Thank you for trying Sticky AMP!!

স্বল্পশিক্ষিত নারীরাও হতে পারেন তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা

বিশ্বজুড়ে দেশে দেশে গ্রাম-শহরনির্বিশেষে সব জায়গায় প্রযুক্তি কমবেশি পৌঁছে গেছে। নারী-পুরুষ কিংবা শিশু-বৃদ্ধ প্রায় সবাই মুঠোফোনসহ বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তিনির্ভর সেবা গ্রহণ করছে। ফলে প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থান ও ব্যবসায়ের সুযোগ বেড়েছে। বাংলাদেশের নারীরাও এই সুযোগ লুফে নিতে পারেন। কারণ, দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই তো নারী। সুতরাং অন্যান্য খাতের মতো তথ্যপ্রযুক্তিতেও কর্মসংস্থান খুঁজে নিয়ে বা ব্যবসায়ে জড়িত হয়ে এ দেশের বেকার নারীরা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে অবদান রাখতে পারেন। বাংলাদেশের রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন এবং মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য অর্থনীতিতে নারীদের ভূমিকাও জরুরি। এতে নারীর ক্ষমতায়নও বাড়বে। 

নারীদের জন্য সরকারি সংস্থা স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ (এসএমই) ফাউন্ডেশন উইমেন আইসিটি ফ্রিল্যান্সার অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউর ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম নামে একটি কর্মসূচি চালু করেছে। উদ্যমী ও স্বাবলম্বী মানসিকতার নারীরা অনায়াসেই এ ধরনের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন। কারণ, সারা দেশেই ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে গেছে এবং অবকাঠামো উন্নয়নও দ্রুত ত্বরান্বিত হচ্ছে। সুতরাং নারীরা এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে উদ্যোক্তা ও দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে শহর কিংবা গ্রাম যেকোনো জায়গায় থেকেই কাজ করতে পারেন। এসএমই ফাউন্ডেশন মাইক্রো, কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে আসতে নতুন উদ্যোক্তাদের এ ধরনের সুবিধা দিচ্ছে। এ ছাড়া নারীদের জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা, এক অঙ্কের সুদে জামানতবিহীন ঋণপ্রাপ্তি, ব্যবসায়িক পরামর্শ, গবেষণা ও পলিসি অ্যাডভোকেসি বা নীতিসহায়তা ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। 

নারীরা কোনো উদ্যোগ নিয়ে মাঠে নামতে চাইলে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন বা এ-টু-আই কর্মসূচির আওতায় যাবতীয় ইন্টারনেট সুবিধা পাচ্ছেন। বর্তমানে দেশের ৪ হাজার ৫৪৭টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) এ-টু-আই সেবা বা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার বিস্তৃত রয়েছে। এ ছাড়া নারী উদ্যোক্তা, পেশাজীবী ও করপোরেট কর্মকর্তাদের জন্য বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজি (বিডব্লিউআইটি) নামে একটি ফোরামও আছে। 

এসএমই ফাউন্ডেশন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ-টু-আই কর্মসূচি ও বিডব্লিউআইটি ফোরামের সহযোগিতায় সারা দেশে, বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারী উদ্যোক্তা ও ফ্রিল্যান্সার মানে জনশক্তি গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছে। এ ব্যাপারে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই করেছে সংস্থা তিনটি। এই কর্মসূচির আওতায় মাধ্যমিক মানে এসএসসি পাস করা নারীদের গ্রাফিক ডিজাইন, ডেটা এন্ট্রি, অ্যাকাউন্টিং ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। 

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় বর্তমানে এসএমই ফাউন্ডেশন, এ-টু-আই ও বিডব্লিউআইটি তৃণমূলের সুবিধাবঞ্চিত পর্যায়ের এসএসসি পাস ও কম্পিউটারে মৌলিক জ্ঞানসম্পন্ন তিন হাজার নারী উদ্যোক্তা ও ফ্রিল্যান্সারকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে যৌথভাবে কাজ করছে। এর ফলে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে একদল নারী উদ্যোক্তা ও ফ্রিল্যান্সার তৈরি হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। 

এ ছাড়া কর্মসূচিটির আওতায় গ্রাম ও শহরের স্বল্পশিক্ষিত অর্থাৎ এসএসসি পাস করা নারীদের মধ্য থেকে দক্ষ আইসিটি ট্রেইনার মানে প্রশিক্ষক তৈরি করা হবে, যাতে তাঁরা উপার্জনমুখী কার্যক্রমে জড়িত হতে পারেন। প্রশিক্ষণের পরেও তাঁদের সহায়তা দেওয়া হবে, যা বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক কর্মক্ষেত্রে তাঁদের টিকে থাকতে সহায়ক হবে। সহায়তাগুলোর মধ্যে রয়েছে—নারী উদ্যোক্তাদের সাপ্লাই চেইন বা সরবরাহ ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত করা; এসব প্রশিক্ষিত নারীকে প্রোফাইল তুলে ধরতে একটি ডেটাবেইস তৈরি করে সেটির লিংকজাতীয় অন্যান্য ওয়েবসাইটে দেওয়া, সরকার ও করপোরেট খাতের সামনে এসব নারীকে অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রমে জড়িত করার ক্ষেত্র তৈরি ইত্যাদি। এ ছাড়া বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এবং এ ধরনের বিভিন্ন সংস্থার সংযোগ ঘটিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ‘ক্রেডিট হোলসেলিং কর্মসূচির’ আওতায় ব্যাংক থেকে বিনা জামানতে এক অঙ্কের সুদে ঋণ পাওয়ার ব্যাপারে সহায়তা করা হবে। 

মনে রাখতে হবে, এসএমই ফাউন্ডেশন সহায়তা ও পরামর্শ দেবে ঠিকই, তবে ঋণ দেওয়া না–দেওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করবে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব নীতিমালা বা সিদ্ধান্তের ওপর। 

এ ব্যাপারে এসএমই ফাউন্ডেশনের ঢাকার পান্থপথের রয়্যাল টাওয়ারের ষষ্ঠ তলার বিজনেস সাপোর্ট সার্ভিসেস কেন্দ্রে যোগাযোগ করা যেতে পারে। 

ব্যাংক ঋণের জন্য আবেদন করার সময় প্রধানত যেসব কাগজপত্র লাগবে—হালনাগাদ লাইসেন্স, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) /পাসপোর্টের ফটোকপি, ন্যূনতম ছয় মাস থেকে তিন বছরের ব্যাংক হিসাব, প্রতিষ্ঠান ভাড়া করার চুক্তিপত্র। এ ছাড়া ব্যবসায় বা প্রতিষ্ঠানের ধরন ও আকার অনুযায়ী আরও কিছু কাগজপত্র লাগবে। সেগুলো হচ্ছে—শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন), শেয়ারের তালিকা ও মূল্যমান, স্থায়ী সম্পদের মূল্য ও তালিকা, ভ্যাট সার্টিফিকেট, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের বিল, কর্মীদের নাম, তালিকা ও মাসিক মজুরি ইত্যাদি।