্যাংশ পেতে চান। এ জন্য অনেক সময় কোম্পানিকে ঋণ নিয়েও লভ্যাংশ দিতে হয়।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার স্বপন কুমার বালা উল্লেখ করেন, আর্থিক বিবরণীতে স্বচ্ছতা ও মান আনতে সরকার অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে। আগামী কয়েক বছরে এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হবে। এতে করপোরেট সুশাসন পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে জাপানি দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন তাকেশি ইতো, আইএফসির জ্যেষ্ঠ করপোরেট সুশাসন কর্মকর্তা সানা আবুজায়েদ, করপোরেট সুশাসন কর্মকর্তা লোপা রহমান বক্তব্য দেন।