Thank you for trying Sticky AMP!!

ভারতে দুগ্ধশিল্পের বিকাশ এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশও

মুম্বাইয়ের অদূরে প্রাইড অব কাউস খামার l ছবি: নিউইয়র্ক টাইমস

বাণিজ্যিক সম্ভাবনা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে দুগ্ধশিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটছে।
দেশটিতে আজকাল চাকরি ছেড়েও অনেকেই গরুর খামার গড়ে তুলছেন। যেমন ইউরোপ-আমেরিকায় ফ্লাইট ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করা সঞ্জয় শর্মা দিল্লির উপকণ্ঠে গুরগাঁওয়ে মাদার্স ন্যাচার ফুডস নামে একটি খামার গড়ে তুলেছেন। তিনি জানান, নিজে খাঁটি দুধ খাওয়ার জন্য প্রথমে তিনি দুটি গরু কেনেন। এরপর এই ব্যবসায়ে নামেন। তিন বছরের মাথায় এখন তাঁর খামারে ৫০০টি গরু আছে। আর গ্রাহক রয়েছে দুই হাজার।

দেশটিতে এই খাতে সাত হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে। প্রতিবছর এই বাজার ১৩ থেকে ১৫ শতাংশ করে বাড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২০২০ সাল নাগাদ ভারতে দুধের বাজার ১৪ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে।
ভারতে গরুর খামারগুলো অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর। কোনো রকম হাতের স্পর্শ ছাড়াই অর্থাৎ যন্ত্রের সাহায্যে গরুর দুধ আহরণ করে বোতলজাত করে সরবরাহ করা হয়।

ভেজাল মেশানোর অভিযোগ ওঠায় এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই উদ্যোক্তারাও এখন বেশ সতর্কতার সঙ্গে এই ব্যবসা করেন। ফলে দুগ্ধ কেনাবেচাও হয় ন্যায্যমূল্যে।
খামারগুলোতে খুব যত্নসহকারে হলস্টেইন-ফ্রেইজিয়ান জাতের গরু লালন-পালন করা হয়। এসব গরুর জন্য র্যাপ, পপ, ক্লাসিক্যাল বা ধ্রুপদি ও ভক্তিমূলক গানও বাজানো হয়।

শীর্ষস্থানীয় দুগ্ধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান প্রাইড অব কাউসের মূল কোম্পানি পরাগ মিল্ক ফুডসের চেয়ারম্যান দেবেন্দ্র শাহ জানান, তাঁরা খামারের গরুগুলোকে বেশ আদর-যত্নে গরু লালন-পালন করে থাকেন।
তবে দুধে ভেজাল দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যে কারণে ভারতীয় খাদ্য নিরাপত্তা ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ২০১২ সালে দেশব্যাপী পরিচালিত এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ দুধের নমুনাতেই খাদ্য নিরাপত্তার মান বজায় নেই। এর মধ্যে অধিকাংশ দুধেই পানি কিংবা ইউরিয়া সার, তরল ফরমালডিহাইড ও ডিটারজেন্ট বা গুঁড়া সাবানের মিশ্রণ পাওয়া যায়।
এ বছরের জানুয়ারিতে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট বিভিন্ন রাজ্যে ফৌজদারি আইন সংশোধন করে দুধে ভেজাল মিশ্রণকারীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মতো শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। ফলে উদ্যোক্তারাও ১০০ শতাংশ খাঁটি দুধ সরবরাহ নিশ্চিত করার দিকে নজর দিয়েছে।

চক্রধর গাড়ে আর্থিক বিশ্লেষকের চাকরি ছেড়ে বছর দেড়েক আগে সাব-কন্ট্রাক্টে দিল্লির কাছাকাছি একটি খামার গড়ে তোলেন। শুরুর দিকে তিনি দিল্লির উপকণ্ঠে গুরগাঁওয়ের দ্বারে দ্বারে দুধ বিক্রি করতে গিয়ে ভোক্তাদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পান। তিনি এখন আয়ের ৫ শতাংশ ব্যয় করেন পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে এবং সপ্তাহে এক দিন তাঁর খামারের দুধ পরীক্ষা করিয়ে থাকেন।
বাংলাদেশ: ভারতের দুগ্ধশিল্পের যখন রমরমা অবস্থা তখন পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। যদিও ভারতের বিশাল বাজারের তুলনায় বাংলাদেশের বাজার যেমন ছোট, তেমনি শিল্পের আকারও ছোট।
দেশের দুগ্ধ খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে প্রতিবছরই দুগ্ধ খাতে ১৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি ঘটছে। দেশে এখন বছরে ২৭০ কোটি লিটার তরল দুধ উৎপাদিত হচ্ছে। তবে নিত্যদিনের পানীয় হিসেবে ঘরে ঘরে দুধ খাওয়ার রেওয়াজ থাকায় দুধ প্রক্রিয়াজাত হয় মাত্র ১৫ কোটি লিটার। বছর পাঁচেক আগেও প্রক্রিয়াজাত হতো মাত্র ছয় কোটি ৭০ লাখ লিটার।

এ খাতকে আরও এগিয়ে সরকারের কাছে কিছু নীতি-সহায়তা চান উদ্যোক্তারা। তাঁরা বলছেন, প্রতিবছরই সরকার আমদানি করা গুঁড়া দুধের শুল্ক কমিয়ে দিচ্ছে। এতে একদিকে প্রচুর বিদেশি গুঁড়া দুধ দেশে আমদানি হচ্ছে, অন্যদিকে দেশীয় দুগ্ধশিল্প আশানুরূপভাবে এগোতে পারছে না। সরকার আমদানি করা দুধের শুল্ক বাড়িয়ে দেয়, তাহলে দেশীয় শিল্প কিছুটা সুরক্ষা পাবে। এ শিল্পও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে। সূত্র: নিউইয়র্ক টাইম ও হিন্দুস্তান টাইম