Thank you for trying Sticky AMP!!

ক্রেতাদের সবাই এখন খরচ কমাতে শুরু করেছে

কাজী বেলায়েত হোসেন, সভাপতি, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন
>

দেশের হিমায়িত চিংড়ির রপ্তানি পাঁচ অর্থবছর ধরে কমছে। চিংড়ি রপ্তানিতে গতি ফেরাতে ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে উচ্চফলনশীল জাত ভেনামি চাষের অনুমতি দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। তবে সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সফল হলেও বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত শুরু করতে পাঁচ বছর লাগবে। এসব বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী বেলায়েত হোসেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শুভংকর কর্মকার।

প্রথম আলো: চিংড়ি রপ্তানি পাঁচ বছর ধরে নিম্নমুখী। সর্বশেষ অর্থবছরে ৪০ কোটি ডলারের চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে সাড়ে ১১ শতাংশ কম। চিংড়ি খাতের এই দুরবস্থার কারণ কী?

কাজী বেলায়েত হোসেন: বর্তমানে আমরা প্রতিকূল পরিবেশে ব্যবসা করছি। কারণ, আমাদের চিংড়ির উৎপাদন খরচ বেশি। অথচ ক্রেতারা সবাই মিলে খরচ কমানো শুরু করেছে। ইতিমধ্যে তারা চিংড়ির হাইব্রিড জাত ভেনামিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। ভেনামি দামে খুব সস্তা। সে জন্য আমাদের চিংড়ির চাহিদা কমে গেছে। বিষয়টা এ রকম, একসময় আমাদের দেশে ফার্মের মুরগি কেউ খেতেন না। তবে দামে সস্তা হওয়ার কারণে সবাই ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। বর্তমানে ভেনামির চেয়ে বাগদা চিংড়ির দাম পাউন্ডপ্রতি ২ ডলার বেশি। যে কারণে ক্রেতাদের চাহিদা কমেছে এবং হিমায়িত চিংড়ির রপ্তানি কমে গেছে। এ ছাড়া চিংড়ি উৎপাদন কমে যাওয়ায় তা রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অনেক দিন ধরে আমরা বাজার ধরে রাখতে ভেনামি চাষের কথা বললেও এত দিন অনুমতি পায়নি। বর্তমানে বিশ্বের ৬৭টি দেশ ভেনামি চিংড়ি চাষ করছে। বিশ্বের মোট চিংড়ি রপ্তানির ৭৭ শতাংশই এখন ভেনামির দখলে। আর বাগদা চিংড়ির হিস্যা মাত্র ১১ শতাংশ। আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারত ও ভিয়েতনাম বাগদা চিংড়ির পাশাপাশি ভেনামি চিংড়ি চাষ করে উৎপাদন ও রপ্তানিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে।

প্রথম আলো: মৎস্য অধিদপ্তর তো পরীক্ষামূলক ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দিয়েছে। এতে করে কি অবস্থার পরিবর্তন হবে?

কাজী বেলায়েত হোসেন: ২০ বছর ধরে চেষ্টা–তদবির করেও মৎস্য অধিদপ্তরের অনুমতি পাইনি। অবশেষে তারা পরীক্ষামূলক ভেনামি চাষের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাওয়ার পর তাদের বোধোদয় হয়েছে। তবে যে প্রক্রিয়ায় অনুমতি দিয়েছে, সেটি সঠিক হয়নি। অধিদপ্তর শুধু রপ্তানিকারকদের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু রপ্তানিকারকদের চাষের অভিজ্ঞতা নেই। বিদেশ থেকে পোনা থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ আনতে হবে ব্যবসায়ীদের। অথচ কাজগুলো সহজেই করতে পারত মৎস্য অধিদপ্তর। তারা সেটি না করে রপ্তানিকারকদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে। আবার অনুমতি দিয়েছে এক বছরের। এই সময়ের মধ্যে পরীক্ষামূলক চাষ সফল না–ও হতে পারে। অনেক ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগ করতে হবে ব্যবসায়ীদের।

প্রথম আলো: ভেনামি চাষ সফল হলে কি হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি বাড়বে?

