Thank you for trying Sticky AMP!!

শিগগিরই মন্দার কবলে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্র!

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তারা (সিএফও) আশঙ্কা করছেন, দেশটির অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের সময় প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। দেশটির ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ প্রধান অর্থ কর্মকর্তা বিশ্বাস করেন, আগামী বছরের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্র মন্দার কবলে পড়বে। সম্প্রতি প্রকাশিত ডিউক ইউনিভার্সিটি/সিএফও গ্লোবাল বিজনেস আউটলুকের জরিপে এই তথ্য জানা গেছে।

জরিপে দেখা গেছে, ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় যেসব সিএফও নিয়ে জরিপ করেছে, তাঁদের মধ্যে ৮২ শতাংশ বিশ্বাস করেন, ২০২০ সালের শেষ নাগাদ মন্দা শুরু হবে। ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক জন গ্রাহাম বিবৃতিতে বলেছেন, প্রায় এক দশকব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তার সময় প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। তবে সিএফওদের এই হতাশায় অনেকের ভ্রু কুঞ্চিত হবে, কেননা মূলধারার অর্থনীতিবিদেরা এখনো বলে যাচ্ছেন, আগামী বছর একটু ধীরগতির হলেও প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল হবে।

ওয়াল স্ট্রিট অর্থনৈতিক শ্লথগতির আভাস পেতে শুরু করেছে। শেয়ারবাজারে বিক্রির প্রবণতা ও অস্থিরতা দেখে তারা এমনটা আশঙ্কা করছে। কয়েক দিন পরপরই শেয়ারবাজারের সূচক পড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ব্যাংকগুলো অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। তাদের শেয়ারের দাম পড়ে গেছে। অর্থনীতিবিদদের মধ্যে অনেকের উদ্বেগ বাড়ছে, অনেকে আবার আসন্ন মন্দার আভাস পাচ্ছেন।

এই জরিপ নিয়ে আমেরিপ্রাইসের প্রধান অর্থনীতিবিদ রাসেল প্রাইস সিএনএন বিজনেসকে বলেন, ‘উদ্বিগ্ন সিএফওদের সংখ্যাটা অনেক বেশি, সাংঘাতিক রকম বেশি। ২০১৯ সালে মন্দার ব্যাপারে আমি উদ্বিগ্ন নই, যদি না মানুষের কারণে সে রকম কিছু হয়।’ তিনি আরও বলেন, আগামী বছর মন্দা এড়ানোর মতো অর্থনৈতিক শক্তি যুক্তরাষ্ট্রের আছে, যদি না ফেডারেল রিজার্ভ বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে আগ্রাসীভাবে সুদের হার বাড়ায়।

৭ ডিসেম্বর ডিউক এই জরিপ পরিচালনা করে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ২১২টি কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তারা অংশ নেন। তাঁদের হতাশা দেখে বোঝা যায়, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ের ব্যাপারে তাঁরা সন্তুষ্ট নন। সিএফওরা আগামী এক বছরে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ আয় বাড়াতে চান, যা সেপ্টেম্বরের তুলনায় ১৩ শতাংশ কম। এ ছাড়া ক্যাপিটাল এক্সপেনডিচার, নিয়োগ ও রাজস্ব আয়ের পূর্বাভাসও নিম্নগামী।

চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধির হার অনেক বাড়লেও ডিউকের জরিপে সিএফওদের আশাবাদ চুপসে গেছে। ফলে করপোরেট নির্বাহীরা যে দেশটির কর্মশক্তিকে নিয়ে সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন, তা নিয়ে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। দেখা যাচ্ছে, নিয়োগ জটিলতা ও যোগ্য কর্মীদের ধরে রাখার ব্যাপারে সিএফওদের ওজর–আপত্তি করার হার চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছেছে।

মূলধারার অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, ২০১৯ সালে মন্দার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। তবে তাঁরা এ–ও বলছেন, মন্দা প্রত্যাশিত নয়। গত সপ্তাহে এস অ্যান্ড পি গ্লোবাল রেটিংস সতর্ক করে দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি থিতিয়ে পড়ছে। এই ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থাটি বলেছে, আগামী এক বছরে মন্দার সম্ভাবনা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। যদিও আগস্টে তারা বলেছিল, এই সম্ভাবনা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ।

জেপি মরগান চেজের হিসাব হলো, অর্থনৈতিক তথ্য–উপাত্ত ও বাজারের পূর্বাভাস দেখে বলা যায়, ২০১৯ সালে মন্দার আশঙ্কা ৩৬ শতাংশে উঠেছে, যা সেপ্টেম্বরের শেষে ছিল ২৫ শতাংশ। ২০০৯ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের যে অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ শুরু হয়, তা দেশটির ইতিহাসে দ্বিতীয় দীর্ঘতম। ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থাকলে ১৯৯১–২০০১ সময়ের তেজিভাবকে ছাড়িয়ে ইতিহাসের দীর্ঘতম হবে এটি।

অশুভ বক্ররেখা
এদিকে ২০২০ সালের পূর্বাভাস আরও অনিশ্চিত। ডিউক যাঁদের নিয়ে জরিপ করেছে, তাঁদের মধ্যে মাত্র ১৮ ভাগ সিএফও মনে করেন, ২০২০ সালের শেষ ভাগের আগে যুক্তরাষ্ট্র মন্দা এড়াতে পারবে।

ডিউকের অধ্যাপক ক্যাম্পবেল হারভে প্রতিবেদনে বলেছেন, ‘সব উপাদানই হাজির আছে।’ বাজারের অস্থিতিশীলতা, ‘প্রবৃদ্ধি–হ্রাসকারী সুরক্ষা নীতি’ ও ইল্ড কার্ভের (স্থির সুদহারের সিকিউরিটিজের সঙ্গে তার মেয়াদের সম্পর্ক) ভেতরমুখী হয়ে যাওয়া—এসবের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। ইল্ড কার্ভের ভেতরমুখী হয়ে যাওয়ার অর্থ হলো, স্বল্পমেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদ দীর্ঘমেয়াদি বন্ডের চেয়ে বেশি হয়ে যাওয়া। গত ৫০ বছর প্রতিটি মন্দার আগে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।