Thank you for trying Sticky AMP!!

যতটা কঠোর হওয়া দরকার ততটা হতে পারছি না

>
কে এ এম মাজেদুর রহমান
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মালিকানার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চীনের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের জোট। শেয়ারবাজারে তার প্রভাব কী হতে পারে? চীনের জোটের যুক্ত হওয়ার ফলে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে ডিএসইতে? এ বিষয়ে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয় ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমানের কাছে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুজয় মহাজন

প্রথম আলো: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত বা স্ট্র্যাটেজিক বিনিয়োগকারী হিসেবে যুক্ত হয়েছে চীনের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের জোট। তাতে শেয়ারবাজারে তাৎক্ষণিক কী ধরনের প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন?

কে এ এম মাজেদুর রহমান: চীনের জোটের কাছে শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে মূলত ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনের শর্ত পূরণ করতে। এর মাধ্যমে ডিএসই আইনি শর্ত পরিপালনে নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছে। কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দুটি স্টক এক্সচেঞ্জকে যুক্ত করা অবশ্যই বাজারের জন্য ইতিবাচক দিক। চীনের সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় বাজারের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও বাড়বে বলে মনে করি। কারণ, প্রতিষ্ঠান দুটি সব দিক থেকে বিশ্বমানের। প্রযুক্তিগতভাবে তারা আমাদের তুলনায় অনেক এগিয়ে। তাই তাদের অন্তর্ভুক্তি আমাদের অগ্রগতির জন্য বড় ধরনের সুযোগ তৈরি করেছে।

প্রথম আলো: চীনের জোটকে সঙ্গে নিয়ে বাজারের উন্নয়নের প্রথম কী কাজটি করতে চান? চীনের জোটের পক্ষ থেকেই-বা অগ্রাধিকার কী?

মাজেদুর রহমান: চুক্তির মাধ্যমে আমাদের মধ্যে কাজের কিছু ক্ষেত্র এরই মধ্যে নির্ধারিত করা হয়েছে। এখন আমাদের দিক থেকে চেষ্টা থাকবে সেসব সুবিধা আদায় করা। বিশেষ করে প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মাধ্যমে দ্রুত তথ্য সরবরাহের কাজটি সবার আগে শুরু করতে চাই। বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মূল্য সংবেদনশীল তথ্য বা পিএসআই (প্রাইস সেনসিটিভ ইনফরমেশন) যেভাবে প্রকাশ করা হয়, সেখানে প্রযুক্তির ব্যবহার করে উন্নতির অনেক সুযোগ রয়েছে। সেই কাজটিই আমরা আগে করতে চাই। বর্তমানে যে পদ্ধতিতে কোম্পানির কাছ থেকে পিএসআই আমাদের কাছে আসে এবং তা প্রকাশিত হয়, তাতে সেটি প্রকাশের আগেই অনেকে জেনে যায়। ফলে মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের সংবেদনশীলতা আর থাকে না। তাই আমরা যত দ্রুত সম্ভব চীনের জোটের সহায়তা নিয়ে এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনতে চাই। পাশাপাশি বাজারে পণ্যবৈচিত্র্য আনার বিষয়েও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

প্রথম আলো: কীভাবে এ পরিবর্তন আনবেন? তাতে বিনিয়োগকারী কীভাবে লাভবান হবে?

মাজেদুর রহমান: এ ক্ষেত্রে আমরা এমন একটি প্রযুক্তিগত এক্সবিআরএল (এক্সচেঞ্জেবল বিজনেস রিপোর্টিং ল্যাংগুয়েজ) সলিউশন দাঁড় করানোর পরিকল্পনা করছি, যেখানে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে যুক্ত করা হবে। তারা প্রতিটি পিএসআই তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে দেবেন এবং অতি অল্প সময়ের মধ্যে তা বিনিয়োগকারীরা জানতে পারবেন। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির পিএসআই নিয়ে যে ধরনের গুজব ছড়ায়, সেটি অনেকাংশে কমবে। আমরা মনে করি, এ ব্যবস্থাটি চালু করা গেলে তাতে বাজারে বড় ধরনের গুণগত উন্নতি ঘটবে। পাশাপাশি এ ধরনের ব্যবস্থা বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। এ ছাড়া বড় ধরনের একটি তথ্যভান্ডার বা ডেটা সেন্টার তৈরির বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

প্রথম আলো: অনেকেই বলছেন, চীনের জোটটি যুক্ত হওয়ার ফলে বিদেশে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের ব্র্যান্ডিংটা ভালো হবে। আপনি কি মনে করেন এর ফলে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে?

