Thank you for trying Sticky AMP!!

গ্রাহকের টাকা ফেরাতে রাষ্ট্র কমিশন গঠন করতে পারে

আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান

প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) গ্রেপ্তারের পর গতকাল রোববার তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। পি কে হালদারের পাচার করা সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে গতকাল কথা বলেছেন বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সাবেক প্রধান
আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সানাউল্লাহ সাকিব

প্রশ্ন

প্রথম আলো: ভারতে আটক পি কে হালদারকে দেশে ফেরানোর জন্য কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন?

আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান: যে দেশে আটক হয়েছেন, সেই দেশের আইন অনুযায়ী তাঁর বিচার হবে। এরপরও যদি অন্য কোনো দেশে তাঁর কোনো অপরাধ থাকে, তাহলে তাঁকে ফিরিয়ে আনা যায়। যেহেতু পি কে হালদার বাংলাদেশি ও এ দেশে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত, তাই বাংলাদেশও চাইবে তাঁকে ফিরিয়ে আনতে। রাষ্ট্রীয় আইনে আছে কীভাবে ফেরত আনা যায়। এর আগেও আনা হয়েছে। সেভাবেই তাঁকে ফেরত আনা যাবে। এ জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ লাগবে।

প্রশ্ন

ভারত, কানাডা, সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশে পি কে হালদার অর্থ পাচার করেছেন বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে এসেছে। এসব টাকা ফেরানোর জন্য কী করা প্রয়োজন?

রাজী হাসান: প্রতিটি দেশের অধিকার আছে তার টাকা ফেরত আনার। এ জন্য সব দেশে আইন আছে। আমরাও এর আগে টাকা ফেরত পেয়েছি। এখনো অনেক দেশ টাকা ফেরত পাচ্ছে। তবে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা সময়সাপেক্ষ। সাধারণত পাচার হওয়া অর্থ দেশে আনতে ৫-৩০ বছর সময় লেগে যায়। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সহায়তা ছাড়া টাকা ফেরত আনা যায় না। অনেক দেশ বছরের পর বছর চেষ্টা করে যাচ্ছে, তবে টাকা ফেরত পাচ্ছে না। কারণ, একেক দেশের আইন একেক রকম।

প্রশ্ন

আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুটের টাকায় পি কে হালদার দেশে যে সম্পদ গড়েছেন, তা বিক্রি করে কি গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব। এ জন্য কত দিন লাগবে?

রাজী হাসান: দেশে যে আইন আছে, তা দিয়ে এসব বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব। এ জন্য যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। সব সংস্থা মিলে উদ্যোগ নিলে দ্রুতই সমাধান করা যাবে। তবে প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়ায় একটু সময় লাগবেই।

প্রশ্ন

পি কে হালদার বেনামে আর্থিক প্রতিষ্ঠান দখল করে লুট করেছেন। আবার বেনামে সম্পদ গড়েছেন। ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীরা জমা টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। এ জন্য কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে?

রাজী হাসান: আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আইন অনুযায়ী এসব টাকা ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করবে। প্রতিষ্ঠানগুলো সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে। আইনের হাত অনেক লম্বা। নিশ্চয়ই রাষ্ট্র আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। অবস্থা বিবেচনায় বিশেষ কমিশন, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারে। কারণ, এটা দেশের বড় আর্থিক কেলেঙ্কারিগুলোর একটি। এ জন্য গ্রাহকের টাকা ফেরাতে কমিশন গঠনের বিষয়টি রাষ্ট্র ভেবে দেখতে পারে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কাজ আমানতকারীদের স্বার্থ দেখা।

প্রশ্ন

চোখের সামনে চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান দখল হয়ে গেল। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন সাবেক ডেপুটি গভর্নর, একজন নির্বাহী পরিচালক ও চার কর্মকর্তা দুদকের মুখোমুখি হয়েছেন। ওই সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা কী ছিল?

রাজী হাসান: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব ছিল বিষয়টি দেখার। অনেক সময় এমন হয়, অপরাধীরা সময়ে–সময়ে ভিন্নরূপে অপরাধ করে থাকেন। ফলে বুঝে উঠতেও সময় লাগে। এটা শুধু আমাদের দেশে নয়, সব দেশের এমন অভিজ্ঞতা আছে। এ জন্য সময়ে–সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও কৌশল পরিবর্তন করে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি বুঝে ওঠার পর অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। বিষয়গুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানিয়েছে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: পি কে হালদারের অপরাধের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারণ, গ্রাহকেরা টাকা ফেরত পাচ্ছেন না।

রাজী হাসান: কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিশ্চয়ই তার অবস্থান পরিষ্কার করবে। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা কী ছিল, তা–ও নিশ্চয়ই জানা যাবে। কোন পরিস্থিতিতে এই ঘটনা ঘটেছে, তখন নিশ্চয়ই সব পরিষ্কার হবে।