Thank you for trying Sticky AMP!!

ব্যবসায়ীদের আস্থা ফিরছে

গত এপ্রিল-জুন মাসে ব্যবসায়ীদের মধ্যে যে ধরনের আস্থাহীনতা ছিল, বর্তমানে সেই আস্থা কিছুটা বেড়েছে। ফাইল ছবি

করোনা সংকটের পাঁচ মাস পরে ব্যবসায় ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসছে। গত এপ্রিল-জুন মাসে নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, ভবিষ্যৎ নিয়ে যাঁরা শঙ্কায় ছিলেন, তাঁদের শঙ্কা কাটতে শুরু করেছে। তবে এখনো ব্যাপক হারে আস্থা বাড়েনি। তবে বড় বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা কিংবা রপ্তানিতে বড় ধরনের উল্লম্ফনের মতো আস্থা ফেরেনি এখনো।

ব্যবসায়ীদের আস্থা নিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এ গবেষণা করেছে। ৩০৩টি ছোট-বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে টেলিফোনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরের ভিত্তিতে গবেষণাটি করা হয়েছে। গত ১৫-২৩ জুলাই তাঁদের কাছে মতামত জানতে চাওয়া হয়। গতকাল শনিবার এ গবেষণার ফল প্রকাশ করা হয়। সেখানে ব্যবসায়ীদের আস্থা ফিরে আসার বিষয়টি উঠে এসেছে।

গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, গত এপ্রিল-জুন মাসে ব্যবসায়ীদের মধ্যে যে ধরনের আস্থাহীনতা ছিল, বর্তমানে সেই আস্থা কিছুটা বেড়েছে। আস্থার মাত্রা ৫১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। আস্থার মাত্রা নির্ধারণের পদ্ধতিতে ৫০ শতাংশকে ধরা হয়েছে—আস্থায় কোনো পরিবর্তন আসেনি। এর কম হলে আস্থা কমেছে, বেশি হলে আস্থা বেড়েছে।

এবার দেখা যাক, করোনা শুরু হওয়ার পর গত এপ্রিল-জুন সময়ে ব্যবসায়ীদের কেমন আস্থা ছিল। সানেম বলছে, ওই সময়ে আগের তিন মাসের (জানুয়ারি-মার্চ) তুলনায় ব্যবসায়ীদের আস্থা বেশ কমে গিয়েছিল। তখন আস্থা ছিল ২৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ২০১৯ সালের এপ্রিল-জুন মাসের তুলনায় ২০২০ সালের একই সময়ে আস্থা কমে ২৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ হয়েছে। এর মানে, করোনার প্রাদুর্ভাবে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন—এই তিন মাসজুড়ে ব্যবসায়ীদের আস্থায় ব্যাপক চিড় ধরেছে। তবে পরিস্থিতি এখন বদলে যাচ্ছে। গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তা আগের চেয়ে বেড়েছে।

সানেম গতকাল এই গবেষণার ফলাফলের ওপর এক অনলাইন আলোচনা বা ওয়েবিনার আয়োজন করে। সেখানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমানসহ দেশের ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন।

তৈরি পোশাক, বস্ত্র, চামড়া, ওষুধ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, হালকা প্রকৌশল, পাইকারি বিক্রি, খুচরা বিক্রি, রেস্তোরাঁ, পরিবহন, তথ্যপ্রযুক্তি, আর্থিক খাত এবং নির্মাণ—এই ১৩টি খাতের ওপর গবেষণাটি করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীদের আস্থার মাত্রা এখনো আগের জায়গায় ফিরে আসেনি। তাঁদের মধ্যে আস্থা এখন ৪৮ শতাংশের কিছুটা বেশি। সবচেয়ে বেশি মনোবল ফিরে এসেছে ওষুধ খাতে। আর সবচেয়ে কম হালকা প্রকৌশল খাতের ব্যবসায়ীদের মধ্যে।

