Thank you for trying Sticky AMP!!

ভালোবাসার দিনে চাই ৫০ লাখ গোলাপ

পয়লা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে গোলাপসহ রংবেরঙের ফুলের পসরা সাজিয়ে রেখেছেন ফুল ব্যবসায়ীরা। তবে গোলাপ ছিল কম । গতকাল রাজধানীর শাহবাগে। ছবি: সাইফুল ইসলাম

মাঘ শেষের এ সময়ে প্রকৃতিতেই যেন ছড়িয়ে থাকে প্রেম। বছর ধরে বুকে-বন্দী বাতাস উড়িয়ে দেওয়ার সময় উপস্থিত। এখন কথা হবে কানে কানে। ঠিক এ সময়ে কেউ যদি রবিঠাকুরের সেই কবিতার মতো বলে, ‘গোলাপ ফুল ফুটিয়ে আছে, মধুপ, হোথা যাস নে-/ ফুলের মধু লুটিতে গিয়ে কাঁটার ঘা খাস নে॥’

ভালোবাসার এ সময়ে দুর্বিনীত প্রেমিক-যুগল শুনবে কেন সে কথা? সেই ভ্রমরের মতোই হয়তো তারা বলবে, ‘মরমে যাহা গোপন আছে গোলাপে তাহা বলিব-/ বলিতে যদি জ্বলিতে হয় কাঁটারই ঘায়ে জ্বলিব।’

ভালোবাসা দিবস সামনে। নগরজীবনে ঘরে রাখা টবের গাছের গোলাপ কাঙ্ক্ষিত জনকে দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও প্রায় বেশির ভাগ মানুষের পক্ষে তা সম্ভব নয়। তাই সহায় চাষের ফুল। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার নীলকণ্ঠ নগর গ্রামের ফুলচাষি হোসেন আলীর হুঁশ নেই। দিনভর গোলাপ তুলছেন খেত থেকে। বার চারেক ফোন করার পর গত সোমবার সন্ধ্যা সাতটায় কথা হলো তাঁর সঙ্গে। তখনো গোলাপ বাছছেন। জানালেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ফুলের খেত নষ্ট করেছে। পরে এসেছে পাতা পচা রোগ। এ তল্লাটে কারও গোলাপ আবাদ ভালো হয়নি। ফি বছর এই ভালোবাসা দিবসেই গোলাপের সর্বোচ্চ বিক্রি হয়। গতবার প্রায় ২০ হাজার গোলাপ সরবরাহ করেছিলেন দিবসের আগে। এবার এর অর্ধেক হবে কি না, সন্দেহ। তবে দেশের অন্যত্র অবস্থা এতটা খারাপ নয়। ফুলের সরবরাহ কম। কিন্তু চাহিদা তো কমেনি। অর্থনীতির চিরাচরিত নিয়ম, সরবরাহের চেয়ে চাহিদা বেশি হলে পণ্যের দাম বাড়বে। এ তত্ত্ব হোসেন আলীর মতো চাষি বিলক্ষণ জানেন। তাই তাঁর কথা, ‘এবার কম দামে গোলাপ পাওয়া হচ্ছে না। দাম বেশি দিতে হবি।’

মাঠ থেকে গোলাপপ্রতি দাম ধরেছেন সাড়ে ১৪ টাকা। আগের বছর ১০ টাকার কম পড়েছিল। ঢাকায় আসার পর এর দাম এবার দ্বিগুণ হতে পারে, ধারণা হোসেনের। এ কথায় হতোদ্যম হওয়ার দরকার নেই প্রেমিক-প্রেমিকাদের। বিশেষ দিনে গাঁটের দিকে তাকানোর মতো বেরসিক তাঁরা নিশ্চয়ই নন। তবে সাশ্রয়-ভাবনা যাঁদের প্রবল, তাঁরা প্রতিবেদন পড়ে আগে থেকে গোলাপ কিনে রাখতে পারেন প্রিয়জনের জন্য! কারণ, ফুল ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার্স সোসাইটির (বিএফএস) সভাপতি আবদুর রহিম জানিয়েছেন, এ বছর ভালোবাসা দিবসে গোলাপের চাহিদা অন্তত ৫০ লাখ। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী জোগান কম হতে পারে। 