কাজী বেলায়েত হোসেন: ভেনামির পরীক্ষামূলক চাষ সফল হলেও বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে তা বাজারজাত করতে কমপক্ষে পাঁচ বছর লাগবে। 

প্রথম আলো: তাহলে কি হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি আরও পাঁচ বছর ধুঁকবে?

কাজী বেলায়েত হোসেন: কার্যকর উদ্যোগ নিলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি সম্ভব। যেমন বাগদা, গলদা চিংড়ির পাশাপাশি বিলুপ্তপ্রায় হরিণা ও চাকা চিংড়ির উৎপাদনে সচেষ্ট হতে হবে। আমাদের বাগদা চিংড়ির অধিকাংশই সনাতন পদ্ধতিতে চাষ হয়। কিন্তু সেমি ইনটেনসিভ পদ্ধতিতে চাষ করতে পারলে উৎপাদন বাড়বে। এক হেক্টর জমিতে সেমি ইনটেনসিভ পদ্ধতিতে চাষ করলে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার কেজি চিংড়ি উৎপাদিত হয়। যেখানে সনাতন পদ্ধতিতে হয় মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি। এই সেমি ইনটেনসিভ পদ্ধতিতে উৎপাদন খরচ তুলনামূলক বেশি। সে জন্য চিংড়িচাষিদের স্বল্প সুদে ও ন্যূনতম জামানতে ব্যাংকঋণ দিতে হবে। এ ছাড়া চিংড়ি চাষে প্রায়ই মড়ক লেগে ব্যাপক ক্ষতি হয়। তাই চাষিদের সুরক্ষা দিতে চিংড়ি চাষকে বিমার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

প্রথম আলো: সাধারণ প্রক্রিয়া শেষেই আমাদের রপ্তানিকারকেরা চিংড়ি রপ্তানি করেন। তবে সেখানেও মূল্য সংযোজনের দিকে যাচ্ছে না কেউ। বিষয়টি নিয়ে আপনারা কী ভাবছেন?

কাজী বেলায়েত হোসেন: আমরা মূল্য সংযোজন পণ্য অনেক আগে থেকেই শুরু করেছি। তবে আমাদের প্রতিযোগী দেশসমূহ অধিক মূল্য সংযোজন পণ্য উৎপাদন করছে, যা জনপ্রিয় ও অধিক মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।

প্রথম আলো: চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত করার কারখানার সংখ্যা এক শর ওপরে। তবে বেশির ভাগই বন্ধ। রপ্তানি করছেন মাত্র ২০-৩০ জন ব্যবসায়ী। কারণ কী?

কাজী বেলায়েত হোসেন: মূল কারণ কাঁচামালের অভাব। কারখানাগুলো চাহিদার তুলনায় কাঁচামাল সরবরাহ পায় মাত্র ১৫-২০ শতাংশ। সে জন্য
খরচ পোষাতে না পেরে কারখানাগুলো দিন দিন রুগ্‌ণ হয়ে গেছে।

প্রথম আলো: চিংড়ি রপ্তানি বৃদ্ধিতে সরকারের তরফ থেকে কী করা দরকার?

কাজী বেলায়েত হোসেন: সরকারের পক্ষ থেকে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গবেষণার ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। বাগদা, গলদা চিংড়ির পাশাপাশি বিলুপ্তপ্রায় হরিণা ও চাকা চিংড়ি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মৎস্য অধিদপ্তরের আরও অনেক আগে থেকেই কাজ শুরু করা দরকার ছিল। তা ছাড়া ভেনামি চিংড়ি ও নতুন আরও কোনো সম্ভাবনাময় জাত উৎপাদনের গবেষণা করা প্রয়োজন। চিংড়ি রপ্তানি খাতটি বাংলাদেশের জন্য খুবই সম্ভাবনাময়। অন্যান্য দেশের মতো উৎপাদন বৃদ্ধি হলে এই খাতের রপ্তানি আয় চার থেকে পাঁচ গুণ বাড়ানো সম্ভব।