Thank you for trying Sticky AMP!!

বিপর্যয় থেকে পোশাক শ্রমিকদের বাঁচাতে হবে

মোস্তাফিজ উদ্দিন

গত কয়েক সপ্তাহে পোশাক আমদানিকারক বিশ্বের বড় বড় ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতা বা রিটেইলাররা ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র এবং পাশাপাশি অন্য দেশগুলোতে তাদের দোকান সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে। প্রাথমিকভাবে তারা বলছে, আগামী দুই সপ্তাহের জন্য দোকানগুলো বন্ধ থাকবে। তবে মনে হচ্ছে, এই বন্ধ লম্বা সময় থাকতে পারে। বলা মুশকিল, করোনাভাইরাস কত দিন থাকবে। কেউ কেউ বলছেন, অন্তত জুনের আগে এই ভাইরাসের ভয়াবহতা থেকে মুক্তি হচ্ছে না।

ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকার জন্য পশ্চিমা বিশ্বে ক্রেতারা বাসা থেকে বের হচ্ছেন না, মার্কেটে যাওয়া তো দূরের কথা। করোনাভীতিতে ক্রেতাদের এই বাসায় অবস্থান, পোশাক বিক্রির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এ পরিস্থিতিতে ক্রেতারা বাংলাদেশে তাদের চলতি ক্রয়াদেশ বাতিল করছেন ও ইতিমধ্যে ক্রয়াদেশ দেওয়া প্রস্তুত পোশাক রপ্তানি করতে মানা করছেন। এমনকি পরবর্তী ক্রয়াদেশের জন্য এ দেশের পোশাক প্রস্তুতকারীরা যে কাপড় ও কাঁচামাল ইতিমধ্যে আমদানি করছেন, সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করতে নিষেধ করেছেন। অধিকাংশ কারখানা এই অবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে তাদের খরচ কমানোর চেষ্টা করছে। যেহেতু ক্রয়াদেশ নেই, তাই কারখানাগুলো শ্রমিকদের বসিয়ে রেখে বেতন দিতে সক্ষম হবে না। সে ক্ষেত্রে তারা হয়তো তাদের শ্রমিকসংখ্যা কমিয়ে ফেলবে অথবা শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিতে হবে। উভয় ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের আয় কমে যাবে।

এটিই আমার সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার জায়গা। যে ৪০ লাখ শ্রমিক আমাদের পোশাকশিল্পে কর্মরত, তাঁদের আয় দিয়ে তাঁদের পরিবার চলে। তাঁদের আয় বন্ধ হয়ে গেলে অথবা আয় কমে গেলে, কে তাঁদের চালাবেন? 

ব্র্যান্ড ও রিটেইলাররা বর্তমানে এমন সমস্যার মোকাবিলা করছে, যার সম্মুখীন তারা আগে কখনো হয়নি। একদিকে তাদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য নির্ধারিত ব্যয় বহন করতে হচ্ছে, অন্য দিকে সহ্য করতে হচ্ছে শেয়ারবাজারের দরপতন। তদুপরি তাদের মাথার ওপর থাকছে ঋতু শেষে পণ্য বিক্রিতে ডিসকাউন্ট গোনার আশঙ্কা। এ অবস্থায় অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি জরুরি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের একসঙ্গে কাজ করা এবং একসঙ্গে এ সমস্যার মোকাবিলা করা।

সবকিছু বিবেচনায় রেখে, এ দেশের পোশাক প্রস্তুতকারকেরা ব্র্যান্ড ও রিটেইলারদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। আমাদের মাথায় রাখতে হবে, যেকোনোভাবেই আমরা ৪০ লাখ শ্রমিক এবং তাঁদের সঙ্গে জড়িত প্রায় ২ কোটি মানুষকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারি না। ব্র্যান্ড ও রিটেইলারদের মনে রাখতে হবে যে করোনার প্রাদুর্ভাব সারা জীবন থাকবে না। এই ভাইরাস নির্মূল হওয়ার পর ব্র্যান্ড ও রিটেইলারদের বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুতকারকদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হবে। কারণ, করোনার প্রভাবে ক্রেতারা এখন বাসায় বসে থাকার কারণে পরিস্থিতির উন্নতি হলে পোশাক বিক্রি বহুগুণে বেড়ে যেতে পারে। সেই সব পোশাক তৈরি করতে ব্র্যান্ড ও রিটেইলারদের বাংলাদেশেরই মুখাপেক্ষী হতে হবে। সুতরাং এখন তাদের উচিত বাংলাদেশের কারখানাগুলো যেন বন্ধ না হয়, সেদিকে সচেষ্ট থাকা।

আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে দারিদ্র্যও এক দুরারোগ্য ব্যাধি। দারিদ্র্যের কারণে করোনার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ মারা যেতে পারে; কিংবা অনেক মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে। এ জন্য আমি আমাদের দেশের পোশাকশ্রমিকদের চাকরি হারানো নিয়ে ভীষণভাবে চিন্তিত।

সত্যিকার অর্থে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন ব্র্যান্ড ও রিটেইলার এবং পোশাক প্রস্তুতকারকদের মধ্যে অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা অনেক বেশি জরুরি। সরকারগুলোরও এখন সময় তাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করার মাধ্যমে যার যার দেশের অর্থনীতির পতন ঠেকানো। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময়, বিশ্বের অনেক ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার দশা হয়েছিল। কিন্তু তারা বেঁচে গিয়েছিল, কারণ তাদের সরকারগুলো বুঝতে পেরেছিল যে সেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান রক্ষা করাটা কতটা জরুরি। তাদের পতন সেই সব দেশ ও দেশের জনগণের ওপরে বড় বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারত।

বর্তমানের এই কঠিন পরিস্থিতিতে, পোশাকশিল্প বাঁচিয়ে রাখতে যুগপৎভাবে আমাদের দেশের সরকার এবং পশ্চিমা বিশ্বের সরকারগুলোরও এগিয়ে আসতে হবে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও নীতিনির্ধারণ করতে হবে যেন তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে ভেঙে না পড়ে। কারণ, করোনার প্রধানতম অর্থনৈতিক শিকার তারাই হবে। এখন তাদের সাহায্য অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি প্রয়োজন। শ্রমিকদের বাঁচিয়ে রাখতে পোশাক কারখানাগুলো দেউলিয়া বা বন্ধ হতে দেওয়া যাবে না। এই সমস্যা মোকাবিলায় আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার সময় এখনই।

মোস্তাফিজ উদ্দিন ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী।