Thank you for trying Sticky AMP!!

হোটেল-রেস্তোরাঁয় বিক্রি কম

সাধারণত সন্ধ্যার দিকে রেস্তোরাঁ জমজমাট হয়ে ওঠে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর পান্থপথের একটি রেস্তোরাঁ এ রকম ফাঁকাই দেখা যায় l প্রথম আলো

টানা অবরোধ-হরতালে খাবারের হোটেল, রেস্টুরেন্ট, চায়নিজ রেস্টুরেন্ট ও ফাস্ট ফুডের ব্যবসায় ধস নেমেছে। এসব হোটেল-রেস্টুরেন্টে বিক্রি গড়ে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৬০ শতাংশ কমে গেছে।
বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং নানা পর্যায়ের হোটেল-রেস্টুরেন্টের মালিকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, খাবারের হোটেলগুলো মূলত আশপাশের মার্কেট, দোকান, বাসাবাড়ি এবং ভাসমান মানুষের ওপর টিকে থাকে। হরতাল-অবরোধে যেহেতু এসব মানুষের খাবার বন্ধ থাকে না, তাই হোটেলের বিক্রিতে প্রভাব পড়েছে কম। তবে ভাসমান মানুষের আনাগোনা কমে যাওয়াটাই তাঁদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে হরতাল-অবরোধের প্রভাব বেশি পড়েছে চায়নিজ রেস্টুরেন্ট আর ফাস্ট ফুডের দোকানগুলোতে। এসব রেস্টুরেন্টের বড় ভোক্তা হলেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে আসা ব্যক্তিরা। কিন্তু সবার মধ্যে আতঙ্ক আর নিরাপত্তাহীনতা থাকায় এই লোকজন আগের মতো খেতে আসছেন না।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রেজাউল করিম সরকার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের ব্যবসা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বেচাবিক্রি কমে গেছে অন্তত ৬০ শতাংশ। আর হরতাল-অবরোধ একসঙ্গে থাকলে বিক্রি হয় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ।
অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে বড়, মাঝারি ও ছোট মিলে হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও দই-মিষ্টির দোকান আছে ৫০-৫৫ হাজার। এর মধ্যে ঢাকাতেই আছে পাঁচ হাজারের বেশি। এসব হোটেল-রেস্টুরেন্টে ১০ থেকে ১২ লাখ শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন।
রেজাউল করিম জানান, সারা দেশের হেটেল-রেস্টুরেন্টগুলোর প্রতিদিনের বিক্রির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা। এখন বিক্রি ১৫ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। স্বাভাবিক সময়ে শুধু ঢাকার হোটেল-রেস্টুরেন্টে বিক্রি হয় ১৫ কোটি টাকার। সেটা এখন আট কোটি টাকায় নেমেছে।
ধানমন্ডির ২৭ নম্বরে ‘লবঙ্গ’ রেস্টুরেন্টের অবস্থান। মাঝারি আয়তনের এই রেস্টুরেন্টে প্রতিদিন অনেক লোক খেতে আসেন। সন্ধ্যার পর রেস্টুরেন্টটি জমজমাট হয়ে ওঠে। গাড়িতে করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনেকেই সেখানে খেতে আসেন। কিন্তু এখন আর সে অবস্থা নেই। এর স্বত্বাধিকারী তৌফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার রেস্টুরেন্টটি খুব বেশি বড় নয়। তার পরও অনেকে পরিবার নিয়ে এখানে খেতে আসেন। এঁদের অনেকেই আসেন গাড়ি করে। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে কেউই আসতে পারছেন না। ফলে বিক্রি কমে গেছে ৬০ শতাংশের বেশি।’
পূর্ব রামপুরার নিউ পপুলার রেস্টুরেন্টটি সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সকালে চাহিদা থাকে নান ও পরোটার, দুপুর আর রাতে ভাতের। এই দিয়েই ভালো ব্যবসা হয় রেস্টুরেন্টটির। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার সকালে গিয়ে দেখা গেছে, জনা পাঁচেক লোক নাশতা করছেন। এর বাইরে সব টেবিল-চেয়ারই খালি। কাজ না থাকায় কর্মচারীদের মধ্যে আলস্য দেখা যায়।
বেচাবিক্রি কেমন, জানতে চাইলে রেস্টুরেন্টটির একজন মালিক (একাধিক মালিকানার রেস্টুরেন্ট) আফতাব আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, হরতাল-অবরোধে শুধু স্থানীয় লোকজনই এখানে খেতে আসছেন। বাইরের লোকজন আসতে পারছেন না। অনেকেই মোটরসাইকেল, গাড়ি থামিয়ে এখানে খেতে আসেন। হরতালে ঝুঁকি নিয়ে লোকজন গাড়ি-মোটরসাইকেল নিয়ে বেরও হচ্ছেন না, বিক্রিও হচ্ছে না। আগের চেয়ে বিক্রি অন্তত ২৫ শতাংশ কমে গেছে। তিনি বলেন, এখন তো টানা অবরোধ চলছে। এর মধ্যে আবার হরতাল ডাকা হচ্ছে। লোকজনের মধ্যে ভয়ভীতি থাকায় হরতালের আগের রাতে ব্যবসা হয় না।
ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডে ‘লাইলাতি’ নামে একটি ফাস্ট ফুড ও চায়নিজ রেস্টুরেন্ট আছে। এখানকার খাবারের প্রধান ক্রেতাই হচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। হরতাল-অবরোধে অনিয়মিত স্কুল-কলেজে শিক্ষাদান হওয়ায় তাদের বিক্রিও কমে গেছে। একজন কর্মকর্তা বলেন, ফাস্ট ফুডের ব্যবসা এখন খুবই খারাপ। এ ফাস্ট ফুডের দোকানটি পুরোপুরি স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের ওপর নির্ভর করে চলে। কিন্তু অবরোধের কারণে এখানকার অনেক স্কুলই বন্ধ। সে কারণে ক্রেতাও কমে গেছে।
শুধু যে ঢাকার হেটেল-রেস্টুরেন্টগুলোরই এই অবস্থা তা নয়, ঢাকার বাইরের চিত্রও মোটামুটি একই রকম।
রেজাউল করিমের রেস্টুরেন্টটি বগুড়ার সাতমাথার স্টেশন রোডের মতো ব্যস্ত জায়গায়। নাম সৈকত হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট। তিনি বলেন, ‘এমন ব্যস্ত জায়গায় থাকার পরও ব্যবসা একদমই নাই হয়ে গেছে। বেচাবিক্রি আগের চেয়ে দুই-তৃতীয়াংশ কম হচ্ছে। সে কারণে ৫৮ জন শ্রমিক-কর্মচারী নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি।’