Thank you for trying Sticky AMP!!

আবার শতক ছুঁয়েছে দেশি পেঁয়াজের দাম

পেঁয়াজ

রাজধানীর বাজারে দেশি মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ দামের দিক থেকে শতক ছুঁয়েছে। এক দিন আগেও বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে গতকাল সোমবার এই পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে গেছে। বেড়েছে আরেক নিত্যপণ্য ডিমের দামও।

রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল প্রতি কেজি মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায়। যে পেঁয়াজ ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল, তা ছিল আকারে একটু বড়। বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ নেই বললেই চলে। মাত্র অল্প কয়েকটি দোকানে আমদানি করা পেঁয়াজ দেখা গেছে, তবে পরিমাণে তা একেবারে কম। আমদানি করা এই পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

Also Read: পাবনার উৎপাদন এলাকায় দাম বাড়ছে পেঁয়াজের

রাজধানীর মালিবাগ বাজারের রশিদ স্টোরের বিক্রেতা আবুল বাসার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজারে এখন একটু বড় আকারের নতুন দেশি পেঁয়াজ এসেছে। এই পেঁয়াজের মান কিছুটা ভালো হওয়ায় দামও বেড়েছে।’ তবে পেঁয়াজের সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই বলে জানান তিনি।

মুড়িকাটা পেঁয়াজের অন্যতম উৎপাদন এলাকা পাবনার সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলায়ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। গতকাল এই দুই উপজেলার বিভিন্ন হাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।

পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির চিত্র দেখা গেছে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকাল প্রকাশ করা বাজারদরের প্রতিবেদনেও। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি নতুন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এই পেঁয়াজের দাম ছিল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম পড়েছে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ২৩ ও ২৬ শতাংশ।

Also Read: পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে ভারত তৎপর, বাংলাদেশ কী করছে

মুড়িকাটা পেঁয়াজের অন্যতম উৎপাদন এলাকা পাবনার সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলায়ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। গতকাল এই দুই উপজেলার বিভিন্ন হাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। গতকাল স্থানীয় পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়েছে ৭০ থেকে ৭৭ টাকা ৫০ পয়সা। গত সপ্তাহের তুলনায় জেলায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহে সেখানে নতুন পেঁয়াজের দাম ছিল প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা।

মাসখানেকের মধ্যেই প্রধান জাত হালিকাটা পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করবে। তখন পেঁয়াজের দাম আবার কমে আসবে।

কৃষক ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে এখন আগাম বা মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। মাস দেড়েক আগে এই পেঁয়াজ হাটে আসা শুরু করে। তবে বেশির ভাগ পেঁয়াজ ইতিমধ্যে তোলা হয়েছে। ফলে সরবরাহ কমা শুরু করায় দাম বাড়ছে। তবে মাসখানেকের মধ্যেই প্রধান জাত হালিকাটা পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করবে। তখন পেঁয়াজের দাম আবার কমে আসবে।

সাঁথিয়ার করমজা চতুর হাটের পেঁয়াজের আড়ত মুন্নাফ ট্রেডার্সের মালিক আবদুল মুন্নাফ প্রথম আলোকে বলেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজ এখন শেষ পর্যায়ে। তাই পেঁয়াজের সরবরাহে কিছুটা টান আছে। ফলে দাম ওঠানামা করছে।

গত ডিসেম্বরের শুরুতে ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। বাজারে দেশি মুড়িকাটা জাতের নতুন পেঁয়াজ আসার পর শুরুতে তা দেড় শ টাকারও বেশি দামে বিক্রি হয়েছিল। সপ্তাহখানেক আগে এই পেঁয়াজের দাম ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় নেমে এলেও দাম এখন আবার বাড়ছে।

ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকলেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বিকল্প বাজার থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র (আইপি) দেওয়া অব্যাহত রেখেছে। বাজারে পেঁয়াজের দাম যাতে অস্বাভাবিকভাবে না বাড়ে, সে জন্যই আমদানি অনুমতিপত্র দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। পরিমাণে অল্প হলেও ভারতের বাইরে বিকল্প উৎস থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ দেশে আসছে। তা ছাড়া আমদানিকারকেরাও আইপি নিয়ে রাখছে বলে অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

বাড়ছে ডিমের দাম

এদিকে বাজারে ডিমের দামও বাড়তির দিকে। গত দুই-তিন দিনে ডিমের দাম প্রতি ডজনে অন্তত ৫ টাকা বেড়েছে। বাজারে এখন প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়। অন্যদিকে সাদা রঙের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। ব্যবসায়ীদের দাবি, চাহিদার তুলনায় বাজারে ডিম কম আসছে। ফলে ডিমের দাম বাড়তির দিকে। টিসিবির হিসাবে গত এক সপ্তাহে ডিমের দাম বেড়েছে ৭ শতাংশ।

ডিমের বাজারে অস্থিরতা শুরু হলে গত বছরের সেপ্টেম্বরে সরকার প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকা (ডজন ১৪৪ টাকা) নির্ধারণ করে দেয়। এ ছাড়া ১৫টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ভারত থেকে ১৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমতিও দিয়েছিল সরকার। অনুমতি দেওয়ার দেড় মাসের বেশি সময় পরে একটি চালানে মাত্র ৬১ হাজার ৯৫০টি ডিম বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশে আসে। তখন শুল্কসহ প্রতিটি ডিমের দাম পড়ে ৭ টাকা ২৩ পয়সা।

বাজারে পেঁয়াজের দাম যাতে অস্বাভাবিকভাবে না বাড়ে, সে জন্যই আমদানি অনুমতিপত্র দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। পরিমাণে অল্প হলেও ভারতের বাইরে বিকল্প উৎস থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ দেশে আসছে।

টুডেএগরেট ডটইন নামের একটি ভারতীয় ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, গতকাল কলকাতার বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম ছিল ৬ রুপি। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৭ টাকা ৯৪ পয়সা। ভারতের বাজারে ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি শুল্ক কমানোর জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছে ডিম আমদানির অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো।

বাজারে ডিমের দামও বাড়তির দিকে। গত দুই-তিন দিনে ডিমের দাম প্রতি ডজনে অন্তত ৫ টাকা বেড়েছে। বাজারে এখন প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়।

ডিম আমদানির প্রক্রিয়া থেমে যায়নি উল্লেখ করে আমদানি অনুমতি পাওয়া মীম এন্টারপ্রাইজের মালিক ইয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যবসায়ী হিসেবে আমাকে দেখতে হবে আমদানি করার পরে লোকসান হবে কি না। বর্তমান শুল্ককাঠামোয় ডিম দেশে নিয়ে এলে লোকসানের শঙ্কা আছে। সে জন্য শুল্ক কমানোর আবেদন করা হয়েছে। আমরা সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরুণ রায়, প্রতিনিধি (বেড়া), পাবনা]