Thank you for trying Sticky AMP!!

হস্তশিল্পের সম্ভাবনা আছে, উদ্যোগ নেই

হস্তশিল্প রপ্তানিতে ভালো সম্ভাবনা থাকলেও দ্রুত এগোতে পারছে না বাংলাদেশ। গত পাঁচ অর্থবছরে এ খাতের রপ্তানি আয় দ্বিগুণ হয়েছে। তবে এখনো এক কোটি ডলারের মাইলফলকেই পৌঁছানো যায়নি। যদিও সারা বিশ্বে হস্তশিল্পের আনুমানিক ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের বাজার রয়েছে।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অনেকটা অগোছালোভাবেই সারা দেশে হস্তশিল্পের ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো প্রদর্শনব্যবস্থা না থাকায় আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে এসব পণ্যের অধিকাংশই পৌঁছায় না। এ ছাড়া পণ্যের নকশা, কারুশিল্পীদের প্রশিক্ষণ ও গবেষণার জন্য নেই কোনো প্রতিষ্ঠানও। অন্যদিকে বাঁশ-বেতের চাষ কমে যাওয়াও কাঁচামালের সংকট প্রকট হচ্ছে। সরকারের দিক থেকে এসব সমস্যা সমাধানে জোরালো কোনো উদ্যোগ নেই।
বাংলাদেশ হস্তশিল্প প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বাংলাক্রাফট) জানায়, ২০০১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে হস্তশিল্প গবেষণা ও ডিজাইন উন্নয়নে ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের স্থাপন করতে কাকরাইলে এক খণ্ড জমি বরাদ্দ দেন। তবে সরকার পরিবর্তন হওয়ায় সেটি বাতিল হয়ে যায়। আজ অবদি সেই জমি মেলেনি।
এ বিষয়ে সমিতির সভাপতি এস ইউ হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে হস্তশিল্পের বিশ্ববাজারে নেতৃত্ব দেওয়া চীন, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের নিজস্ব নকশা উন্নয়ন ও গবেষণাকেন্দ্র আছে। সেখানে বৈশ্বিক গতিপ্রকৃতি বিবেচনায় নিয়ে নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবন করা হয়। তারপর সেগুলো উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এস ইউ হায়দার সে রকম কিছু করা দরকার বলে মনে করেন।
বাংলাক্রাফটের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শতরঞ্জি, বিভিন্ন আকৃতির ঝুড়ি, পাটের তৈরি থলে, পাপোশ, টেরাকোটা, মোমবাতি, নকশিকাঁথা, পাখির খাঁচা, বাঁশ ও বেতের বিভিন্ন সামগ্রী, চামড়ার তৈরি মুদ্রার বাক্স, বেল্টসহ বিভিন্ন ধরনের হস্তজাত পণ্য রপ্তানি করছেন উদ্যোক্তারা। এ ছাড়া দেশের ভেতরে ছয় হাজার কোটি টাকার বাজার আছে এ হস্তশিল্পের।
বর্তমানে কারুপণ্য রংপুর, ঢাকা ট্রেড, আস্ক হ্যান্ডিক্রাফটস, কুমুদিনী, আড়ং, নিপুণ ক্রাফটস, সান ট্রেড, হিড হ্যান্ডিক্রাফটস, ক্রিয়েশনসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠান হস্তজাত পণ্য রপ্তানি করছে। আর বাংলাক্রাফটের সদস্যসংখ্যা ৪০০।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৩৭ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের হস্তশিল্পজাত পণ্য রপ্তানি হয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা বেড়ে ৭৫ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ খাতের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫ লাখ ডলার। আর এখন পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৭১ লাখ ডলার আয় হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি।
হস্তজাত পণ্যের রপ্তানিতে শীর্ষে আছে কারুপণ্য রংপুর লিমিটেড। ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে রংপুরে স্থানীয়ভাবে শতরঞ্জি প্রস্তুত ও বিক্রি শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০০২ সাল থেকে রপ্তানিতে যায় কারুপণ্য। বর্তমানে ৩৮টি দেশে বছরে গড়ে ১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে প্রতিষ্ঠানটি।
হস্তশিল্পের রপ্তানি বাড়াতে সরকারের পাশাপাশি উদ্যোক্তাদেরও উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করেন কারুপণ্যের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল আলম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, উদ্যোক্তাদের বড় হওয়ার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া বর্তমান প্রেক্ষাপটে কমপ্লায়েন্স কারখানা গড়তে বেশি নজর দিতে হবে।
এদিকে আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে উৎসে কর বাতিল, কম সুদে ব্যাংকঋণ ও শিল্পপল্লি স্থাপনের জোর দাবি জানিয়েছে বাংলাক্রাফট।
হস্তশিল্পের ব্যবহৃত কাঁচামালের সবই স্থানীয়ভাবে পাওয়া যায়। এমনটা উল্লেখ করে এস ইউ হায়দার হস্তজাত পণ্য রপ্তানিতে শূন্য দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ হারে উৎসে কর দেওয়ার বিধানটি বাতিলের দাবি করেন। এ ছাড়া বাজারে টিকে থাকতে হলে স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়া জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বিশেষ তহবিল থাকলে ভালো হয়। যাতে উদ্যোক্তারা সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ সুদে ঋণ পেতে পারেন।
সারা দেশে বাঁশ, বেত ও শণ চাষ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। তাই দাম গেছে বেড়ে। সে জন্য এসব কাঁচামাল চাষের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে খাসজমি উদ্যোক্তাদের বরাদ্দ দেওয়ারও দাবি করেন সমিতির সভাপতি। তিনি বলেন, ‘কাঁচামাল স্থানীয়ভাবে আবার চাষ করা সম্ভব হলে পণ্যের উৎপাদন খরচ কমে আসবে। রপ্তানি বাড়বে।’ একই সঙ্গে স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত হস্তশিল্প রপ্তানির জন্য খোলা ঋণপত্রের অন্তত ৫০ ভাগ কাঁচামাল শূন্য শুল্কে আনার ব্যবস্থা চান তিনি।
এ ছাড়া হস্তশিল্প গবেষণা ও ডিজাইন উন্নয়নে ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং একটি হস্তশিল্পপল্লি প্রতিষ্ঠার দাবি করেন বাংলাক্রাফটের সভাপতি। শিল্পপল্লির বিষয়ে তিনি বলেন, এটি করা গেলে এক ছাদের নিচে অনেক প্রতিষ্ঠান চলে আসবে। তখন ক্রেতারা সহজেই এখানে এসে পণ্য পছন্দ করে ক্রয়াদেশ দিতে পারবেন। যেটি বর্তমানে সম্ভব হচ্ছে না। সমিতির পক্ষ থেকে এসব দাবি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।