Thank you for trying Sticky AMP!!

ব্যাংক খাতে সুশাসন চাই

>বিদায়ী ২০১৯–এর শুরুটা ভালো ছিল, শেষটা তেমন ভালো হলো না। শুরুতে ছিল অনেক প্রতিশ্রুতি, শেষটা ছিল অনেক ক্ষেত্রেই আশাভঙ্গের। কারণ, চাপের মুখে আছে অর্থনীতি। অর্থনীতির সঙ্গে যাঁরা নানাভাবে সম্পর্কিত, তাঁরা কীভাবে দেখছেন দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে। কেমন গেল বিদায়ী বছরটি। অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো কী কী। তাহলে নতুন বছরে যাচ্ছি কী নিয়ে, প্রত্যাশাগুলো কী। ঠিক এই প্রশ্নগুলোই রাখা হয়েছিল দেশের বিশিষ্ট কয়েকজন অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে। তাঁরা অর্থনীতির মূল্যায়ন যেমন করেছেন, তেমনি বলেছেন কী তাঁরা চান, কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে অর্থনীতি।
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান

কেমন গেল
ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এর আগে প্রতি প্রান্তিকে কখনই বাড়েনি। তবে চলতি বছরে বেড়েছে। আবার খেলাপি ঋণ বাড়ার হারও অনেক ছিল। এবার ঋণ পুনঃ তফসিলের পরিমাণও অনেক বেশি। সারা বছরই ঋণ আমানত অনুপাত সমন্বয়ের চাপ ছিল, সেপ্টেম্বরে এসে একটা নির্দেশনা পাওয়া গেছে। এদিকে সরকারও ব্যাংক থেকে অনেক ঋণ নিয়ে ফেলেছে। সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমে গেছে। রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। আবার অফশোর ব্যাংকিংয়ের নীতিমালা করা হয়েছে, যাতে কিছুটা কড়াকড়ি করা হয়। সুদহার নিয়েও বছরজুড়ে আলোচনা ছিল। ফলে বলা যায়, বছরজুড়ে আর্থিক খাতে অনিশ্চয়তা নয়, দোদুল্যমান অবস্থায় ছিল। চলতি বছরে ভালো পরিচালন মুনাফা হয়েছে। তবে নিট মুনাফা কত হয়, এটা দেখার বিষয়।

চ্যালেঞ্জ
উৎপাদন খাতে ৯ শতাংশ সুদ বেঁধে দিলে আমাদের মতো ব্যাংকের আয় ১৫০ কোটি টাকা কমে যাবে। ফলে ৩০ ব্যাংকের আয় কমবে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। যেসব ব্যাংকে সরকারি আমানত আছে, তারা সুবিধা পাবে। তারা কিছুটা ক্ষতি কমাতে পারবে। আমাদের ব্যাংকে সরকারি আমানত ১ শতাংশের কম। আবার আগের মতো ব্যাংকের আমানতের সুদহার বেঁধে দেওয়াও সম্ভব নয়। ২০০৯ সালে ভালো পরিবেশ ছিল, ব্যাংকও কম ছিল। তখন দেওয়া গিয়েছিল। তখনকার তারল্য পরিস্থিতি এখনকার মতো খারাপও ছিল না। তাই নতুন বছরে তারল্য ব্যবস্থাপনা কঠিন হয়ে পড়বে। বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ অনেক কমে গেছে। সুদহার কমলে বেসরকারি খাতের ঋণের চাহিদা বাড়তে পারে। আবার মে-জুন মাসে সরকারের ঋণও অনেক বেড়ে যায়। ফলে বেসরকারি উদ্যোক্তারা চাহিদামতো ঋণ পাবে কি না, এটা বড় বিষয়। 

তিন প্রত্যাশা
আমরা সরকারের পক্ষ থেকে আইনি সমর্থন চাই। আশা করছি, ২০২০ সালে কিছু আইনের পরিবর্তন আসবে। কয়েকজন ঋণখেলাপির শাস্তি হবে। আমরা চাই, যারা ইচ্ছেকৃত খেলাপি, তাদের একটা সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। দেশে যে ঋণখেলাপির সংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কারণ, ঋণের ১২ শতাংশ খেলাপি। ১৫ শতাংশ জমা রাখতে হয়, আরও ২০ শতাংশ থেকে কোনো আয় হয় না। 

ফলে ৫৩ শতাংশ ঋণ তহবিল থেকে আয় করে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সুদহার কমে গেলে আরও বিপদ আসবে। আমরা ব্যাংক খাতে সুশাসন চাই। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি সক্ষমতা ও স্বায়ত্তশাসন আরও বাড়ানো হোক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে ক্ষমতা আছে, তার
প্রয়োগ হবে। রাজনৈতিক চাপে কোনো সিদ্ধান্ত হবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যাতে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সেই সুযোগ
দেওয়া হবে।

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান
চেয়ারম্যান
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক