Thank you for trying Sticky AMP!!

'বাজেট হইছেনি, কিসের দাম বাড়ল?'

নিয়ম অনুসারে জুন মাসে জাতীয় বাজেট হয়, অনেকেরই তা জানা। তবে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের বাজেট নিয়ে তেমন বিশেষ কোনো কৌতূহল দেখা গেল না। অনেকে জানেনই না যে গতকাল সংসদে বাজেট পেশ হয়েছে। যাঁরা পত্রপত্রিকায় বা টিভির পর্দায় চোখ রাখেন, তাঁরা বাজেট পেশের খবরটি জানেন। তবে তাঁদেরও পুরো বাজেট বক্তৃতা শোনার আগ্রহ ছিল না। খবরে যেটুকু শুনেছেন তাতেই একটা ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। এর চেয়ে বরং টিভিতে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ম্যাচ দেখতেই আগ্রহী ছিলেন অনেকে।

মগবাজারের শহীদ তাজউদ্দীন সড়কের আসমা ট্রেডিং করপোরেশনের প্রবীণ ব্যবসায়ী আবুল কাশেম মেঘলা দিনে উপভোগ করছিলেন ক্রিকেট ম্যাচের আনন্দ। তাঁর রং ও হার্ডওয়্যারের দোকান। বেচাকেনা তেমন নেই। খেলা দেখছিলেন। ব্যবসা-বাণিজ্যে যুক্ত বলে বাজেট সম্পর্কে কিছুটা খোঁজখবর রাখতেই হয়। বললেন, দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া হয় বাজেটের পর। সাধারণ মানুষ মনে করেন বাজেট মানেই জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়া। তাঁরা জানতে চেষ্টা করেন কোন কোন জিনিসের দাম বাড়ল। আর ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি বিশেষ শ্রেণী আছে, তারা বাজেট পেশের আগে থেকেই তৎপর থাকে। আঁচ পাওয়ার চেষ্টা করে, কী হচ্ছে। সেই অনুসারে জিনিসপত্র জমা করে ফেলে। ফলে দেখা যায়, বাজেট ঘোষণার পরপরই কিছু কিছু জিনিসের দাম বেড়ে যায়।

প্রবীণ এই ব্যবসায়ী বলছিলেন, ‘আমাদের মতো ছোটখাটো ব্যবসায়ী আর মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস ওঠে।’ খেটে খাওয়া মানুষের যে আয়, চাকরিজীবীর যে বেতন-কাঠামো তার সঙ্গে সমন্বয় করে বাজেট হয় না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, নানা রকমের করের আওতা ও পরিমাণ বৃদ্ধি এসবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষকে হিমশিম খেতে হয়। বাজেট তাই একরকমের নীরব আতঙ্কের মতো সাধারণ মানুষের মনে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

হয়তো সে কারণেই বাজেট সম্পর্কে কোনো কথা বলতে গিয়ে একরাশ বিরক্তিই প্রকাশ করছিলেন সরকারি চাকুরে কাজী সিরাজুল বারী। ‘আমাদের কাছে কেন? বাজেট নিয়ে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদদের কাছে যান।’ তিনি কাজ করেন ভূমি মন্ত্রণালয়ে। ছুটির পর কথা হচ্ছিল তাঁর সঙ্গে। সাধারণ মানুষের কী প্রতিক্রিয়া সেটিই জানার উদ্দেশ্য, বলার পরও তিনি সন্তুষ্ট হলেন বলে মনে হলো না। মলিন মুখেই বললেন, ‘প্রতিক্রিয়া আবার কী। বাজেটে যাই থাক আমার তো আয় বাড়েনি। লিখে দেন এটাই প্রতিক্রিয়া।’

একটু রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যার চেষ্টা করলেন নিউ ইস্কাটনের ব্যবসায়ী এ বি এম জাকিরুল হক। পোশাকশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাঁর ব্যবসা। ধাতব বোতাম তৈরির কারখানা আছে নারায়ণগঞ্জে। একসময় ছাত্ররাজনীতি করতেন। বললেন, ‘এবার তো নির্বাচনী বাজেট। জনগণের মন রাখার চেষ্টা করেই বাজেট করা হয়েছে। তবে অনেক ঘাটতি। সব মিলিয়ে মন্দের ভালো।’

বাজেট নিয়ে এই হলো আমজনতার ভাবনা। যাঁদের দিন এনে দিন খেয়ে জীবন পার করতে হয়, বাজেটের হাজার হাজার কোটি টাকার অঙ্ক তাঁদের মাথায় ঢোকে না। তাঁরা দেখেন নিজের আয়ের সামর্থ্য আর দ্রব্যমূল্যের ঘোড়দৌড়ের মধ্যে সমন্বয় ঘটাতেই গলদঘর্ম। সৎভাবে চললে পারিবারিক বাজেটের ঘাটতি পূরণ করতে গিয়ে কষ্ট-গ্লানি মন বিষিয়ে তোলে। নিরানন্দ হয়ে পড়ে জীবনযাপন।