Thank you for trying Sticky AMP!!

উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ হতে ১২ বছরে মাথাপিছু আয় দ্বিগুণের বেশি হতে হবে

উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে আগামী ১২ বছরে বাংলাদেশকে মাথাপিছু আয় দ্বিগুণেরও বেশি করতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ওই শ্রেণির দেশ হতে চায়। বর্তমানে ক্রয়ক্ষমতার সমতা অনুসারে (পিপিপি) বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২০১৮ সাল শেষে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৫০ মার্কিন ডলার। তিন বছর আগে বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এখন উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ হতে মাথাপিছু আয় কমপক্ষে ৩ হাজার ৯৯৬ মার্কিন ডলার হতে হবে। 

১ জুলাই বিশ্বব্যাংক মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশের সর্বশেষ অবস্থান প্রকাশ করেছে। বিশ্বব্যাংক নিজেদের সদস্যদেশগুলোকে মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে চার শ্রেণিতে ভাগ করে। এগুলো হলো নিম্ন, নিম্নমধ্যম, উচ্চমধ্যম ও উচ্চ আয়ের দেশ।  এর ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক ঋণের পরিমাণ ও শর্তসহ অন্যান্য সুবিধা নির্ধারণ করে। 

এবার শ্রীলঙ্কা নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ থেকে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় ঢুকেছে। শ্রীলঙ্কার এই উত্তরণে সময় লেগেছে ২০ বছর। ১৯৯৯ সালে শ্রীলঙ্কা নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হয়েছিল। বাংলাদেশ মাত্র ১৫ বছরে সেখানে যেতে চায়। ২০৩০ সালে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। 

অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, টানা ১০ বছর ধরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ হলে মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ করা সম্ভব। দ্বিগুণের বেশি করতে হলে বাংলাদেশকে ৯-১০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। এ জন্য বিনিয়োগ ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ অনেক বাড়াতে হবে। শুধু কলকারখানা, রাস্তাঘাটসহ ভৌত অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করলেই হবে না; দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে বিনিয়োগ লাগবে। কলকারখানা হলো, কিন্তু দক্ষ কর্মী না থাকলে লাভ হবে না। তাঁর মতে, মৌলিক স্বাস্থ্য ও গুণগত শিক্ষায় বিনিয়োগ না হলে দক্ষ মানবসম্পদ হবে না। উন্নয়ন হলেও সমাজে বৈষম্য বাড়বে। বৈষম্য থাকলে প্রবৃদ্ধি ৯-১০ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব নয়। 

অবশ্য গত কয়েক বছরে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বেশ গতি আছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, ২০১০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৮০০ ডলার ছিল। মাত্র আট বছরের মধ্যেই তা দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। অবশ্য বৈষম্য আগের চেয়ে বেড়েছে। 

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, এই যাত্রায় বাংলাদেশের দুটি চ্যালেঞ্জ আছে। এগুলো হলো সম্পদের সুষম বণ্টন ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা। মধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদে যাতে পড়তে না হয়, সে জন্য সরকার মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন হলে নির্ধারিত সময়ের আগেই উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে বাংলাদেশ। 

বিশ্বব্যাংকের মাথাপিছু আয়ের হিসাবের সঙ্গে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে কিছুটা পার্থক্য আছে। বিশ্বব্যাংক এটলাস পদ্ধতিতে মাথাপিছু আয় হিসাব করে থাকে। একটি দেশের স্থানীয় মুদ্রায় হিসাব করা মোট জাতীয় আয়কে প্রথমে মার্কিন ডলারে রূপান্তর করা হয়। এ ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারের আগের তিন বছরের গড় বিনিময় হারকে আমলে নেওয়া হয়।  উল্লেখ্য, বিবিএসের হিসাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯০৯ ডলার। 

বাংলাদেশ গত বছরই পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে। ভারতের কাছাকাছি আছে। তবে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও ভুটানের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। 

 বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় উচ্চ আয়ের দেশ নেই। এই অঞ্চলে মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা—দুটি দেশ এখন উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ। মাথাপিছু আয় মালদ্বীপে ৯ হাজার ৩১০ ডলার ও শ্রীলঙ্কায় ৪ হাজার ৬০ ডলার। নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় আছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও ভুটান। মাথাপিছু আয় ভুটানে ৩ হাজার ৮০ ডলার, ভারতে ২ হাজার ২০ ডলার ও পাকিস্তানে ১ হাজার ৫৮০ ডলার। আফগানিস্তান ও নেপাল এখনো নিম্ন আয়ের দেশের তালিকায় আছে।

 নতুন সীমা

চলতি বছরে বিশ্বব্যাংক কোন দেশ কোন শ্রেণিতে, তা নির্ধারণের জন্য নতুন সীমা নির্ধারণ করেছে। এখন থেকে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে মাথাপিছু আয় কমপক্ষে ১ হাজার ২৫ ডলার হতে হবে। নিম্নমধ্যম থেকে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে মাথাপিছু আয় কমপক্ষে ৩ হাজার ৯৯৬ ডলার হতে হবে। আর উচ্চ আয়ের দেশে যেতে হলে ১২ হাজার ৩৭৫ ডলার মাথাপিছু আয় হতে হবে। 

আর্জেন্টিনা নেমেছে, শ্রীলঙ্কা উঠেছে

এবার সাতটি দেশের অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে। আর্জেন্টিনা উচ্চ আয়ের দেশ থেকে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে নেমে গেছে। এক বছরের ব্যবধানে ৫৭০ ডলার কমে দেশটির মাথাপিছু আয় এখন ১২ হাজার ৬৭০ ডলার। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কা, জর্জিয়া ও কসোভো উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ হয়েছে। সেনেগাল, জিম্বাবুয়ে ও কমোরস নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হয়েছে।