Thank you for trying Sticky AMP!!

ট্রাকে তোলা হচ্ছে কোরবানির পশুর চামড়া। গতকাল রাজধানীর পোস্তায়

সরকার নির্ধারিত দামেও বিক্রি হলো না চামড়া

প্রতিবছরই লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তবে কাঁচা চামড়া বিক্রির সময় সেই দর অনুসরণ করা হয় না।

চলতি বছর রাজধানী ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে এই দাম নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নির্ধারিত দাম অনুযায়ী ঢাকার মধ্যে মাঝারি আকারের ২৫ বর্গফুটের একটি লবণযুক্ত চামড়ার দাম হওয়ার কথা ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৩৭৫ টাকা। এই হিসাব থেকে লবণ, মজুরি ও অন্যান্য খরচ বাবদ ৩০০ টাকা বাদ দিলে ওই চামড়ার আনুমানিক মূল্য দাঁড়ায় ৯৫০ থেকে ১ হাজার ৭৫ টাকা।

তবে গত বৃহস্পতিবার কোরবানি ঈদের দিনে পুরান ঢাকার পোস্তাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, মাঝারি আকারের চামড়া বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ৮৫০ টাকার; অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অন্তত ২০০ টাকা কমে বাজারে কাঁচা চামড়া বিক্রি হয়েছে।

Also Read: সবকিছুর দাম বাড়লেও চামড়ার দাম গত এক দশকে কমে অর্ধেক হলো কেন

কোরবানির সময় প্রতিবছরই লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তবে পশু জবাইয়ের পর প্রাথমিকভাবে কাঁচা চামড়া বিক্রির সময় সেই দর অনুসরণ করা হয় না। অনেকটা অনুমানের ভিত্তিতে কাঁচা চামড়া বেচাকেনা হয়। ফলে প্রতিবছরই চামড়ার ন্যায্য দাম না পাওয়া নিয়ে অভিযোগ করেন কোরবানিদাতা ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এই খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনলে কাঁচা চামড়ার চাহিদা বাড়বে ও স্থানীয় পর্যায়ে দামও বাড়বে। এ ছাড়া আমি কোনো আশা দেখি না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক এম আবু ইউসুফ

চামড়া ব্যবসায়ী ও আড়তদারেরা জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর কাঁচা চামড়ার দাম কিছুটা বেড়েছে। প্রতি চামড়ায় ৫০ টাকা থেকে দেড় শ টাকা পর্যন্ত দাম বেশি পাচ্ছেন মৌসুমি বিক্রেতারা। তবে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দাবি, চামড়ার দাম কিছুটা বাড়লেও তা সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক কম।

Also Read: সবকিছুর দাম বাড়তি, তবে চামড়ার দাম কম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক এম আবু ইউসুফ মনে করেন, চামড়াশিল্পে যথাযথ সংস্কারের অভাব ও ট্যানারিগুলো আন্তর্জাতিক মান সনদ অর্জন না করায় স্থানীয় পর্যায়ে কাঁচা চামড়ার দাম বাড়ানো সম্ভব হয়নি। ফলে সরকার একটা দাম নির্ধারণ করে দিলেও শেষ পর্যন্ত প্রাথমিক চামড়া বিক্রেতারা উপযুক্ত দাম পান না। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এই খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনলে কাঁচা চামড়ার চাহিদা বাড়বে ও স্থানীয় পর্যায়ে দামও বাড়বে। এ ছাড়া আমি কোনো আশা দেখি না।’

গত বছরের তুলনায় প্রতিটি চামড়ায় ৫০ টাকা লাভ পেয়েছি। কিন্তু চামড়ার আকার ও সরকার নির্ধারিত দাম অনুসারে দাম আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল।
জামেয়া ইসলামিয়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসার পরিচালক মাহবুবুর রহমান

ঢাকায় চামড়া ৭০০-৮৫০ টাকায় বেশি বিক্রি

রাজধানীতে কোরবানির চামড়া ক্রয়-বিক্রয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকা। বৃহস্পতিবার কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে পাঁচটি মাঝারি আকারের চামড়া নিয়ে পোস্তায় আসেন জামেয়া ইসলামিয়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসার পরিচালক মাহবুবুর রহমান। তিনি একটি আড়তে প্রতিটি চামড়ার দাম ১ হাজার ২০০ টাকা করে ৬ হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু তাঁকে প্রথমে ৭০০ টাকা করে দাম বলেন সেই আড়তদার।

এ নিয়ে মিনিট দুয়েক দর-কষাকষি চলে। শেষমেশ ৮৫০ টাকা দরে মোট ৪ হাজার ২৫০ টাকায় পাঁচটি চামড়া বিক্রি হয়। জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় প্রতিটি চামড়ায় ৫০ টাকা লাভ পেয়েছি। কিন্তু চামড়ার আকার ও সরকার নির্ধারিত দাম অনুসারে দাম আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল।’