দুই-তৃতীয়াংশ প্রণোদনা পাননি

সানেমের মতামতভিত্তিক গবেষণায় ১০২টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠান সরকার ঘোষিত প্রণোদনার টাকা পেয়েছেন। অর্থাৎ উত্তরদাতাদের ৩৩ শতাংশ প্রণোদনার অর্থ পেয়েছেন। আর ৫৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান কোনো টাকা পায়নি। ১১ শতাংশ প্রণোদনা সুবিধার কথা জানে না। তবে যারা প্রণোদনার টাকা পেয়েছে, তাদের ৮৭ শতাংশের উপকার হয়েছে।

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ৮৮ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, করোনাকালে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে দুর্নীতিই প্রধান চ্যালেঞ্জ। বন্দর ও শুল্কসংক্রান্ত অসুবিধার কথা জানিয়েছেন ৭১ শতাংশ উত্তরদাতা। করোনা ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার কথা বলেছেন ৭০ শতাংশ উত্তরদাতা।

১৪ গাড়ির বদলে ৫২ গাড়ি

 করোনাকালে ব্যবসায়ীরা কেমন বিপাকে পড়েছেন, তা জানিয়েছেন সানেমের ওয়েবিনারে অংশ নেওয়া কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। ব্যবসার খরচ বেড়ে যাওয়ার উদাহরণ টানেন অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। তিনি বলেন, গাজীপুর কিংবা নারায়ণগঞ্জের কারখানায় কর্মীদের যাতায়াতের জন্য আগে ১৪টি মাইক্রোবাস লাগত। এখন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে ৫২টি মাইক্রোবাস লাগে। এতে খরচ বেড়ে গেছে। তিনি জানান, সরকার ঘোষিত প্রণোদনার অর্থ পেতে একেক সময় একেক ফরম পূরণ করতে হয়েছে। নানা কাগজ দিতে হয়েছে। এতে দীর্ঘসূত্রতা বেড়ে গেছে।

 মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি নিহাদ কবির বলেন, ‘প্রণোদনার ঘোষণা ব্যবসায়ীদের স্বস্তি দিয়েছিল, কিন্তু এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া স্বস্তি দিতে পারেনি। আমিও ব্যাংকের বোর্ডে বসি। প্রণোদনা দেওয়ার মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে ঋণের ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তাই ব্যাংকগুলো প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে আগ্রহী হয়ে ওঠেনি। এ ছাড়া সুসংগঠিত নয় এমন খাত প্রণোদনার কোনো টাকা পায়নি।’ তাঁর মতে, এ কারণে জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এসেও ব্যবসায়ীদের আস্থা খুব বেশি বাড়েনি।

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, সানেমের প্রতিবেদনটির সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো দুর্নীতি। করোনাকালে এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। উদ্যোক্তারা ব্যাংকের গ্রাহক হলেই কেবল প্রণোদনার টাকা পাচ্ছেন। ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে থাকা লাখ লাখ উদ্যোক্তা প্রণোদনার সুবিধা পাচ্ছেন না।

ঢাকা চেম্বারের আরেক সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম মনে করেন, শুধু জুলাই মাসের রপ্তানির চিত্র দেখে উৎসাহিত না হয়ে সামনের দুই মাসের চিত্র দেখতে হবে। কারণ, ইউরোপ-আমেরিকার যেসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে পোশাক নিত, তাদের অনেকে ঋণখেলাপি
হয়ে গেছে।

চীনা বিনিয়োগ কেন ভারত, ইন্দোনেশিয়ায় বেশি যাচ্ছে, ওই সব দেশ কী ধরনের সুবিধা দেয়—এসব নিয়ে গবেষণার তাগিদ দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি আরও বলেন, ‘দুর্নীতি থেকে কবে মুক্তি পাব, জানি না। এটি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, ব্যবসায়ীদের কর ও নগদ সহায়তা সুবিধা দেওয়ার কারণে সরকার কত টাকা হারাচ্ছে; এত সুবিধা দেওয়ার পর ওই সব ব্যবসা খাত কী মূল্য সংযোজন করছে, তা নিয়ে পর্যালোচনা হওয়া উচিত। কর ব্যবস্থা সহজ করার তাগিদ দেন তিনি।