Thank you for trying Sticky AMP!!

বড় ঋণখেলাপিদের তালিকা পত্রিকায় প্রকাশের সুপারিশ

ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে সম্পত্তি বন্ধক রাখার ক্ষেত্রে যে জালিয়াতি হয়, তা প্রতিরোধে একটি নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। ওই নীতিমালার আওতায় একটি কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে ব্যাংকগুলো ঋণ দেওয়ার আগে এই তথ্যভান্ডারের তথ্য কাজে লাগাতে পারে। পাশাপাশি বড় বড় ঋণখেলাপির তালিকা পত্রিকায় প্রকাশ করারও সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।

সচিবালয়ে গতকাল বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমানের সভাপতিত্বে ‘রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের অবস্থা পর্যালোচনা: চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপায়’ শীর্ষক বৈঠকে এ সুপারিশ উঠে এসেছে। একই বৈঠকে ব্যাংকগুলোর ঋণ অনুমোদনের আগে অবশ্যই ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের ঋণমান যাচাই বা ক্রেডিট রেটিংয়ের ব্যবস্থা করারও সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

বৈঠকে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক, বিডিবিএল, কৃষি ব্যাংক ও রাকাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গত ২৬ আগস্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের আয়োজনে একই বিষয়ে যে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছিল, গতকালেরটি ছিল তার ফলোআপ বৈঠক।

বৈঠক শেষে সচিব ইউনুসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আলোচনা হয়েছে, কিছু সুপারিশও এসেছে। এগুলো অর্থমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। তারপর কিছু নীতিমালা বা সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা করছি।’

গতকালের বৈঠকে ঋণ প্রস্তাবের বিপরীতে জামানত যাচাই প্রক্রিয়া আরও উন্নত করা এবং ঋণের ঝুঁকি ভালোভাবে বিশ্লেষণ করার সুপারিশ করা হয়। বর্তমানে চলতি মূলধন নেওয়ার জন্য ঋণগ্রহীতাকে যে ১৫০ শতাংশ জামানত দিতে হয়, সেই হার সংশোধনেরও সুপারিশ এসেছে বৈঠকে।

উপস্থাপিত কার্যপত্রে বলা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে ‘ভালো কাজে পুরস্কার এবং মন্দ কাজে শাস্তি’র ব্যবস্থা চালু করতে হবে। অর্থাৎ ভালো ঋণ বিতরণ ও মন্দ ঋণ আদায়ের জন্য প্রণোদনা দিতে হবে এবং মন্দ ঋণ বিতরণ ও ঋণ আদায়ে ব্যর্থতার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

এ ছাড়া ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন ও বিতরণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে নির্দেশনা রয়েছে, তা নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করতে হবে। ব্যাংক হিসাব খোলার ক্ষেত্রে আপনার গ্রাহককে জানুন (কেওয়াইসি) নামে যে ফরম রয়েছে, তা বাধ্যতামূলক মানতে হবে। এ ছাড়া ঋণগ্রহীতাদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রীয় কেওয়াইসি বা সিওয়াইসি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

ব্যাংকগুলোর ১০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ খেলাপিদের জন্য আলাদা তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তোলার সুপারিশ এসেছে বৈঠকে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ঋণ আদায় ব্যবস্থাপনা গঠন এখন জরুরি।

কার্যপত্রে বলা হয়েছে, প্রত্যেক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ওই ব্যাংকের জন্য বিভিন্ন সূচকের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণসহ প্রতি তিন মাস পরপর সূচকগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি মূল্যায়ন করবে। অন্যদিকে উচ্চ আদালতে মামলা নিষ্পত্তির জন্য গঠন করতে হবে আলাদা বেঞ্চ।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত পরিচালকদের দায়িত্ব-কর্তব্য বিষয়ে নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করারও সুপারিশ এসেছে বৈঠকে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে বলে বলা হয়েছে।

গত আগস্টের কর্মশালায় অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘বেসরকারি ব্যাংকে যেখানে ১০ থেকে ১১ শতাংশ খেলাপি ঋণ, আমার লজ্জা লাগে যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকে এখনো তা ২৭ শতাংশ। এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।’ ওই বৈঠকে ঋণ অবলোপন মানে সব শেষ হয়ে যাওয়া নয় উল্লেখ করে ব্যাংকারদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘এ টাকা আদায়ে আপনাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’