Thank you for trying Sticky AMP!!

সামাজিক সুরক্ষা: তলানির পাঁচে বাংলাদেশ

সামাজিক সুরক্ষা খাতে খরচের দিক থেকে বাংলাদেশ এশিয়ার নিচের দিককার পাঁচটি দেশের একটি। বাংলাদেশের পেছনে আছে শুধু মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভুটান ও লাওস। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ২১তম।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে। এশিয়ার ২৫টি দেশের সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম নিয়ে ‘দ্য সোশ্যাল প্রোটেকশন ইন্ডিকেটর ফর এশিয়া: অ্যাসেসিং প্রোগ্রেস’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি গত সপ্তাহে প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাত্র ১ দশমিক ২ শতাংশ পরিমাণ অর্থ সামাজিক সুরক্ষায় খরচ করে বাংলাদেশ। তালিকার শীর্ষে থাকার জাপান খরচ করে জিডিপির ২১ শতাংশের বেশি।

বাংলাদেশে নারীদের চেয়ে পুরুষেরা বেশি সুরক্ষা পান। আবার সামাজিক সুরক্ষার জন্য গরিব মানুষের পেছনে যতটা খরচ হয়, এর চার গুণ বেশি খরচ হয় ধনীদের পেছনে।

এডিবির প্রতিবেদন ধরে জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করা যাক। জাপানে গরিব লোক নেই বললেই চলে। তবু সব নাগরিককে তাদের জীবদ্দশায় অন্তত একটি সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা দেয় জাপান। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের চেয়ে ৩৬৪ গুণ বেশি অর্থ খরচ করেছে জাপান। বাংলাদেশের মাত্র ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ সামাজিক সুরক্ষার কোনো না কোনো সুবিধা পান।

বাংলাদেশে গরিবদের চেয়ে ধনীরাই সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা বেশি পান। তাঁদের পেছনে বেশি খরচ হয়। এডিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে মাথাপিছু জিডিপির মাত্র দশমিক ২ শতাংশ গরিব মানুষের পেছনে খরচ হয়। আর ধনীদের পেছনে খরচ হয় দশমিক ৮ শতাংশ। এর মানে, গরিবের পেছনে যত টাকা খরচ হয়, এর চার গুণ বেশি টাকা ধনীদের জন্য খরচ হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, অসমতা ও দারিদ্র্য দূর করতে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়াতেই হবে। এই খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিতে হবে। এখনো জিডিপির ২ শতাংশের কম বরাদ্দ দেওয়া হয়। এটি অন্তত ৩-৪ শতাংশে উন্নীত করা উচিত। এ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অনুযায়ী দারিদ্র্য নির্মূল করতে হলে এসব গরিব মানুষের জন্য সামাজিক সুরক্ষা জোরদারে নজর দিতেই হবে।

দেশে এখন ৭৪ লাখ লোক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা পান। এই কর্মসূচির আওতায় সরকার বিধবা ভাতা, দরিদ্র নারীদের মাতৃত্বকালীন ভাতা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা ভাতা ইত্যাদি দিয়ে থাকে। এ ছাড়া টেস্ট রিলিফ, ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিডি), কাজের বিনিময়ে টাকাসহ (কাবিটা) বিভিন্ন কর্মসূচিও আছে। তবে বাংলাদেশের সব নাগরিক পায়, এমন কোনো সর্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি নেই।

বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তামূলক বিভিন্ন কর্মসূচিতে প্রতিবছর খরচ বাড়ালেও তা পর্যাপ্ত নয়। গত ১০ বছরে সামাজিক সুরক্ষায় সরকার খরচ বাড়িয়েছে প্রায় তিন গুণ। প্রতিবছরই সুবিধাভোগীর সংখ্যা ও ভাতা বাড়ানো হয়েছে। গত অর্থবছরে ১৬ ধরনের কর্মসূচিতে ২৭ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া আছে। ১০ বছর আগে বরাদ্দ ছিল মাত্র ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৭৪ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা জিডিপির ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এই হিসাবের মধ্যে অবশ্য সরকারি পেনশনভোগীদের জন্য বরাদ্দ করা টাকাও আছে। সরকারি চাকরির পর অবসরভোগীদের প্রায় শতভাগই দারিদ্র্যসীমার ওপরে বাস করেন। তাই পেনশন বাবদ খরচ বাদ দিলে সামাজিক নিরাপত্তায় খরচ জিডিপির ২ শতাংশের মতো হয়।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী জিডিপির অনুপাতে সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি। যেমন সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ জিডিপির ২ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত করার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।

এই বিষয়ে শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে পরিকল্পনা অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া যায়নি। তবে পরিকল্পনার কাছাকাছিই আছে। আগামী বছরই সামাজিক নিরাপত্তায় ব্যয় জিডিপির ২ দশমিক ৩ শতাংশ হয়ে যাবে।