Also Read: গরুর চামড়ার দাম বাড়ল, বাড়েনি খাসি-বকরির : বাণিজ্যমন্ত্রী

কলাবাগান এলাকার মৌসুমি ব্যবসায়ী রমজান হোসেন বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় চামড়ার দাম একটু বেশি। কিন্তু তাতে আমাদের খুব একটা লাভ থাকছে না।’

রাজধানীর অন্যান্য এলাকাতেও মোটামুটি একই চিত্র দেখা গেছে। সব মিলিয়ে রাজধানীতে এবার বেশির ভাগ চামড়া ৬৫০ থেকে ৮৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

ছাগলের চামড়া নিয়ে কোনো আগ্রহই দেখাননি আড়তদার ও ট্যানারির মালিকেরা। এ কারণে অনেক বিক্রেতা ছাগলের চামড়া ফেলে যান কিংবা নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করেন।

ঢাকার বাইরে দাম আরও কম

সরকার এ বছর ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। তাতে ২৫ বর্গফুটের একটি চামড়ার দাম হওয়ার কথা ৮২৫ টাকার বেশি। কিন্তু ঢাকার বাইরে ৭০০ টাকার বেশি দামে চামড়া বিক্রির খবর তেমন পাওয়া যায়নি। রাজশাহী মহানগরীতে ঈদের দিন প্রতিটি গরুর চামড়া ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় অনেকটা কাছাকাছি দাম ছিল। আর সিলেট ও মৌলভীবাজারে বিক্রি হয়েছে ৩০০-৪০০ টাকায়।

রাজশাহী নগরের দরগাপাড়া এলাকার কসাই কাওসার আলী বলেন, আজ থেকে ১০ বছর আগেও চামড়ার বাজার এমন ছিল না। তখন একটি বড় গরুর চামড়া ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠত। এখন সেই চামড়া বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা।

আড়তদারদের দাবি ভিন্ন

চামড়া লবণজাতের জন্য আড়তদার ছাড়াও ট্যানারির মালিক, ব্যাপারী, ফড়িয়া ও পাইকারেরা কাঁচা চামড়া কেনেন। ফলে বাজারে একধরনের প্রতিযোগিতা রয়েছে। এ কারণে কেউ কাউকে ঠকিয়ে চামড়া কিনবে, এমন সুযোগ কম বলে মনে করেন আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি আফতাব খান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, সবারই বাজারে দাম যাচাইয়ের সুযোগ রয়েছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ৭-৮টি দাম নেন, এরপর তা যাচাই করে চামড়া বিক্রি করেন। ফলে কারও লোকসানে পড়ার আশঙ্কা কম।

পোস্তার শুরাইম এন্টারপ্রাইজের আড়তদার হাবীবুর রহমান বলেন, চামড়ার দাম এবার বেড়েছে। কিন্তু লবণের দামও অনেক বেড়েছে। তা না হলে কাঁচা চামড়ার আরও বেশি দাম পেতেন মৌসুমি বিক্রেতারা।

ছাগলের চামড়ায় আগ্রহ নেই

এ বছর গরুর চামড়ার দাম কিছুটা বাড়লেও খাসি ও বকরির চামড়ার দাম বাড়ায়নি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ হিসাবে গত বছরের মতো এবারও খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু দেখা গেছে ছাগলের চামড়া নিয়ে কোনো আগ্রহই দেখাননি আড়তদার ও ট্যানারির মালিকেরা। এ কারণে অনেক বিক্রেতা ছাগলের চামড়া ফেলে যান কিংবা নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করেন।

ট্যানারির মালিকেরা বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ছাগলের চামড়ার চাহিদা কমেছে। এ ছাড়া দেশে যেসব ট্যানারি ছাগলের চামড়া প্রক্রিয়াজাত করত, সেগুলোর বেশির ভাগ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ট্যানারিমালিকেরা ছাগলের চামড়া কম কিনছেন।

এবারও ব্যাপক দূষণের শঙ্কা

এবারের ঈদে সংখ্যায় এক কোটি চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন সাভারের চামড়াশিল্প নগরের ১৪২টি ট্যানারির ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে লবণযুক্ত চামড়া ট্যানারিতে যেতে শুরু করেছে। তবে সাভার চামড়াশিল্প নগরের কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় প্রতিবছরের মতো এবারও পরিবেশ ও নদীদূষণের আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক ও সালমা ট্যানারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, সিইটিপি এখনো অসম্পূর্ণ। এ কারণে পরিবেশদূষণের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।