Thank you for trying Sticky AMP!!

কে বলবে বেকারত্বের হার কত

দুই বছর পরপর শ্রমশক্তি জরিপ হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। ফলে বেকারত্বের হার কত, তা জানা যাচ্ছে না।

করোনার কারণে বহু প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই করেছে, অর্থাৎ অনেক মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এতে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে। আবার চাকরি থাকলেও অনেকের বেতন কমেছে। দুটো মিলিয়ে দেশের বিপুল মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছেন। কিন্তু সেই সংখ্যাটা কত?

বেসরকারি একাধিক গবেষণা সংস্থার জরিপ-গবেষণার সুবাদে এ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা মিললেও সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো তথ্য জানা যায়নি। কবে নাগাদ সরকারিভাবে বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানের তথ্য মিলবে, তা-ও অজানা।

সাধারণত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপের মাধ্যমে বেকারের সংখ্যা উঠে আসে। কিন্তু পাঁচ বছর ধরে দেশে এই জরিপ হয়নি। সর্বশেষ ২০১৬ সালে শ্রমশক্তি জরিপ হয়েছিল। সেটির ফল প্রকাশ করা হয় এক বছর পর, ২০১৭ সালে। অথচ মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশে প্রতি দুই বছর পরপর বিবিএসের এই জরিপ করার কথা।

বিবিএসে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, শ্রমশক্তি জরিপের চেয়ে কৃষিশুমারি ও জনশুমারির দিকেই আগ্রহ বেশি সংস্থাটির। অবশ্য শ্রমশক্তি জরিপ করতে নতুন একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে প্রথম আলোকে জানান বিবিএসের মহাপরিচালক (ডিজি) তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রাথমিক কাজ শিগগিরই শুরু হবে। বাজেটে টাকা পাওয়া যায়নি বলে জরিপের কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের অনেক দেশই প্রতিমাসে বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানের সঙ্গে সম্পৃক্ত জনগোষ্ঠীর হার প্রকাশ করে থাকে। এমনকি প্রতিবেশী নেপাল ও পাকিস্তানের মতো দেশও শ্রমবাজার নিয়ে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে এ রকম জরিপের ফল প্রকাশ করে।

বিবিএসের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, শ্রমশক্তি জরিপের আওতায় ১৭ ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দেশে মোট শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার, জনসংখ্যার তুলনায় কর্মসংস্থানের অনুপাত, কর্মসংস্থানের হার, কোন খাতে কত শ্রমিক কাজ করে, কত ঘণ্টা কাজ করতে হয়, খণ্ডকালীন শ্রমিকের সংখ্যা, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে শ্রমিকের সংখ্যা, যুব শ্রমশক্তির হার, দীর্ঘমেয়াদি বেকারের হার, নিরক্ষরতার হার, মাসিক মজুরি, শ্রমিক উৎপাদনশীলতা ও সার্বিক বেকারত্বের হার।

সর্বশেষ ২০১৬ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ছিল ৬ কোটি ৩৫ লাখ। তাঁদের মধ্যে কাজ করেন ৬ কোটি ৮ লাখ নারী-পুরুষ। বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ। কিন্তু করোনার কারণে দেশে যে বেকারের সংখ্যা অনেক বেড়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সেই সংখ্যা কত, এমন হিসাব নেই সরকারের কাছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) অবশ্য একটি জরিপ করে বলেছে, করোনার প্রভাবে দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার (আপার পোভার্টি রেট) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশ। দেশব্যাপী খানা পর্যায়ের জরিপের ভিত্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

আরেক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জানিয়েছে, করোনার কারণে আয় কমে যাওয়ায় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে সার্বিকভাবে দারিদ্র্যের হার ৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

* এর আগে শ্রমশক্তি জরিপ হয়েছিল ২০১৬ সালে। * পাঁচ বছর আগের জরিপে দেশে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ। * সরকার নিজেও বেকারত্বের তথ্য দিচ্ছে না, বেসরকারি সংস্থার তথ্যও পছন্দ করছে না।

বিবিএসের মহাপরিচালক তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, দেশে দারিদ্র্যের হার কত, তা জানতে বিবিএস একটি উদ্যোগ নিয়েছে। ৯ থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর দৈবচয়নের ভিত্তিতে জরিপটি করা হবে। এর মাধ্যমে জানা যাবে, দেশে এখন দারিদ্র্যের হার কত। তবে বিবিএসের এই জরিপের সঙ্গে শ্রমশক্তি জরিপের কোনো সম্পর্ক নেই।

বিবিএসের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, নতুন শ্রমশক্তি জরিপ করতে ব্যয় হবে ১৫ কোটি টাকা। চার বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালে। জানতে চাইলে প্রকল্পটির পরিচালক আজিজা রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নতুন শ্রমশক্তি জরিপের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। মূল জরিপের কাজ শুরু হবে আগামী বছর।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পুরো বছর (২০২২ সাল) ধরে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। জরিপের ফল পেতে অপেক্ষা করতে হবে ২০২৩ সাল পর্যন্ত। তবে এই সময় নিয়েও আছে অনিশ্চয়তা।

পাঁচ বছর আগের শ্রমশক্তি জরিপে দেখা গেছে, দেশে স্নাতক পাস বেকারের হার ৩৯ শতাংশ। দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়ে কত শতাংশ হয়েছে, তার কোনো তথ্য সরকারের হাতে নেই। শ্রমশক্তি জরিপের মাধ্যমে এসব তথ্য পাওয়ার কথা।

বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, একটি দেশের অর্থনীতি কোথায় আছে এবং কোন পথে যাচ্ছে, তা জানতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি ও কর্মসংস্থানের সূচক দেখতে হয়। দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির তথ্য পাওয়া গেলেও কয়েক বছর ধরে কর্মসংস্থান ও বেকারত্বের হার জানা যাচ্ছে না।

জাহিদ হোসেন আরও বলেন, একাধিক গবেষণা সংস্থা এ নিয়ে তথ্য দিলেও তা সরকারের পছন্দ হচ্ছে না। আবার সরকার নিজেও কর্মসংস্থান ও বেকারত্বের তথ্য দিচ্ছে না। কর্মসংস্থানের তথ্য না থাকলে সরকার অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অগ্রগতি মূল্যায়ন করবে কীভাবে?