Thank you for trying Sticky AMP!!

বিপর্যয় কাটছে রপ্তানিতে, পণ্য পরিবহন বেড়েছে

চট্টগ্রাম বন্দর। প্রথম আলো ফাইল ছবি

এপ্রিল মাসের বিপর্যয় কাটিয়ে সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে রপ্তানি পণ্য পরিবহন কিছুটা বেড়েছে। এই চিত্র পাওয়া গেছে দেশের ৯১ শতাংশ রপ্তানি পণ্য পরিবহনকারী চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য থেকে।

বন্দরের তথ্যে দেখা যায়, এপ্রিল মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১৪ হাজার ৭৪৪টি কনটেইনারে পণ্য রপ্তানি হয়েছিল, যা ১৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। মে মাসে ৩৩ হাজার ৮৩৬টি কনটেইনারে রপ্তানি পণ্য পরিবহন করা হয়। অবশ্য এপ্রিলের চেয়ে রপ্তানি কিছুটা বাড়লেও গত বছর একই সময়ের তুলনায় তা ৫৫ শতাংশ কম।

করোনাভাইরাসের প্রভাবে এখন পর্যন্ত রপ্তানি খাতেই সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে। এপ্রিল মাসে ৫২ কোটি ডলার বা ৪ হাজার ৪২০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তা প্রায় ৮৩ শতাংশ কম। মে মাসে কনটেইনারের হিসাব পাওয়া গেলেও রপ্তানি আয়ের হিসাব এখনো প্রকাশ করেনি রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো।

রপ্তানির বড় অংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। তৈরি পোশাক খাতের সংগঠন বিজিএমইএর বন্দর ও জাহাজীকরণবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, এপ্রিলে স্থগিত হওয়া অনেক চালান মে মাসে জাহাজীকরণ হয়েছে। আবার মে মাসে কারখানা খোলা থাকায় পণ্য রপ্তানি বেড়েছে। জুন মাসেও মোটামুটি একই রকম অবস্থা থাকবে। নতুন আদেশ পাওয়া গেলে জুলাই মাস থেকে রপ্তানি বাড়তে পারে। তবে করোনার প্রভাব এখনো কাটিয়ে উঠতে না পারায় এ বছর রপ্তানিতে আগের মতো স্বাভাবিক অবস্থা থাকবে না।

বিজিএমইএর ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, করোনার প্রভাবে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ১ হাজার ১৫০টি কারখানার ৩ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার বা ২৭ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি আদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়েছিল।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বৈদেশিক বাণিজ্যের চিত্র মূলত পুরো দেশের চিত্র। কারণ, মূল্যের হিসাবে, বাংলাদেশে রপ্তানি পণ্যের ৯১ শতাংশ পরিবহন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। মোংলা বন্দর, ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলো দিয়ে হয় বাকি ৯ শতাংশ।

মে মাসে ৩৩ হাজার ৮৩৬টি কনটেইনারে পণ্য রপ্তানি, যা গত বছরের তুলনায় ৫৫ শতাংশ কম।
বিপর্যয় কাটছে রপ্তানিতে

রপ্তানি কিছুটা বাড়লেও এবার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চলতি অর্থবছরে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ২ হাজার ৯৪৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ফলে মে ও জুন মাসের রপ্তানি দিয়ে এই লক্ষ্যমাত্রা আর পূরণ হচ্ছে না।
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, কনটেইনারের সংখ্যা থেকে রপ্তানির নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারা যে কমে আসছে, তা ধারণা করা যায়। এক মাসের ব্যবধানে দ্বিগুণের বেশি কনটেইনার পাঠানোর হিসাবও কিছুটা আশার ইঙ্গিত করে। যদিও এর ভেতরে পুরোনো আদেশ বা স্থগিত হওয়া চালানের উল্লেখযোগ্য অংশ রয়েছে।
তিনি বলেন, রপ্তানির প্রধান গন্তব্যের দেশগুলো করোনায় আক্রান্ত। এখনো সামাল দেওয়া যায়নি। এসব দেশে বেকারত্বও বেড়েছে। নতুন করে ব্যবসা–বাণিজ্য শুরু করতে সময় বেশি লাগছে। ফলে এই বিচারে রপ্তানি দ্রুত বৃদ্ধি পাবে বলে মনে হয় না। তবে পরিবর্তনটা ধীরে ধীরে হতে পারে।
এ ধরনের পরিস্থিতিতে স্বল্পমূল্যের পোশাকের চাহিদা বাড়বে জানিয়ে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, স্বল্পমূল্যের পোশাক রপ্তানির সুযোগ আসবে সামনে। এটি কাজে লাগানো গেলে রপ্তানি আয় বাড়ানোর পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত চার থেকে ছয় মাস টিকে থাকার জন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি লজিস্টিকস কোম্পানিগুলোকেও প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।