Thank you for trying Sticky AMP!!

চট্টগ্রাম বন্দর

সময় লাগছে বেশি, খরচও বাড়তি

লোহিত সাগর সংকটের প্রভাবে আমদানি করা পণ্যের দামের সঙ্গে বাড়তি জাহাজভাড়া আদায় শুরু। 

যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন বীজ নিয়ে বাংলাদেশি পতাকাবাহী ‘এমভি মেঘনা অ্যাডভেঞ্চার’ জাহাজ এখন চট্টগ্রামের পথে। জাহাজটি চট্টগ্রামে আসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কাছের পথ হলো ভূমধ্যসাগর হয়ে সুয়েজ খাল ও লোহিত সাগরপথ। তবে লোহিত সাগরের সংকটের কারণে জাহাজটি এখন আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে চট্টগ্রামে আসছে। তাতে বাড়তি দেড় হাজার নটিক্যাল মাইল ঘুরে আসতে অন্তত পাঁচ থেকে ছয় দিন বেশি সময় লাগবে।

জাহাজ চলাচল পর্যবেক্ষণকারী ভেসেল ফাইন্ডার ওয়েবসাইটে দেখা যায়, গত শনিবার সন্ধ্যা ছয়টায় জাহাজটি আফ্রিকা ঘুরে মাদাগাস্কারের কাছের সাগরপথ ধরে চট্টগ্রামমুখী ছিল। জাহাজটি যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি নদীর দারো বন্দর থেকে রওনা হয়েছে ২৭ ডিসেম্বর। ১৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম পৌঁছানোর কথা। সব মিলিয়ে ৫৩ দিন সময় লাগবে।

প্রতিদিন শুধু জাহাজ পরিচালনার জন্য ১০ থেকে ১২ হাজার ডলারের নির্দিষ্ট পরিচালন খরচ রয়েছে। ঘুরপথে আসার জন্য বাড়তি খরচ দিতে হচ্ছে।
মোস্তফা কামাল, চেয়ারম্যান, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ

মেঘনা অ্যাডভেঞ্চার জাহাজটি বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় গ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআইয়ের)। জাহাজে আনা ৫৯ হাজার টন সয়াবিন বীজও তাদের। ঘুরপথে আসার প্রভাব কী, তা জানতে চাইলে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিদিন শুধু জাহাজ পরিচালনার জন্য ১০ থেকে ১২ হাজার ডলারের নির্দিষ্ট পরিচালন খরচ রয়েছে। ঘুরপথে আসার জন্য বাড়তি খরচ দিতে হচ্ছে। নিজস্ব জাহাজ হলেও এই খরচ পণ্যের আমদানিমূল্যের সঙ্গে যোগ হচ্ছে।’

বাল্ক জাহাজ ছাড়াও কনটেইনারে পণ্য আমদানিতে জানুয়ারি থেকে সারচার্জ আরোপ করেছে কনটেইনার শিপিং লাইনগুলো। শুরুতে পণ্যের বিদেশি সরবরাহকারীরা এই সারচার্জ দিলেও এখন পণ্যের দামের সঙ্গে যুক্ত করে দিচ্ছে তারা। তাতে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও তুরস্ক থেকে কনটেইনারে আনা পণ্যে টনপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ ডলার পর্যন্ত খরচ বেড়েছে। আমদানির মতো রপ্তানিতেও প্রভাব পড়েছে।

ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিশোধ নিতে গত ডিসেম্বরে লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা শুরু করে। এর জেরে ১৫ ডিসেম্বরের পর বিশ্বের পাঁচটি বড় কনটেইনার জাহাজ কোম্পানির মধ্যে চারটিই লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয়। লোহিত সাগরে সংকটের ৫০ দিন এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে। বড় শিপিং লাইনগুলোর বেশির ভাগ জাহাজই এখন আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে সাগর পাড়ি দিচ্ছে।

উড়োজাহাজে পণ্য পরিবহনের চাপ

হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের তথ্যে দেখা যায়, এ বছর জানুয়ারিতে এই বিমানবন্দর দিয়ে উড়োজাহাজে ১৪ হাজার ৮৫১ টন পণ্য রপ্তানি হয়েছে। রপ্তানি আয় ছিল ১৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। গত বছরের জানুয়ারিতে পণ্য রপ্তানি হয়েছিল ৪ হাজার ৪৫০ টন। রপ্তানি আয় হয়েছিল সাত কোটি ডলার। অর্থাৎ ঢাকা বিমানবন্দর দিয়ে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬৫ শতাংশ। পরিমাণের হিসাবে, এ বছর জানুয়ারিতে মোট রপ্তানির ৬০ শতাংশই রপ্তানি হয়েছে ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ও মিসরে।

তুসুকা গ্রুপ গত জানুয়ারিতে উড়োজাহাজে প্রায় ৩৮ লাখ ডলার মূল্যের ৩ লাখ ৮৬ হাজার পিস পোশাক রপ্তানি করেছে। এসব পণ্যের বড় অংশের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। জানতে চাইলে তুসুকা গ্রুপের কর্মকর্তা মাসুম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুটি কারণে উড়োজাহাজে পণ্য রপ্তানি করতে হয়েছে। প্রথমত, নভেম্বরে গাজীপুরে শ্রমিক আন্দোলনের কারণে উৎপাদনে বিলম্ব হয়েছে। দ্বিতীয়ত, লোহিত সাগরের সংকটের কারণে ক্রেতার হাতে দ্রুত পণ্য তুলে দিতে উড়োজাহাজে রপ্তানি করতে হয়েছে।’

আমদানিতে সরাসরি খরচ বাড়ছে

ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো থেকে বাল্ক জাহাজ ও কনটেইনার জাহাজে পণ্য আমদানি হয়। সংকট শুরুর দেড় মাসের মাথায় চট্টগ্রামমুখী বাল্ক জাহাজ আফ্রিকা ঘুরে আসছে। কনটেইনার পণ্য আমদানিতেও ঘুরপথে আসার জন্য বাড়তি খরচ দিতে হচ্ছে। শিল্পের কাঁচামালের মতো বাণিজ্যিক পণ্যের আমদানিতেও খরচ বাড়ছে।

বিকল্প কী

গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সংকটের প্রভাবে রপ্তানিতে বাড়তি চাপ পড়বে। আমদানিতে সব খাতে না পড়লেও কিছু খাতে প্রভাব পড়বে। এসব খাতে ভোক্তার খরচ বাড়তে পারে। প্রভাব মোকাবিলার জন্য বিকল্প উৎস থেকে সহজে ও কম খরচে পণ্য আমদানির জন্য উদ্যোক্তাদের নজর দেওয়া দরকার।