Thank you for trying Sticky AMP!!

মহামারির পরিণামে রাষ্ট্রীয় সংস্কার হয়: টমাস পিকেটি

টমাস পিকেটি : এএফপি

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে সামাজিক রাষ্ট্রব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত করতে হবে বলে মত দিয়েছেন বিশ্বখ্যাত ফরাসি অর্থনীতিবিদ টমাস পিকেটি। তিনি বলেছেন, একই সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়নের গতি বৃদ্ধি করতে হবে। এই নতুন সামাজিক রাষ্ট্রে যেমন কর-ব্যবস্থা আরও ন্যায্য করতে হবে, তেমনি আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে হবে। সম্প্রতি ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

পুঁজি বিনিয়োগের বর্তমান ব্যবস্থার সমালোচনা করে টমাস পিকেটি বলেন, ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে ধনী দেশগুলোর প্রভাবে পুঁজি চলাচলের যে ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, তাতে ধনী ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো কর ফাঁকি দিতে উৎসাহিত হয়। এতে দরিদ্র দেশগুলোর পক্ষে ন্যায্য কর-ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয় না। পরিণামে তাদের সামাজিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা ব্যাহত হয়।

পর পর দুটি বিশ্বযুদ্ধকে চরম অসমতার ফল হিসেবে আখ্যা দেন টমাস পিকেটি। উপনিবেশগুলো থেকে ধনশালী দেশগুলো যেভাবে সম্পদ সংগ্রহ করেছে, তাতে যেমন তাদের সমাজে অসমতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তেমনি বৈশ্বিক পরিসরেও অসমতা তীব্র আকার ধারণ করে। সেই অসমতা টেকসই ব্যাপার ছিল না। সমাজ বিস্ফোরণমুখর হয়ে ওঠে। তবে একেক সমাজে তা একেক রূপে হয়। ইউরোপে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, রাশিয়ায় রুশ বিপ্লব, ১৯১৮ সালের মহামারি। সেই মহামারিতে স্বাভাবিকভাবেই গরিব মানুষ বেশি ভুক্তভোগী হয়েছে। যুদ্ধের কারণে তা আরও মারাত্মক রূপ নেয়।

টমাস পিকেটি নতুন বই 'ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইডিওলজি'তে মহামারির প্রসঙ্গ অনেক বিস্তৃত পরিসরে এসেছে। সেখানে তিনি দেখিয়েছেন, যুদ্ধ ও মহামারির পর সমাজের অনেক ভুল সংশোধিত হয়। বিশেষ করে তিনি ১৪ শতকে ইউরোপে ব্ল্যাক ডেথের পর বেশ কিছু সামাজিক সংস্কারের প্রসঙ্গ টেনেছেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, অনেক দিন ধরেই এমন কথা চালু আছে যে দাসপ্রথার অবসান হয়েছে অনেকটা ব্ল্যাক ডেথের পরিণাম হিসেবে। ব্যাপারটা হলো, এই রোগে ইউরোপের প্রায় অর্ধেক মানুষ মারা যায়। তৈরি হয় শ্রমিক সংকট। ফলে শ্রমিকেরা তখন নিজেদের অধিকার ও মর্যাদা কিছুটা হলেও প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। কিন্তু ব্যাপারটা এত সরলরৈখিক ছিল না। অনেক জায়গায় আবার ব্ল্যাক ডেথের পর দাসপ্রথা আরও শক্তিশালী হয়।

পিকেটি বলেন, মোদ্দা কথা হলো, মহামারি ও যুদ্ধের মতো বড় ধরনের ধাক্কাগুলো সমাজে প্রভাব ফেলে। কিন্তু সেটা সবখানে একই রকম হয় না। সেটা নির্ভর করে সেখানকার মানুষের ইতিহাসবোধ, সমাজবোধ, ক্ষমতার ভারসাম্য ও সর্বোপরি আদর্শের ওপর। সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠা করতে সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন প্রয়োজন হয়।

কোভিড-১৯-এর প্রভাব কেমন হবে, এমন প্রশ্নে জবাবে টমাস পিকেটি বলেন, 'এখনই তা ঠিকঠাক বলা যাবে না। তবে অন্তত এটুকু বলতে পারি, এর প্রভাবে সরকারি বরাদ্দ বাড়ানোর তাগিদ সৃষ্টি হবে। আবার এর ভিন্ন রকম প্রভাবও দেখা যেতে পারে। ঐতিহাসিকভাবে দেখা গেছে, মহামারির পর বিদেশি-বিদ্বেষ তৈরি হয় এবং বিভিন্ন দেশ আরও অন্তর্মুখী হয়ে পড়ে। বিশেষ করে এতে ট্রাম্প ও ফ্রান্সের দক্ষিণপন্থী মারি লো পেনের আরও বাড়বাড়ন্ত হতে পারে, যদি মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। এতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিশ্বায়নের বিরোধিতার পালে হাওয়া লাগবে।'