মাজেদুর রহমান: চীনের যে দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, তারা বিশ্বে স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর মধ্যে তাদের অবস্থান শীর্ষ দশের মধ্যে রয়েছে। দুটি স্টক এক্সচেঞ্জই প্রযুক্তিগত, লেনদেন, পণ্যবৈচিত্র্য, বাজার গভীরতা—সব দিক থেকে আমাদের চেয়ে অনেক অনেক এগিয়ে। এ রকম বিশ্বখ্যাত দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ আমাদের বাজারে বিনিয়োগ করেছে। কারণ, এখানে যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। তাদের এ অন্তর্ভুক্তি বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে পরিচিত করা বা ব্র্যান্ডিং করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

প্রথম আলো: আপনি বলছেন, বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আমাদের বাজারে তো বিনিয়োগযোগ্য ভালো কোম্পানির সংখ্যা খুবই কম। বিদেশিরা বিনিয়োগ করবেন কোথায়?

মাজেদুর রহমান: এ কথা সত্য, আমাদের বাজারে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হয়। কারণ, আমাদের বাজার ইক্যুইটি-নির্ভর। আবার ভালো কোম্পানির সংখ্যাও কম। তাই তাদের বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য এ বাজারে বিনিয়োগের ঝুঁকি বেশি। তাই  চীনের জোটকে সঙ্গে নিয়ে বাজারে নতুন নতুন পণ্য যুক্ত করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব পণ্যবৈচিত্র্য আনতে চাই। ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজের সংখ্যা বাড়াতে চাই। বন্ড মার্কেটটিকে কার্যকর ও বিনিয়োগযোগ্য করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। পণ্যবৈচিত্র্য বাড়লে অবশ্যই এ বাজারের প্রতি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে।

প্রথম আলো:  চীনের জোট তো যুক্ত হলো বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের সঙ্গে। আমাদের বাজারের বর্তমান যে অবস্থা, সেটিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? এখনকার বাজার কি স্থিতিশীল?

মাজেদুর রহমান: সাম্প্রতিক সময়ের বাজার পর্যবেক্ষণ করে একটি বিষয় দেখা যাচ্ছে, বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে বড় ধরনের কোনো উত্থান-পতন নেই। অতীতে দেখা গেছে, কোনো একটা ঘটনা ঘটলেই সূচকে বড় ধরনের উত্থান-পতন ঘটত। ডিএসইর মালিকানার সঙ্গে চীনের যুক্ত হওয়ার ঘটনাটি নিঃসন্দেহে শেয়ারবাজারের জন্য একটি বড় ঘটনা ছিল। কিন্তু এ ঘটনার পরও বাজারে বড় ধরনের উত্থান ঘটেনি। তাতে আমার কাছে মনে হয়েছে, বাজার আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেকটাই স্থিতিশীল রয়েছে। যদিও বাজারের সম্ভাবনা অনেক। আমাদের এ কথাও মনে রাখতে হবে, সামনে নির্বাচন। এ সময়টাতে বিদেশি বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে দেশের বড় বড় বিনিয়োগকারীও যথেষ্ট সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন। কয়েক মাস ধরে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রি করছেন বেশি। তারপরও কিন্তু বাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। এটাও বাজারের স্থিতিশীলতার লক্ষণ।

প্রথম আলো: আপনি বলছেন, বাজারে একধরনের স্বাভাবিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। কিন্তু এর মধ্যেও কিছু বাজে কোম্পানির অস্বাভাবিক উত্থান দেখা যাচ্ছে। তাহলে কি এ স্থিতিশীল বাজারে কারসাজিকারকেরা অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছেন?

মাজেদুর রহমান: আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বাজে কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এ ধরনের ঘটনা রোধে যতটা কঠোর হওয়া দরকার, ততটা আমরা হতে পারছি না। আমাদের বাজারটা এখনো খুব বেশি গভীর বা বড় না। তাই কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে গেলেই দেখা যায় বাজারজুড়ে একধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাই যেকোনো কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের এ বিষয়টিকেও বিবেচনায় নিতে হয়। যেহেতু শেয়ারবাজারের সঙ্গে বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক বিষয় জড়িত, তাই যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের ক্ষতির দিকটিও ভাবতে হয়। ফলে অনেক সময় সিদ্ধান্তগ্রহণে ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়। তারপরও সাম্প্রতিক সময়ে কিছু জাঙ্ক বা বাজে কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক উত্থান বন্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও ডিএসইর পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।