Thank you for trying Sticky AMP!!

১৩৩ তৈরি পোশাক কারখানার ৬০% পর্যন্ত ত্রুটি সংস্কার

দেশের ১৩৩টি তৈরি পোশাক কারখানা অগ্নি, বিদ্যুৎ ও ভবনের কাঠামোগত ত্রুটির ৪১ থেকে ৬০ শতাংশ সংস্কারকাজ শেষ করেছে। ৬১ থেকে ৮০ শতাংশ সংস্কার সম্পন্ন করেছে ১৯টি কারখানা। ২১ থেকে ৪০ শতাংশ ত্রুটি সারিয়েছে আরও ২৫১টি প্রতিষ্ঠান। আর শতভাগ সংস্কারকাজ শেষ করে ৬টি কারখানা ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মানের স্বীকৃতি পেয়েছে।
উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটির দ্বিতীয় বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যালায়েন্সের সদস্য কারখানার সংখ্যা ৭৯০। এর মধ্যে সক্রিয় আছে ৬৬২টি। ইতিমধ্যে ৬৬১ কারখানার পরিদর্শন শেষ হয়েছে। ৫৯১ কারখানার ত্রুটি সংশোধন কর্মপরিকল্পনা (ক্যাপ) অনুমোদন হয়েছে। প্রথম সংস্কার যাচাই পরিদর্শন (আরভিভি) সম্পন্ন হয়েছে ৫২৮ কারখানার। ১৭ কারখানার দ্বিতীয় আরভিভি হয়েছে। এতেই উঠে আসে কোন কারখানা কতটুকু সংস্কারকাজ শেষ করেছে।
সংস্কার শেষে চূড়ান্ত পরিদর্শনে আটটি কারখানা অংশ নিলেও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হওয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে ছয়টি। এগুলো হচ্ছে গ্রিন টেক্সটাইল, কুন টং অ্যাপারেলস, লন্ড্রি ইন্ডাস্ট্রিজ, লেনি অ্যাপারেলস, অপটিমাম ফ্যাশনস ও ইউনিভোগ লিমিটেড। গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অ্যালায়েন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেসবাহ রবিন। গতকাল বুধবার তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ছয় কারখানা কর্তৃপক্ষকে সনদ দেওয়া হয়েছে।
বার্ষিক প্রতিবেদনে সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে কিছু চ্যালেঞ্জের কথাও বলেছে অ্যালায়েন্স। বলা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই কারখানাগুলো ক্যাপে উল্লেখিত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ করতে পারছে না। কোনো কারখানা যদি সপ্তাহের পর সপ্তাহ উন্নতি দেখাতে না পারে, তবে নন-কমপ্লায়েন্ট হয়ে যাবে।
এদিকে অ্যালায়েন্সের প্রতিবেদনে সংস্কার কার্যক্রমে উন্নতির পাশাপাশি অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ে শ্রমিকদের সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫৯৭ কারখানার ১১ লাখ ১৫ হাজার পোশাকশ্রমিককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে ক্রেতাদের এই জোট। এ ছাড়া ৬৫০ কারখানার ১৩ হাজার ৮০০ নিরাপত্তাকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজও শেষ।
প্রশিক্ষণ দেওয়ার আগে ৩ হাজার ২০৭ জন শ্রমিকের ওপর ভিত্তিরেখা (বেইজ লাইন) জরিপ করা হয়। প্রশিক্ষণ শেষে ৪ হাজার ৫৯১ জনের ওপর মূল্যায়ন জরিপ চালানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের করা ওই জরিপে দেখা যায়, প্রশিক্ষণের আগে মাত্র ২ শতাংশ শ্রমিক অগ্নিকাণ্ডের জন্য বিপজ্জনক সব ধরনের বস্তু শনাক্ত করতে পারতেন। প্রশিক্ষণ শেষে সংখ্যাটি ৪৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
জরিপমতে, প্রশিক্ষণ শেষে ৮৮ শতাংশ শ্রমিক আপত্কালীন কী করতে হবে সেটি শিখেছেন। আগে এই সংখ্যা ছিল ৬১ শতাংশ। এ ছাড়া ফায়ার অ্যালার্ম বাজলে এখন সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারেন ৭৩ শতাংশ প্রশিক্ষিত শ্রমিক। আগে পারতেন মাত্র ৩৪ শতাংশ শ্রমিক।
২০১৩ সালে সাভারে রানা প্লাজা ধসের আড়াই মাস পর ১০ জুলাই কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে উত্তর আমেরিকার ২৬টি ব্র্যান্ড পাঁচ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে অ্যালায়েন্স গঠন করে।
এদিকে বিশ্বের খুচরা ব্যবসায়ীদের বৃহৎ সংগঠন ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশনের (এনআরএফ) দুজন প্রতিনিধি গত মাসে বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। এ সময় তাঁরা পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ ও শ্রমিক নিরাপত্তার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করেন। অ্যালায়েন্সের সদস্য ২৬টি ব্র্যান্ডকে একত্র করার ব্যাপারে সহযোগিতা করে এনআরএফ।
সফর শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে এনআরএফের ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাথন গোল্ড বলেন, ‘শ্রমিক নিরাপত্তা যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে প্রথম অগ্রাধিকার। সেটি বিক্রয়কেন্দ্র হোক বা পৃথিবীর যেকোনো জায়গার কারখানাই হোক না কেন। সে জন্যই আমরা দেখতে গিয়েছিলাম, বাংলাদেশে আমাদের জন্য কী অগ্রগতি হয়েছে।’ খবরটি দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। অপর ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেভিড ফ্রেন্স বলেছেন, বাংলাদেশের পোশাক কারখানায় কর্মপরিবেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। এভাবে চললে আরও অনেক উন্নতি হবে।