Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনাভাইরাস: অর্থনৈতিক মহামারির রূপ নিচ্ছে

করোনাভাইরাসের মহামারি দীর্ঘমেয়াদি হলে চলতি বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খাবে। ছবি: রয়টার্স

চীনের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। চীনের বাইরে অন্তত দুটি বড় দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় এখন বৈশ্বিক অর্থনীতি নিয়েই শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ভাইরাসের প্রভাবে বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। কোম্পানির মুনাফা কমতে শুরু করেছে।

ব্যাপারটা হলো, এত দিন বিশ্লেষকেরা মনে করছিলেন যে চীন দ্রুতই পূর্ণ উৎপাদনে ফিরে যেতে পারবে। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়া ও ইতালির মতো দেশে করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় এটি যত না মহামারি অসুখ, তার চেয়ে বেশি অর্থনৈতিক মহামারির রূপ নিচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গাড়ি, ইলেকট্রনিকস পণ্য ও যন্ত্রাংশের বড় উৎপাদক দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৯০। ইতালিতে কয়েক দিন আগেও হাতে গোনা কিছু মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। কিন্তু এখন দেশটিতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ২৭০ এবং মারা গেছে অন্তত সাতজন। ফলে দেশটির সরকার শিল্পঘন উত্তরাঞ্চলের কিছু জায়গায় সরকারি ভবন, বিদ্যালয় ও খেলাধুলা বন্ধ করে দিয়েছে।

ওদিকে জাপানেও আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বের শীর্ষ ১২টি অর্থনীতির মধ্যে অন্তত ৪টি এখন এই ভাইরাস সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে জার্মানি রীতিমতো খাদের কিনারে। খাদ থেকে পড়লেই মন্দা।

বিভিন্ন দেশের সরকার ও ব্যবসায়িক নেতৃত্ব ভেবেছিল, চীন যে ব্যাপক ব্যবস্থা নিয়েছে, তাতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকানো যাবে। অন্যান্য দেশে তা ছড়িয়ে পড়বে না। নববর্ষের দীর্ঘায়িত ছুটির পর চীন ধীরে ধীরে কারখানা খুলতে পারলে দ্বিতীয় প্রান্তিক নাগাদ দেশটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে, এমনটাই আশা করেছিল সবাই।

>

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয় বৈশ্বিক আমদানি-রপ্তানির পথে বড় বাধা হতে পারে। চীনের মতো এত বড় অর্থনীতি ধাক্কা খেলে অন্যরাও আক্রান্ত হবে।

এ রকম হলে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার শূন্য দশমিক ১ শতাংশ কমবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। কিন্তু ভাইরাস যেভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে প্রবৃদ্ধি আরও কমবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত। সোমবার দক্ষিণ কোরিয়ার মূল শেয়ার সূচক ৩ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে, ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসের পর যা সর্বনিম্ন। ইতালির মূল সূচক কমেছে ৫ শতাংশের বেশি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডাও সূচক কমেছে ১ হাজার ৩১ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।

সোমবার বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারের পতন হলো। এর ধাক্কায় গতকাল ভারতের বাজারও পড়ে যায়। দেশটির মূল সূচকের মধ্যে সেনসেক্স পড়ল এক ধাক্কায় ৮০৬ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট, নিফটি পড়ল ২৫১ দশমিক ৪৫। সূচক দুটি থেমেছে যথাক্রমে ৪০ হাজার ৩৬৩ দশমিক ২৩ ও ১১ হাজার ৮২৯ দশমিক ৪০ পয়েন্টে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয় যে বৈশ্বিক আমদানি-রপ্তানির পথে বড় বাধা হতে পারে, তা পরিষ্কার। তার ওপর চীনের মতো এত বড় অর্থনীতি ধাক্কা খেলে তার প্রভাব অন্যদের ওপরও পড়বে। সেই ঝাপটা থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোও রক্ষা পাবে না। বিশেষ করে যেসব দেশের অবস্থা এমনিতেই খারাপ, তাদের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে বলেই সবার আশঙ্কা। তাই মহামারি দীর্ঘমেয়াদি হলে এ বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খাবে।