Thank you for trying Sticky AMP!!

শ্রমিকদের উৎসব ভাতা নিয়ে অস্পষ্টতা থাকছে!

একজন শ্রমিক বছরে দুটি করে উৎসব ভাতা বা বোনাস পাবেন। কোনো কারখানায় ৫০ জন শ্রমিক থাকলেই গঠন করতে হবে নিরাপত্তা কমিটি। শ্রমিকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেখভাল করার জন্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে একজন কল্যাণ কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে। এ ছাড়া শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য ক্রেতা ও মালিকদের সমন্বয়ে করা হবে ‘কেন্দ্রীয় তহবিল’।
শ্রম বিধিমালার চূড়ান্ত খসড়ায় এ বিষয়গুলো সংযুক্ত আছে। ২০০৬ সালের শ্রম আইনের ৩৫১ ধারা অনুযায়ী দেওয়া ক্ষমতাবলে সরকার বিধিমালাটি প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। বিধিমালার চূড়ান্ত খসড়াটি বর্তমানে রয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় শিগগিরই তা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করবে।
একাধিক শ্রমিকনেতা এই শ্রম বিধি শ্রমিকস্বার্থে ইতিবাচক হবে বলে মন্তব্য করেছেন। তবে শ্রমিকদের উৎসব ভাতার বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বিধিমালায় না থাকায় তাঁদের আশঙ্কা, ঈদ বোনাস নিয়ে আগের সমস্যাগুলো রয়েই যেতে পারে।
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদ বোনাস হিসেবে কোনো কারখানার মালিক শ্রমিকদের মূল বেতনের ৫০ শতাংশ, কেউবা ৭৫ শতাংশ দেয়। অনেকে দেয়ও না। আর সে জন্যই শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। বিধিমালায় বিষয়টি পরিষ্কার করা প্রয়োজন।’
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘উৎসব ভাতা অবশ্যই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে হারে পান, সেই হারেই কারখানার মালিকদের দিতে হবে। তার মানে এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ হবে উৎসব ভাতা। বিষয়টি স্পষ্টভাবে বিধিমালায় না থাকলেও সমস্যা নেই।’ তিনি বলেন, ‘বছরে দুটি উৎসব ভাতা একটি বিধিমালায় যুক্ত করতেই অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। মালিকপক্ষ সহজে রাজি হচ্ছিলেন না।’
মুজিবুল হক বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে বিধিমালাটির ভেটিংয়ের কাজ শেষ হবে। তারপর চলতি মাসের শেষে বা সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে জারি হবে প্রজ্ঞাপন। তিনি বলেন, ‘আইনে অনেক বিষয়ই সংকুচিতভাবে থাকে, ব্যাখ্যা থাকে না। তাই শ্রম আইনের বিভিন্ন ধারা কীভাবে প্রয়োগ হবে, সে জন্যই বিধিমালা করা হচ্ছে।’
খসড়া বিধিতে বলা হয়েছে, রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য কেন্দ্রীয় তহবিলে মালিকপক্ষকে প্রতিটি কার্যাদেশের বিপরীতে শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ হারে অর্থ দিতে হবে। অবশ্য ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও সরকার চাইলেও এতে অর্থ দিতে পারবে। তহবিলের ‘সুবিধাভোগী কল্যাণ’ ও ‘আপদকালীন’ নামে দুটি হিসাব থাকবে। তহবিলে প্রাপ্ত মোট অর্থ সমান হারে দুই হিসাবে জমা হবে।
এই তহবিল থেকে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত কারণে কোনো শ্রমিকের মৃত্যু ও স্থায়ীভাবে অক্ষম হলে সেই শ্রমিক বা তাঁর উত্তরাধিকারী তিন লাখ টাকা অনুদান পাবেন। আর কর্মক্ষেত্রের বাইরে দুর্ঘটনায় পড়ে মৃত্যু বা স্থায়ীভাবে অক্ষম হলে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হবে।
কোনো কারখানা বা প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর হলে শ্রমিকেরা কী ধরনের সুবিধা পাবেন, তা শ্রম বিধিতে বলা আছে। ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে স্থানান্তর হলে শ্রমিক যদি সেখানে যেতে না চান, তবে ৩০ দিনের বেতন দিতে হবে। শ্রমিকের চাকরির মেয়াদ এক বছর হলে এটি পাবেন, না হলে ১৫ দিনের বেতন। আর কোনো কারখানার মালিকানা পরিবর্তন হলেও শ্রমিকের চাকরির শর্ত পরিবর্তন হবে। অর্থাৎ নতুন মালিকের অধীনে শ্রমিক চাকরিরত আছেন বলে গণ্য হবে।
কোনো প্রতিষ্ঠানে ৫০০ বা তার বেশি শ্রমিক থাকলেই একজন কল্যাণ কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে। শ্রমিকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা তদারক করা হবে এই কর্মকর্তার কাজ।
২২৫ পৃষ্ঠার খসড়া শ্রম বিধিমালায় ২১টি অধ্যায় ও বিভিন্ন বিষয়ের আবেদনপত্র সংযুক্তি আছে। এতে নিয়োগ ও চাকরির শর্ত, কিশোর শ্রমিক নিয়োগ, প্রসূতিকল্যাণ সুবিধা, স্বাস্থ্যরক্ষাব্যবস্থা, নিরাপত্তা, কল্যাণমূলক ব্যবস্থা, কর্মঘণ্টা ও ছুটি, মজুরি ও পরিশোধ, দুর্ঘটনাজনিত কারণে জখমের জন্য ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি বিস্তারিতভাবে উল্লেখ আছে।