Thank you for trying Sticky AMP!!

মুঠোফোনসেবার মান খারাপ

নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারাই স্বীকার করলেন, মুঠোফোনসেবার মান খারাপ হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস।

দেশে মুঠোফোনসেবার মান যে খারাপ, তা স্বীকার করলেন খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর সিকদারই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, সাম্প্রতিক জরিপে সেবার খারাপ মানের চিত্রটিই উঠে এসেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান এ কথা বলেন। গত ১৪ ডিসেম্বর কমিশনে যোগ দিয়ে তিনি এই প্রথম সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। ঢাকার রমনায় বিটিআরসির কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় গত ১০ বছর ও সর্বশেষ এক বছরে বিটিআরসির কার্যক্রম ও টেলিযোগাযোগ খাতের অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। তবে প্রশ্নোত্তর পর্বে বেশির ভাগ প্রশ্ন ছিল সেবার মান, অবৈধ মুঠোফোন নম্বর বন্ধ এবং বিটিআরসির ক্ষমতা খর্ব করার উদ্যোগ নিয়ে। নতুন চেয়ারম্যান জানান, বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যাগুলো জানছেন। ধাপে ধাপে সবই সমাধান করবেন।

সেবার মান নিয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে মতবিনিময় সভায় বিটিআরসির পক্ষ থেকে অপারেটরদের কাছে তরঙ্গ কম থাকা, টাওয়ার কম থাকা, নিম্নমানের মুঠোফোন ব্যবহারসহ নানা বিষয় সামনে আসে। জানানো হয়, সেবার মান নিয়ে বিটিআরসি জরিপ করছে। সাম্প্রতিক জরিপে কী ফল এসেছে, জানতে চাইলে শ্যামসুন্দর সিকদার বলেন, ‘সত্য কথা বলি। সেবার মান খারাপ। এটাই এসেছে প্রতিবেদনে।’

সেবার মান উন্নয়নে জানুয়ারি মাসের মধ্যে ৫০০টি টাওয়ার বসানো, শিগগিরই বাড়তি তরঙ্গ বরাদ্দ দেওয়া ও মান পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।

বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. এহসানুল কবির জানান, তাঁরা নতুন একটি প্রযুক্তি ব্যবস্থা কিনেছেন, যার মাধ্যমে আগামী ছয় মাসে ১২ হাজার কিলোমিটার এলাকায় পরীক্ষা চালানো হবে। প্রতি মাসে অপারেটরদের সেবার মান পরিস্থিতি জানানো হবে।

দেশে চার মোবাইল অপারেটরের মধ্যে কোনটির সেবার মানের পরিস্থিতি কী, তা জানানো হয়নি। এ নিয়ে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে শীর্ষ তিন অপারেটরের বক্তব্য চাওয়া হয়। তবে পাওয়া যায় বাংলালিংকের বক্তব্য। এই অপারেটরের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি আংকিত সুরেকা বলেন, মানসম্পন্ন সেবা দিতে বাংলালিংক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বর্তমানে গ্রাহকপ্রতি তরঙ্গের জন্য বাংলালিংক বেসরকারি অপারেটরদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। এ ছাড়া গত বছর ইন্টারনেটের গতি পরীক্ষা ও বিশ্লেষণে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান ‘ওকলা’ বাংলালিংককে দেশের দ্রুততম নেটওয়ার্কের স্বীকৃতি দিয়েছে।

বন্ধ হবে অবৈধ মুঠোফোন

সভায় জানানো হয়, বিটিআরসি অবৈধ মুঠোফোন বন্ধের স্বয়ংক্রিয় কার্যক্রম আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু করতে চায়। ১৬ জানুয়ারি থেকে মোবাইল অপারেটরগুলো হাতে হাতে বা ম্যানুয়াল ব্যবস্থায় নতুন ফোন নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার তথ্য বিটিআরসিকে দেওয়া শুরু করবে। পরে তা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দেওয়া হবে। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে অল্প সময়ের মধ্যেই মুঠোফোন বৈধ না অবৈধ, তা ধরা পড়বে। তবে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে সময় বেশি লাগবে।

মুঠোফোন বৈধ না অবৈধ, তা যাচাই করতে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) নামের ব্যবস্থা চালু ও পরিচালনার জন্য সিনেসিস আইটি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে বিটিআরসি। চুক্তি অনুযায়ী ৯ জুনের মধ্যে তাদের অবৈধ মুঠোফোন বন্ধের প্রযুক্তিগত সমাধান তৈরি করার কথা।

বিটিআরসি জানিয়েছে, তাদের তথ্যভান্ডারে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি আইএমইআই নম্বর সংযোজন করা হয়েছে। ৭ কোটি ১৯ লাখ মুঠোফোনের তথ্য রয়েছে। সংস্থাটির মহাপরিচালক (সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ বলেন, ১ জুলাই থেকে এনইআইআর চালু হলে গ্রাহকের হাতে থাকা মুঠোফোনগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হয়ে যাবে।

অভিযোগ আছে, বাজারে একই আইএমইআই নম্বরে একাধিক মুঠোফোন রয়েছে। আবার অনেক মুঠোফোন কর ফাঁকি দিয়ে আনা। কিছু মুঠোফোন চুরি হওয়া। এসব অবৈধ মুঠোফোনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর সিকদার বলেন, ‘বিদ্যমান মুঠোফোনগুলোকে আমরা ডিস্টার্ব না করার চিন্তাই করছি।’

দেশে ১২টি কারখানা

অনুষ্ঠানে বিটিআরসির পক্ষে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে টেলিযোগাযোগ খাতের অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। সংস্থাটি জানায়, আলোচ্য সময়ে মুঠোফোন গ্রাহক ২৮ লাখ বেড়ে প্রায় ১৭ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। ইন্টারনেট গ্রাহক ১ কোটি ১১ লাখ বেড়ে ১১ কোটি ছাড়িয়েছে। চতুর্থ প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা ফোর–জির গ্রাহক ১ কোটি ৬৮ লাখ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৫৭ লাখে। ব্যান্ডউইডথের ব্যবহার ৬৩৪ জিবিপিএস বেড়ে ১ হাজার ৮২৬ জিবিপিএসে উন্নীত হয়েছে। ব্যান্ডউইডথের দাম আরও ৫০ টাকা কমিয়ে এমবিপিএস প্রতি ৩৫০ টাকা করা হয়েছে।

এ ছাড়া বিটিআরসি জানায়, দেশে এখন মুঠোফোন তৈরির ১২টি কারখানা হয়েছে। সেগুলোতে বিগত দেড় বছরে ৩ কোটি ৩৮ লাখ মুঠোফোন তৈরি হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র, কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হুসেইন, স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদুল আলম, লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুণ্ডু, প্রশাসন বিভাগের মহাপরিচালক মো. দেলোয়ার হোসাইন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিটিআরসির উপপরিচালক (গণমাধ্যম) জাকির হোসেন খান।