Thank you for trying Sticky AMP!!

ব্যাংকমালিকেরা যা চাইছেন তা-ই পাচ্ছেন

আহসান এইচ মনসুর

প্রস্তাবিত বাজেট পুরোটাই গতানুগতিক, বিশেষ কিছু নেই। প্রতিবারের মতো এবারও ব্যয়ের মাত্রা অনেক বেশি এবং সরকারের আয়ের সাফল্য কম। বাজেটের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জনের সম্ভাবনাও কম। এককথায়, এই বাজেট বাস্তবায়ন ও রাজস্ব আদায় অসম্ভব ব্যাপার।
প্রধান সমস্যা মূলত রাজস্ব খাত ঘিরে। নতুন কোনো সম্ভাবনা নেই, নতুন কোনো খাতও সৃষ্টি হয়নি। প্রধান উৎস তামাক খাত থেকে আগের চেয়ে ২ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আসবে। এ খাতে ভালো সামঞ্জস্য করা হয়েছে, যার ফল সরকার পাবে। তবে বিড়ির ক্ষেত্রে কর আরও বাড়ানো প্রয়োজন ছিল, মনে হয় রাজনৈতিক কারণেই তা সম্ভব হয়নি। আশা করি নির্বাচনের পরে সরকার এ বিষয়ে নজর দেবে। যা জনগণ ও রাজস্ব আদায় উভয়ের জন্য ভালো হবে। ভ্যাটের যে স্বয়ংক্রিয় কার্যক্রম চলছে, সরকার তা এগিয়ে নেবে। এ বাজেট থেকেই এটা শুরু হবে। করদাতারা চাইলে এ বাজেট থেকেই ঘরে বসে নিবন্ধন ও কর বিবরণী দিতে পারবেন। যদি রাজস্ব বোর্ড এটা বাস্তবায়ন করে সুযোগ তৈরি করতে পারে।

করপোরেট কর আরও বৃহৎ আকারে কমানোর আশা ছিল। সব খাতের জন্য ২ শতাংশ হারে কমবে—এমনটাই ধরা হয়েছিল। কিন্তু একমাত্র ব্যাংক খাতের জন্যই কমানো হয়েছে, এটা কোনোভাবেই জনবান্ধব নয়। এর সঙ্গে শর্ত জুড়ে দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। এর মাধ্যমে খেলাপি ঋণের জন্য সঞ্চিতি বাড়ানো যেত। যাতে ব্যাংকগুলো শক্তিশালী হতো। সুদহার কমানোরও উদ্যোগ নেওয়া যেত। আপাতত মনে হচ্ছে, মুনাফার এই অর্থ লভ্যাংশ হিসেবে পরিচালকদের পকেটে চলে যাবে। এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয় কমবে, খাতেরও কোনো উন্নতি হবে না। ব্যাংকমালিকেরা যা চাইছেন, তা-ই পাচ্ছেন।
সঞ্চয়পত্রের সুদহার যেহেতু কমানো হয়নি, তাই ব্যাংকের সুদহার কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। ব্যাংকের সুদ কমাতে হলে আগে সঞ্চয়পত্রের সুদে হাত দিতে হবে। ব্যাংক খাতের দুরবস্থা দূর করতে হবে। খারাপ ঋণের হার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। যে পরিমাণ খেলাপি ঋণ দেখানো হচ্ছে তা সামান্যই। আসল সমস্যাটা অনেক প্রকট। অনেক দীর্ঘ সময় লাগবে এটা সারাতে।
আবার সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমালেই সুদহার কমবে, তা-ও নিশ্চিত নয়। ব্যাংকগুলোতে সুশাসনের যে ঘাটতি আছে, তা সরকারকে উদ্যোগ নিয়েই সমাধান করতে হবে। সরকার যদি আগের মতো খারাপদের প্রশ্রয় দেয়, তাহলে তা জনকল্যাণমূলক হবে না। সুদের হার কমাতে সাহায্য করবে না।
সরকারি ব্যাংকগুলোকে যে ধারাবাহিকভাবে মূলধন জোগান দেওয়া, এটা রক্তক্ষরণ ছাড়া কিছুই না। এখন পর্যন্ত ২০ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে, এর মাধ্যমে কোনো উপকার হয়নি। ব্যাংকগুলো দুর্বল ছিল, সে অবস্থাতেই পড়ে রয়েছে। কোনো সংস্কারবিহীন অর্থের অপচয় পৃথিবীর কোথাও হয় না। কোনো সংস্কার ছাড়াই আমরা ব্যাংকগুলোতে অনিয়মের ভর্তুকি দিয়ে আসছি।
বাজেটে স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। তা যেতে পারে, তবে সময় বেঁধে দিতে হবে। এমন সুবিধা দিলে পরিমাণগত দিক বিশ্লেষণ করা উচিত। মোটরসাইকেল বা মোটরগাড়িতে যে ছাড় দেওয়া হয়, তারা যদি শুধু যন্ত্রাংশ জোড়া দেয়, তাহলে দেশের কোনো উপকার হয় না, অপকার হয়, সরকার রাজস্ব হারায়। এসব প্রতিষ্ঠানকে ধাপে ধাপে মূল্য সংযোজন করতে হবে, না হলে সব সুবিধা প্রত্যাহার করে নেওয়া উচিত।
উবার, পাঠাওসহ বিভিন্ন অনলাইন সেবায় যদি কর বসাতে হয়, তা অল্প আকারে হওয়া উচিত। উবার থেকে সরকার কর আদায় করতে পারবে, কিন্তু অনলাইন কেনাকাটা থেকে কর আসবে না। কারণ, তদারকির তো কোনো ব্যবস্থা হয়নি। এতে যারা নিয়ম মেনে ব্যবসা করে, তারা বিপদে পড়বে। অন্যরা ফাঁকি দিলেও ধরা পড়বে না।
সবাই নিজের থাকার ব্যবস্থা করতে চায়। এ জন্য ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন ফি কমিয়ে দেওয়া উচিত, এটা খুবই বেশি। ফ্ল্যাটের ভ্যাটের ক্ষেত্রে বৈষম্য করার প্রয়োজন নেই। ছোট-বড় সবার ভ্যাটের এক হার হওয়া উচিত।