Thank you for trying Sticky AMP!!

সামাজিক সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে আরও বরাদ্দের প্রয়োজন ছিল: সানেম

বর্তমান প্রেক্ষাপটে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন কতটুকু সংগতিপূর্ণ, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ আরও বেশি বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল বলে মনে করছে তারা। সেই সঙ্গে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা খুব বাস্তবসম্মত নয় বলে মনে করছে সানেম।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরে বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন বাজেট নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেছে সানেম।

সানেম বলছে, ‘অনেকগুলো সংকট সামনের দিনগুলোতে ঘনীভূত হতে যাচ্ছে, তার সঙ্গে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন সংগতিপূর্ণ কি না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। আমরা কি অনুমান করে নিচ্ছি যে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে এবং তাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের ওপরে যে গতিধারায় ছিল, সেখানে ফিরে আসবে? তবে বাস্তবতা কী, তা নিয়ে একটা প্রশ্ন থেকে যায়। আমরা দেখছি যে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি, বিশেষ করে সংক্রমণের মাত্রা আরও বাড়ছে, মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়ছে এবং কবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিকভাবে চালু করা যাবে, সেটি নিয়ে একটি বড় প্রশ্ন রয়ে গেছে। পাশাপাশি আমাদের অর্থনীতির বড় দুটি চালিকা শক্তি—একটি হচ্ছে রপ্তানি, আরেকটি হচ্ছে রেমিট্যান্স—এই দুটি খাতেই আমরা বড় ধরনের ধাক্কার আশঙ্কা করছি। রপ্তানির বড় দুটি গন্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও উত্তর আমেরিকা—এই দুই অঞ্চলেই নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি তেলের দাম অভূতপূর্বভাবে কমে গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো, যেগুলোতে আমাদের শ্রমিকেরা কাজ করেন, সেগুলোতেও অর্থনীতি ব্যাপকভাবে সংকুচিত হয়েছে।’

বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে, তা যথেষ্ট কি না, এ নিয়েও প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে সানেম। তারা বলছে, ‘বর্তমান স্বাস্থ্যগত সংকট মোকাবিলায় যে অস্থিরতা, অদক্ষতা, সক্ষমতার অভাব দেখা যাচ্ছে, তা এক দিনে হয়নি। এটা দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ফলাফল। যে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হলো, তাকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাই। তবে পাশাপাশি এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে স্বাস্থ্য খাতের ব্যবস্থাপনার যে বেহাল দশা, সেটির উন্নয়ন করা হচ্ছে। ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন না ঘটলে, এই বর্ধিত বরাদ্দ সত্যিকার অর্থেই কতটুকু কার্যকরী হবে, সেটি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সংসদে বাজেট অধিবেশনে যে বিভিন্ন রকমের দাবি করা হচ্ছে যে বিভিন্ন হাসপাতালকে কোভিড-১৯ হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে, আসলেই তারা প্রস্তুত কি না?’

বাজেটের কয়েকটি বরাদ্দ প্রশংসনীয় জানিয়ে সানেম বলছে, ‘সামাজিক সুরক্ষা খাতে যে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে, তা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে তারা বলছে, সামাজিক সুরক্ষা খাতের যে বরাদ্দ, সেটির একটা বড় অংশ কিন্তু পেনশন ভাতার দিকে যায়। সুতরাং প্রকৃত অর্থে বরাদ্দ কতটুকু বেড়েছে? যে সংকট আমরা দেখছি, সেই সংকটে একটা বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠী কিন্তু দারিদ্র্যসীমার নিচে পড়ে গেছে এবং সামনের দিনগুলোতে আরও বড়সংখ্যক জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্যসীমার নিচে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে; বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠী কাজ হারিয়েছে। সুতরাং এই জনগোষ্ঠীকে কীভাবে সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতায় আনা যায়, বিশেষ করে এখন যখন জোনিং করা হচ্ছে, কীভাবে তাদের খাদ্য ও নগদ সহায়তা দেওয়া যায়—বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে সেটি নিশ্চিত করতে হবে, শুধু বরাদ্দ বাড়ালেই চলবে না।’ সামাজিক সুরক্ষা খাতের বরাদ্দ আরও বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল বলে মনে করছে সানেম।

করোনা সংকট মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ প্রশংসনীয় পদক্ষেপ বলে মনে করছে সানেম। তবে সানেম বলছে, প্রণোদনা প্যাকেজের একটা বিশাল অংশ ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে চালিত হবে। তবে ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের সমস্যা আছে—অব্যবস্থাপনার সংকট আছে, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা আছে, খেলাপি ঋণের বড় ধরনের সংকট আছে। এ রকম একটা সংকটগ্রস্ত ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে প্রণোদনা প্যাকেজ কীভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে, সেটিরও একটা পথনির্দেশিকা বাজেটে থাকা দরকার।

বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা খুব বাস্তবসম্মত নয় বলে মনে করছে সানেম। এমনকি সংশোধিত বাজেটে যে রাজস্ব আদায়ের কথা বলা হয়েছে, বর্তমান সংকটময় সময়ে সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও সম্ভব নয় বলে মনে করছে তারা। আগামী বাজেটে যদি রাজস্ব লক্ষ্য পূরণ না করা যায়, তাহলে যে বড় আকারের বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ খাতে যে বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাবনা আছে, তার জোগান কীভাবে দেওয়া হবে? তাই অর্থায়নের অন্য সুযোগগুলো নিয়ে চিন্তা করা প্রয়োজন বলে মনে করছে সানেম।

সানেম মনে করছে, সামনের দিনগুলোতে বাজেট ঘাটতি আরও বাড়তে পারে। বিশেষ করে, যদি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় না হয় এবং খরচ যদি আরও বাড়ার একটা চাপ থাকে, তাহলে প্রস্তাবিত বাজেটে যে বাজেট ঘাটতির কথা বলা হয়েছে, সেটি আরও বাড়তে পারে। তবে এটিকে বড় ধরনের সমস্যা বলে মনে করছে না তারা। বাজেট ঘাটতি যদি ৬-৭ শতাংশ অথবা তার থেকেও বেশি হয়, সামনের দুই অর্থবছরে আমাদের সেটি মেনে নিতে হতে পারে বলে বলছে সানেম।