বিএফএসের তথ্য, গত বছর ভালোবাসা দিবস ও পয়লা বসন্তে ২০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছিল। এবার ১৮০ থেকে ১৯০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে। এবার ব্যবসায় কম হওয়ার কারণটি হোসেন আলী যেমনটি বলেছিলেন সেটাই, বৈরী আবহাওয়া। আবদুর রহিম এর সঙ্গে আরেক কারণ যোগ করলেন। সেটি হলো, প্লাস্টিকের কৃত্রিম ফুলের অবাধ আগমন। এতে ফুল ব্যবসায়ীরা উৎসাহ হারিয়েছেন।

>ভালোবাসা দিবসে ১৯০ কোটি টাকার ফুলের ব্যবসা হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা
গত বছর ভালোবাসা দিবস ও পয়লা বসন্তে ২০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছিল।

ব্যবসায়ীরা নিরুৎসাহ হওয়ার প্রমাণ কিন্তু সরকারি নথিতে নেই। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইং সূত্র জানাচ্ছে, প্রতিবছর ফুলের চাষ বেড়ে যাচ্ছে। ২০১৬-১৭ সালে দেশে ২ হাজার ৩৪ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছিল। আর ২০১৮-১৯ সালে সেখান থেকে এক হাজার হেক্টরের বেশি বেড়েছে।

যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, ঢাকার সাভার, নাটোর দেশের মূল ফুল সরবরাহকারী অঞ্চল। এসব জেলার মধ্যে যশোর সবার আগে। গত বছর ভালোবাসা দিবসে এ জেলা থেকে ১৫ লাখ গোলাপ সরবরাহ হয়েছিল। এ জেলার ৪০ শতাংশই যায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে। বাকিটা দেশের অন্যত্র যায়। ফুলের ব্যবসা এখন ছড়িয়ে দেশজুড়ে। সারা দেশে এখন ৬ হাজারের মতো ছোট-বড় ফুলের দোকান আছে, এ তথ্য বিএফএসের। আর রাজধানীতে আছে ৬০০-এর বেশি দোকান। তবে ভালোবাসা দিবসের দিন পাড়া-গলিতে অনেকেই এ ব্যবসায় জড়ান, জানান রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ফুলের পাইকারি ব্যবসায়ী বাচ্চু খাঁ। জানালেন, ভালোবাসা দিবসে এবার তিনি ৪০ হাজার গোলাপ বিক্রি করবেন। একটি গোলাপ ২০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি করেছেন। এবার দাম খানিকটা বাড়তে পারে বলেই তাঁর ধারণা। 

ফ্লাওয়ার গার্ডেনের মালিক বাচ্চু খাঁর কথা, ভালোবাসা দিবসে গোলাপের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। আর পয়লা ফাল্গুনে চাহিদা বেশি গাঁদা ও জারবেরার। এবার প্রায় ২ লাখ গাঁদা বিক্রি হতে পারে বলে তাঁর ধারণা। 

ফুল বিক্রির এই বাড়বাড়ন্তকে ‘সুখের সংবাদ’ বলেছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান। তরুণ এই অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশের মধ্যম আয়ের মানুষের সংখ্যা যত বাড়বে, দারিদ্র্য যত কমবে, তত বেশি সামাজিক অনুষ্ঠানে মানুষের অংশগ্রহণ বাড়বে। আর সামাজিক অনুষ্ঠানের একটা অংশ ফুলের ওপর নির্ভরশীল। ফুল বিক্রি বেড়ে যাওয়া একটা পরোক্ষ নির্ণায়ক। যার মাধ্যমে বোঝা যায়, মানুষের দারিদ্র্য কমছে আর তারা সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছে। মানুষের এ ধরনের শৌখিন দ্রব্য ভোগ করার সামর্থ্য আছে।