Thank you for trying Sticky AMP!!

অর্থনৈতিক কার্যক্রমে নারীর অংশগ্রহণে পিছিয়ে বাংলাদেশ

নারী ও পুরুষের সমান অংশগ্রহণ থাকলে অর্থনীতির পূর্ণ বিকাশ হতে পারে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। অনেক দেশের সরকারও সেই গুরুত্ব বুঝতে পারছে। কিন্তু অনেক দেশেই এখনো নারীদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে আইনি বাধা আছে। বাংলাদেশেও আছে। অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান নিচের দিকে। 

বিশ্বব্যাংকের উইমেন, বিজনেস অ্যান্ড দ্য ল ২০২০ ইনডেক্স শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বাংলাদেশের উৎপাদন খাতে ক্লিনিং, লুব্রিকেটিং ও যন্ত্রাংশ সংযোজনের কাজে নারীদের অংশগ্রহণে আইনি বাধা আছে।

আটটি সূচকের আলোকে ৩৫টি প্রশ্নের ভিত্তিতে এই সূচক প্রণয়ন করা হয়েছে। মোট নম্বর ছিল ১০০। এই ১০০ নম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ৪৯ দশমিক ৪। পাকিস্তানের স্কোরও সমান। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো অবস্থান ভারতের—৭৪ দশমিক ৪। সূচকে তার পরেই ৭৩ দশমিক ৮ পয়েন্ট নিয়ে আছে মালদ্বীপ ও নেপাল।

বিশ্বব্যাংক অর্থনীতিতে নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। এর অংশ হিসেবে তারা যেমন বৈষম্যমূলক আইন দূরীকরণে সহায়তা করছে, তেমনি নারী-পুরুষবৈষম্য নিরসনে বিনিয়োগ, অর্থায়নের সমসুযোগ সৃষ্টি ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা দূরীকরণে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছে।

চলাচলের স্বাধীনতা, কর্মক্ষেত্রের সমতা, মজুরি, বিবাহ, পিতৃত্ব-মাতৃত্ব, উদ্যোগ, সম্পদ ও পেনশন—এই আটটি সূচকের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিটি সূচকের সর্বোচ্চ নম্বর ১০০। এরপর তা গড় করা হয়েছে। দেখা গেছে, চলাচলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নারীরা শতভাগ স্বাধীন। অর্থাৎ বাংলাদেশের নারীদের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ায় বাধা নেই। কর্মক্ষেত্রের সমতায় বাংলাদেশ পেয়েছে ৫০, মজুরির ক্ষেত্রে ২৫, বিবাহে ৬০, মাতৃত্বে ২০, উদ্যোগে ৭৫, সম্পদে ৪০ ও পেনশনে ২৫। সব মিলিয়ে গড় দাঁড়ায় ৪৯ দশমিক ৪।

বাংলাদেশের এই স্কোরের সঙ্গে দেশের বাস্তবতার মিল পাওয়া কঠিন কিছু নয়। নারীদের চলাচল দেশে অবাধ হলেও মজুরিতে বৈষম্য আছে—এ কথা বিশ্লেষকেরা অনেক দিন ধরেই বলে আসছেন। অন্যদিকে দেশের নারী শ্রমিকেরা/কর্মীরা মাতৃত্বজনিত কারণে বৈষম্যের শিকার হন, এমন অভিযোগও হরহামেশা পাওয়া যায়।

এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংকের ব্লগে নিবন্ধ লিখেছেন বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস। সেখানে তিনি বাংলাদেশের মাধ্যমিক স্কুলে মেয়েদের উপবৃত্তি ও প্রয়োজনীয় দক্ষতা শেখানোর প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, এসব কারণে বাংলাদেশের মাধ্যমিক স্কুলে ছেলেমেয়ের সংখ্যাগত বৈষম্য কমেছে। শুধু তা–ই নয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মেয়েরা যে ছেলেদের ছাড়িয়ে গেছে, তার কারণও এটি।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, পৃথিবীর আটটি দেশের অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ পুরোপুরি অবাধ। সেখানে নারীর অংশগ্রহণে আইনি বাধা নেই। এই দেশগুলো হলো বেলজিয়াম, ফ্রান্স, আইসল্যান্ড, লাটভিয়া, লুক্সেমবার্গ, সুইডেন ও কানাডা।

মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার নারীরা অর্থনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে আছেন। ২০১৭ সালে তাঁদের স্কোর ছিল ৪৪ দশমিক ৯, ২০১৯ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৬। অর্থাৎ এই অঞ্চলের নারীদের অর্থনীতিতে অংশগ্রহণের আইনি অধিকার পুরুষের স্রেফ অর্ধেক। আর বৈশ্বিক পরিসরে তা চার ভাগের তিন ভাগ—৭৫ শতাংশ।