Thank you for trying Sticky AMP!!

চামড়ার দাম নিয়ে কারসাজিতে ট্যানারির মালিকদের হাত নেই

শাহীন আহমেদ
কোরবানির পশুর চামড়ার দামে ব্যাপক ধস নেমেছে। কেন ধস নামল এবং বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে করণীয় বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদ এবং বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল কাদের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শুভংকর কর্মকারসুজন ঘোষ


প্রথম আলো: কোরবানির চামড়ার দামে ভয়াবহ ধস নেমেছে। দাম কমানোর এই কারসাজির জন্য কারা দায়ী? 

শাহীন আহমেদ: কারসাজির পেছনে ট্যানারির মালিকদের কোনো হাত নেই। কাঁচা চামড়ার ব্যবসা করেন আড়তদার, ব্যাপারী ও মহাজনেরা। তাঁরা একজোট হয়ে প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের ঠকিয়েছেন। তাঁরা স্বীকারও করেছেন, চামড়ার দাম কমানোর বিষয়টি তাঁদের একধরনের বিজনেস পলিসি (ব্যবসায়িক নীতি)। ফলে এটি একটি কারসাজি। আমাদের যেহেতু লোকবল নেই, তাই আমরা কাঁচা চামড়ার বাজারে হস্তক্ষেপ করতে পারি না। সাধারণত ঈদের ১০-১৫ দিন পর থেকে আমরা লবণযুক্ত চামড়াই কিনে থাকি। 

প্রথম আলো: ট্যানারির মালিকেরাই কাঁচা চামড়ার মূল ক্রেতা। কিন্তু ট্যানারির মালিকেরা বকেয়া পরিশোধ না করার কারণে বিপর্যয় হয়েছে, এমন অভিযোগ করেছেন আড়তদারেরা। আপনারা ট্যানারির মালিকেরা কীভাবে দায় এড়াবেন?

শাহীন আহমেদ: ট্যানারির মালিকেরা পুঁজিসংকটে ভুগছেন। সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়াশিল্প নগরে আমরা ছয় হাজার কোটি থেকে সাত হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। কিন্তু সেখানকার জমির মালিকানা আমরা এখন পর্যন্ত বুঝে পাইনি। বিসিক সেটি করে দেয়নি। সে জন্য আমরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারছি না। তা ছাড়া ২০১৭ সালে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে হেমায়েতপুরে যাওয়ার পর থেকেই চামড়া রপ্তানির ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে। শিল্পনগরের কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। সেখানকার কর্মপরিবেশ উন্নত না হওয়ার জন্য ইউরোপের ক্রেতারা আমাদের চামড়া কিনছে না। চীনের ক্রেতারা চামড়া কিনলেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে সেটিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সব মিলিয়ে চামড়ার ব্যবসা অস্থিরতার মধ্যে আছে। 

প্রথম আলো: আড়তদারদের বকেয়া পরিশোধ না করার বিষয়ে কী বলবেন?

শাহীন আহমেদ: কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচায় ১৫০০-২০০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। আড়তদারেরা ট্যানারির মালিকদের কাছে পান মাত্র ৩০০-৩৫০ কোটি টাকা। আসল কথা হচ্ছে, বড় আড়তদারেরা ব্যাপারীদের টাকায় ব্যবসা করেন। তাঁরা ব্যাপারীদের টাকা দেন না। এটি সবচেয়ে বড় সমস্যা। 

প্রথম আলো: হেমায়েতপুরের শিল্পনগরের দুরবস্থা, চামড়া রপ্তানিতে ধস ও ট্যানারির মালিকদের পুঁজির সংকট গতবারও ছিল। এরপরও গতবারের অর্ধেক দামে চামড়া বিক্রি হওয়ার কারণ কী বলে আপনার মনে হয়।

শাহীন আহমেদ: ট্যানারিতে গতবারের কোরবানির পশুর চামড়ার ৪০ শতাংশ মজুত রয়ে গেছে। রপ্তানির পাশাপাশি বৈশ্বিক বাজারে চামড়ার দামও কমে গেছে। ফলে এবার কাঁচা চামড়ার চাহিদা একটু কম ছিল। আবার ঈদের দিন দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার কারণে সারা দেশে নেতিবাচক বার্তা গেছে। তা ছাড়া প্রতিবছরই মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কয়েক শ কোটি টাকা লগ্নি করেন। কিন্তু গত দুই বছর লোকসান করার কারণে মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও এবার মাঠে কম নেমেছেন। চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ার পেছনে এটিও একটি বড় কারণ। 

প্রথম আলো: আড়তদারদের কম দামে চামড়া কেনার সুবিধাটি তো আপনারাও পাবেন। আপনারাও কম দামে কিনবেন ...

শাহীন আহমেদ: প্রশ্নই আসে না। ধরেন, আড়তদার একেকটি চামড়া কিনেছে ৫০০ টাকায়। লবণ ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ খরচ ২০০ টাকা। সেই আড়তদার চামড়াটি আমাদের কাছে কমপক্ষে ১৪০০-১৫০০ টাকায় বিক্রি করবে।

প্রথম আলো: ঈদের আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিল। কিন্তু চামড়া বেচাকেনার সময় দেখা গেল ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত দামের ধারেকাছেও গেলেন না। সরকারের তরফ থেকে নজরদারি করা হলে কি বিপর্যয় এড়ানো যেত? 

শাহীন আহমেদ: কোরবানির পশুর চামড়ার বাজারটি সরকার নজরদারি করতে পারত। নজরদারি না থাকার কারণে বাজার অস্থিতিশীল হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে আমরা যদি একটি মনিটরিং টিম গঠন করতে পারতাম, তাহলে হয়তো চামড়ার বাজারে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। 

প্রথম আলো: ন্যূনতম দাম না পেয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সড়কে চামড়া ফেলে দেওয়া ও মাটিতে পুঁতে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। তাতে কত চামড়া নষ্ট হতে পারে? 

শাহীন আহমেদ: সড়কে ফেলে ও মাটিতে পুঁতে দেওয়ার কারণে গরুর চামড়া ১০-১৫ শতাংশ নষ্ট হয়েছে। আবার সময়মতো লবণ না দেওয়ার কারণে ২০ শতাংশের মতো চামড়া নষ্ট হবে। অন্যদিকে দাম না থাকায় ছাগলের ৮০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ চামড়া নষ্ট হওয়াটা দেশের জন্য বিরাট ক্ষতির।

প্রথম আলো: বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি সামাল দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাঁচা চামড়া এবং ওয়েট ব্লু রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেটি হলে অবস্থার উন্নতি হবে?

শাহীন আহমেদ: কাঁচা চামড়া রপ্তানি হলে পাটশিল্পের মতো চামড়াশিল্পও ধ্বংসের পথে চলে যাবে। সাভারের চামড়াশিল্প নগর কাঁচা চামড়ার অভাবে অকেজো
হয়ে পড়বে।

প্রথম আলো: শিল্প কেন ধ্বংস হবে? আপনারাই বা ন্যায্য দামে চামড়া কিনছেন না কেন?

শাহীন আহমেদ: মাথাব্যথা হলে আপনি কি মাথা কেটে ফেলবেন? কাঁচা চামড়া রপ্তানির বিষয়টি অনেকটা মাথা কাটার মতো। রপ্তানির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে দেশীয় শিল্প হুমকির মুখে পড়বে। ট্যানারি শিল্প কোনোভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। ফলে অসংখ্য শ্রমিক চাকরি হারাবেন।