Thank you for trying Sticky AMP!!

ব্যাংক একীভূত করার পরামর্শ

বক্তব্য রাখছেন মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

ঋণের সুদহার কমিয়ে আনতে ব্যাংক একীভূত করার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ব্যাংকের সংখ্যা কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক কি বাধ্যতামূলক একীভূতকরণের উদ্যোগ নেবে? কীভাবে ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনা যায়, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিবেচনা করতে হবে। বাংলাদেশের অনেক ব্যাংকই প্রতিযোগিতার সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে না। কিছু ব্যাংক তাদের অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে সুদহার ঠিক করে দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সীমা ঠিক করে দিতে পারে।

মির্জ্জা আজিজ আরও বলেন, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে তদারকি জোরদার করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কার আনতে বাংলাদেশ ব্যাংককে উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে ঋণখেলাপিদের দ্রুত ও দৃশ্যমান শাস্তি হয়।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত দ্বিতীয় এ কে এন আহমেদ স্মারক বক্তব্যে মির্জ্জা আজিজ এসব কথা বলেন। ‘সেন্ট্রাল ব্যাংকিং’ শীর্ষক এ লেকচারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক মোহা. নাজিম উদ্দিন।

 মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক খাত স্থিতিশীল ও কার্যকর রাখতে সহায়তা করে কার্যকর বিধিবিধান। ঋণ পুনঃ তফসিল ও পুনর্গঠনের পর খেলাপি ঋণ যেভাবে বাড়ছে, তা ব্যাংক খাতের কার্যকর বিধিবিধানের ওপর অন্ধকার ছায়া ফেলেছে।

বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ে মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক টাকার অবমূল্যায়ন করতেই পারে। তবে টাকার অবমূল্যায়ন করলে রপ্তানি, প্রবাসী আয় ও মূল্যস্ফীতিতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে, তা বিবেচনা করতে হবে। যেহেতু রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের ভালো প্রবৃদ্ধি রয়েছে, তাই এখন টাকার অবমূল্যায়নের সঠিক সময় নয়।

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির আপাত কোনো প্রভাব নেই। বাংলাদেশের মতো মুক্ত অর্থনীতির ও আমদানিনির্ভর দেশে পণ্যের দাম মূলত আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করে। অতএব মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির ভূমিকা সীমিত হতে বাধ্য।

মুদ্রা সরবরাহ নিয়ে আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকারের ঋণের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আবার সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঋণেও নিয়ন্ত্রণ নেই, যদিও এর মধ্যে কিছু ঋণে সরকারের গ্যারান্টি রয়েছে। রপ্তানি, প্রবাসী আয় ও বিদেশি মূলধনের ওপরও নিয়ন্ত্রণ নেই। এসব অক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি বাস্তবায়নের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তাই তিনি মনে করেন, সরকারের ঋণের ওপর নজরদারি থাকা উচিত।

মির্জ্জা আজিজ মনে করেন, ‘অসামঞ্জস্য তথ্য’ ও ‘নৈতিক বিপত্তি’ ব্যাংক খাতের অপরিহার্য উপাদান হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো আমানতকারী ও ব্যাংক ব্যবস্থাপনার মধ্যে তথ্যের অসামঞ্জস্যতা। এর ফলে আমানতকারীরা কোনো সক্ষমতা যাচাই-বাছাই ছাড়াই ব্যাংকে আমানত জমা করছে। তারা মনে করে, ব্যাংক ব্যর্থ হলে সরকার উদ্ধার করবে, তাই আমানতকারীদের টাকা নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই। নৈতিক বিপত্তি থেকে তাদের এ প্রবণতা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে মির্জ্জা আজিজ বলেন, ‘কয়েকটি প্রশ্ন রেখে আমি শেষ করতে চাই। বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ভেবে দেখতে পারে।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘সরকার ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক অস্বীকৃতি জানাতে পারে কি? এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতার সঙ্গে যুক্ত। তবে এ বিষয়টি আমি আলোচনা করিনি। ব্যাংকের সংখ্যা কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক কি বাধ্যতামূলক একীভূতকরণের উদ্যোগ নেবে? ব্যাংকগুলোর জোটবদ্ধ হয়ে সুদের হার নির্ধারণ বন্ধ করতে অ্যান্টি-ট্রাস্ট/অ্যান্টি একচেটিয়া আইন থাকা উচিত কি? কার্যকর বিধিবিধান কেন খেলাপি ঋণের পরিমাণ যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে পারল না?’

মির্জ্জা আজিজ আরও প্রশ্ন করেন, খেলাপি ঋণ আদায় ও খেলাপিদের শাস্তি দিতে অর্থঋণ আদালত আইন ও দেউলিয়া আইনে কী ধরনের সংস্কার দরকার? নির্দেশিত ঋণ (কৃষি, এসএমই) নির্ধারিত খাতে গেল কি না, তা খতিয়ে দেখতে বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনা করা কি উচিত নয়? এ ছাড়া নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে এসব ঋণের প্রভাব কী, তা নিয়েও কি পর্যালোচনা থাকা উচিত নয়?

সভাপতির বক্তব্যে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, একে তো ব্যাংকে ঋণের তুলনায় আমানতের প্রবৃদ্ধি কম, তার ওপর এ পর্যন্ত ২ লাখ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকার সমমূল্যের ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ, সাবেক ও বর্তমান ব্যাংকাররা উপস্থিত ছিলেন।