সয়াবিন তেলের ‘অনিশ্চিত’ যাত্রা
দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বারবার বাড়ছে। গত ৪ মাসে লিটারপ্রতি বোতলজাত সয়াবিনের দাম ১৩ থেকে ২২ টাকা বাড়ানোর পর কোম্পানিগুলো বলছে, দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজার বাড়তি।
গত আগস্ট মাসে ৫ লিটার তেল কেনা যেত ৫০৫ থেকে ৫১৫ টাকায়। এখন বাজারে দাম ৫৭০ থেকে ৬২৫ টাকা। এখানেই শেষ নয়, বিপণনকারী কোম্পানিগুলোর সমিতি বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন গত ১৫ নভেম্বর সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৩০ টাকা নির্ধারণ করার বিষয়টি জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। এখন বাজারে ১ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১১৫ থেকে ১২৫ টাকা। আইন অনুযায়ী, তেলের দাম বাড়াতে হলে তা ১৫ দিন আগে জানাতে হয়।
আগস্টে ৫ লিটারের এক বোতল সয়াবিনের দাম ছিল ৫০৫-৫১৫ টাকা, এখন ৫৭০-৬২৫ টাকা।পাম তেলের দাম এক বছরে ৩১% বেড়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তেলের প্রস্তাবিত দর যৌক্তিক কি না, তা যাচাই করতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে (বিটিটিসি) চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর আগেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কয়েক দফা মিলমালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। তেল আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) তিন স্তরের হওয়ার কারণে কোম্পানিগুলো বলছে, এতে তেলের আমদানি মূল্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভ্যাটের চাপও বেশি পড়ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট থেকে ভোজ্যতেলের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট তিন স্তরে আরোপ শুরু হয়।
বিশ্বব্যাংকের ২ ডিসেম্বরের পণ্য বাজার পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এপ্রিল-জুন সময়ে সয়াবিন তেলের প্রতি টনের মূল্য ছিল ৭০৭ মার্কিন ডলার, যা নভেম্বরে ৯৭৪ ডলারে ওঠে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চীনসহ কয়েকটি দেশ ভোজ্যতেল আমদানি বাড়িয়েছে। অন্য দিকে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার মতো দেশগুলো থেকে রপ্তানি কমেছে। এ কারণে আমদানিকারক দেশগুলো বিপাকে পড়েছে।
ভোজ্যতেলের মতো একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে তিন স্তরে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট যৌক্তিক নয়।গোলাম রহমান, ক্যাবের সভাপতি
ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে, দেশে বছরে ১৪ লাখ টনের মতো পরিশোধিত ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এর ৯০ শতাংশই আমদানি হয়। মোট আমদানির ৪০ শতাংশের মতো সয়াবিন তেল। কোম্পানিগুলো অপরিশোধিত তেল আমদানি করে পরিশোধন করে। তারপর তেলের একটি অংশ বোতলে ভরে বাজারজাত করে। বাকিটা খোলা তেল হিসেবে বাজারে ছাড়া হয়।
ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও বিপণনকারী সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা প্রথম আলোকে বলেন, তিন মাস আগেও প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ৭০০ ডলারের আশপাশে ছিল। তা এখন এক হাজার ডলারে উঠেছে।
বোতলজাত তেলের দাম বাড়ার আগেই খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়ছিল। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত বছর এ সময়ে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৮০ থেকে ৮৫ টাকার মধ্যে ছিল। এখন তা ১০০ থেকে ১০৪ টাকা। আর এক বছর আগের তুলনায় এখন খোলা পাম সুপার তেলের দাম ৩১ শতাংশ বেড়েছে। বিক্রি হচ্ছে ৯৪ থেকে ৯৬ টাকা দরে।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভোজ্যতেলের মতো একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে তিন স্তরে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট যৌক্তিক নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে করকাঠামো পুনর্বিবেচনা করা দরকার। শুধু তা-ই নয়, কর কমালে যাতে দাম কমে, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুন
-
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে আজ, যেভাবে চলবে ক্লাস, মানতে হবে কিছু নির্দেশনা
-
মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপের চেষ্টা চালাচ্ছে চীন: অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন
-
এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী ৯ থেকে ১১ মের মধ্যে
-
যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ চলছে ৪০ বিশ্ববিদ্যালয়ে, চাপে প্রশাসন
-
‘আমি কথা বললে আগুন লেগে যাবে’—ক্লপের সঙ্গে ঝামেলা নিয়ে সালাহ