Thank you for trying Sticky AMP!!

সামাজিক উপকারভোগী, ভাতা বাড়ানোর উদ্যোগ

৯০ বছরের বেশি বয়স্কদের মাসিক ৩ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে সরকারের।

বয়স্ক ভাতার আওতায় এখন একজন ব্যক্তি মাসে ৫০০ টাকা করে পান। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে মাসিক এ ভাতার পরিমাণ ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করতে চায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। চলতি অর্থবছরের বাজেটে বয়স্ক ভাতার আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা ৫৭ লাখ। আগামী অর্থবছর আরও সাড়ে ১১ লাখ মানুষকে ভাতার আওতায় আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

সুবিধাভোগীর সংখ্যা ও ভাতার পরিমাণ বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই বয়স্ক ভাতা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। চলতি ২০২১–২২ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে তা বাড়িয়ে ৪ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকার প্রস্তাব করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।

আমরা চাই ভাতার পরিমাণ ও উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়াতে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে বয়স্ক ভাতার পাশাপাশি অন্যান্য ভাতার পরিমাণও বাড়বে।
আশরাফ আলী খান, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী

বয়স্ক ভাতার পাশাপাশি আগামী অর্থবছর থেকে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতার আওতায় উপকারভোগী এবং ভাতার পরিমাণও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ভাতা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানীও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে আগামী অর্থবছরের বাজেটে।

আগামী রোববার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটির ২৮তম বৈঠকে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। এ কমিটির প্রধান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের সব উপজেলায় ভাতা পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তিকে বয়স্ক ভাতার আওতায় আনা। সরকার সে লক্ষ্যে কাজ করছে। এখন ১৬২টি উপজেলায় ভাতা পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তিকে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হচ্ছে।’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই ভাতার পরিমাণ ও উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়াতে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে বয়স্ক ভাতার পাশাপাশি অন্যান্য ভাতার পরিমাণও বাড়বে।’

বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্তের পরিবার মাসিক ৬৫ হাজার টাকা করে সম্মানী পান। আগামী বাজেটে সেই সম্মানী ৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৭০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। একইভাবে বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত ও তাঁদের পরিবারের সম্মানী ২৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩৫ হাজার টাকা, বীর বিক্রমের সম্মানী ২০ হাজার থেকে বেড়ে ৩০ হাজার টাকা ও বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সেই সঙ্গে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানীও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ শ্রেণির যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ৪৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা, বি শ্রেণির ক্ষেত্রে ৩৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৪০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া স্বাধীনতা দিবসে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে ১০ হাজার টাকা ও বাংলা নববর্ষ ভাতা ৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

একাধিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীদের ভাতার পরিমাণ ১০০ টাকা করে বাড়তে পারে। অর্থাৎ মাসিক ভাতা ৫০০ টাকার স্থলে ৬০০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে মন্ত্রণালয়। এ খাতে এখন উপকারভোগী ২৫ লাখ। আগামী অর্থবছর উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে সাড়ে ৩১ লাখ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। চলতি বছরের বাজেটে বিধবা ভাতা খাতে বরাদ্দ আছে ১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ২ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্রতিবন্ধী ভাতা বাবদ বরাদ্দ আছে ১ হাজার ৮২০ কোটি টাকা। এ খাতে উপকারভোগী আছেন ২১ লাখ। আগামী বাজেটে এ খাতে উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে ২৪ লাখে উন্নীত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ জন্য বরাদ্দ বাড়িয়ে আগামী বাজেটে ২ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।

ক্যানসার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোক, পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য চলতি বাজেটে ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আগামী বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ৫০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২০০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। বর্তমানে ক্যানসার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোক, পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জনপ্রতি এককালীন ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, ২০১৫ সালে সরকার জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র অনুমোদন করে। ওই কৌশলপত্রে ৯০ বছরের
বেশি বয়স্ক ব্যক্তির জন্য মাসিক ভাতা ৩ হাজার টাকা করার প্রস্তাব ছিল। কিন্তু তা এত বছর কার্যকর করা যায়নি।