Thank you for trying Sticky AMP!!

সুপারশপের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে এনবিআর

এনবিআর

করোনাকালে রাজস্ব আদায়ের জন্য সুপারশপগুলোর ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। করোনার সময় সুপারশপগুলো থেকে কেমন রাজস্ব আদায় হয়েছে এবং এপ্রিল মাসে কী পরিমাণ রাজস্ব আদায় হতে পারে, তা জানতে চেয়ে বিভিন্ন কমিশনারেটে চিঠি দিয়েছে এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ।

গত শনিবার ভ্যাট বিভাগ থেকে দেওয়া চিঠিতে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে এসব তথ্য দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এনবিআর মনে করে, করোনার কারণে যেসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা খাত বন্ধ আছে, সেসব খাত থেকে রাজস্ব কমতে পারে। তাই যেসব প্রতিষ্ঠান খোলা আছে, সেখান থেকে বেশি রাজস্ব আসতে পারে। এমন বিবেচনায় সুপারশপের দিকে নজর দিয়েছে এনবিআর। সুপারশপে বেচাকেনার ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়। শুধু সুপারশপ নয়; ওষুধ ও সিগারেটের মতো যেসব শিল্প খাত খোলা আছে, সেখানকার তথ্যও জানতে চাওয়া হয়েছে।

 করোনার সময় সবকিছু বন্ধ থাকলেও নিত্যপণ্য বিক্রয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের বিভিন্ন নামীদামি সুপারশপ খোলা রয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি যথাসম্ভব মেনে এসব সুপারশপে বেচাকেনা চলছে। তাই মধ্যবিত্তরা কাঁচাবাজারে না গিয়ে সুপারশপমুখী হয়েছে। ফলে সুপারশপে বেচাকেনাও বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় সুপারশপের বিক্রি ২০-৩০ শতাংশ বেড়েছে।

>ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় রাজস্ব আদায় কমে যাবে
তাই যেসব শিল্প ও সেবা খাত খোলা আছে, সেদিকে নজর দিয়েছে এনবিআর।

তবে সুপারমার্কেট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মনে করেন, এ সময়ে এনবিআরের এমন চিঠি সুপারশপ মালিকদের মধ্যে একধরনের চাপ তৈরি করবে। সুপারশপে বেচাকেনা কিছুটা বেড়েছে এটা যেমন সত্য, তেমনি স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত, কর্মীদের বাড়তি সুবিধা দেওয়াসহ নানা খরচও বেড়েছে। করোনাকালের এই বিশেষ সময়ে ঝুঁকি নিয়ে হলেও নিত্যপণ্যের জোগান দিচ্ছে সুপারশপগুলো। তাই অন্তত দুই মাসের জন্য হলেও তাদের বিদ্যমান ৫ শতাংশ ভ্যাট মওকুফ করা উচিত।

সুপারশপ মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালে মীনাবাজার ও আগোরার মাধ্যমে এ দেশে সুপারশপের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমান রাজধানী ও রাজধানীর বাইরে কার্যক্রম পরিচালনাকারী দুই শর মতো সুপারশপ আছে। বছরে এসব প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের পরিমাণ ২ হাজার কোটি টাকার বেশি। সুপারশপ থেকে এনবিআর বছরে গড়ে এক শ কোটি টাকার মতো ভ্যাট পায়।

 শুধু সুপারশপ নয়; করোনা পরিস্থিতিতে সিগারেট ও ওষুধ প্রস্তুতকারকসহ যেসব শিল্প ও সেবাপ্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে মার্চ মাসে কত রাজস্ব আদায় হয়েছে, তা সব ভ্যাট অফিসের কাছে জানতে চেয়েছে এনবিআর। এপ্রিল মাসে কত রাজস্ব পাওয়া যেতে পারে, তারও একটি ধারণা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে এনবিআরের সদস্য (ভ্যাট বাস্তবায়ন) জামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, করোনার কারণে অনেক খাত থেকে রাজস্ব আদায় কমে যাবে, এটা স্বাভাবিক। জরুরি প্রয়োজনে কিছু শিল্প ও সেবা খাত খোলা আছে। আমাদের রাজস্ব দরকার আছে। তাই সুপারশপ, সিগারেট, ওষুধসহ খোলা থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কী পরিমাণ রাজস্ব আসছে, চলতি মাসে কত আসতে পারে, এর ধারণা থাকা প্রয়োজন। তাই এসব তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে।

সিগারেট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের রাজস্ব আদায়ের বড় খাত। প্রতিবছর গড়ে ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আসে এ খাত থেকে। যার সিংগভাগই আসে সিগারেটের ব্যান্ডরোল বিক্রি করে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সিগারেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন অব্যাহত আছে। বাজারে সিগারেটের সরবরাহও রয়েছে।

জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ছাড়া অন্য সব ওষুধে ভ্যাট দিতে হয়। তবে এটি গ্রাহক বা ভোক্তাপর্যায়ে নয়। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। আর এই ভ্যাটের টাকা যোগ করেই ওষুধ প্রশাসন কর্তৃক বেঁধে দেওয়া মূল্য ঘোষণা দেয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে ফার্মেসি বা ভোক্তাপর্যায়ে আলাদা কোনো ভ্যাট দিতে হয় না। এ ক্ষেত্রে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকেই ভ্যাট আদায় করে এনবিআর। করোনার পরিস্থিতির মধ্যে ওষুধ কোম্পানিগুলো ওষুধ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রেখেছে।

করোনার আগেই চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রথম আট মাসে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এনবিআরকে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত আদায় হয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা। মার্চের হিসাব এখনো চূড়ান্ত হয়নি।