Thank you for trying Sticky AMP!!

চামড়া খাতকে আইসিইউতে ঠেলে দিয়েছে করোনা

হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরের পরিকল্পিত চামড়া শিল্পনগরে ট্যানারি স্থানান্তরের পর থেকেই চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে ধস নামে। করোনাকালে সেই সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। এদিকে নতুন বছর চলে এসেছে। চামড়া খাতের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন। অনুলিখন করেছেন শুভংকর কর্মকার

মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন

চামড়া খাতের জন্য করোনাভাইরাস মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে। অবশ্য ২০১৬ সালে হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে ট্যানারি স্থানান্তরের পর থেকেই আমরা ‘করোনা’য় আক্রান্ত বলা যায়। কারণ পরিকল্পিত চামড়া শিল্পনগরে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার বা সিইটিপি কার্যকরভাবে চালু না হওয়ায় তখন থেকেই ব্যবসায় নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হওয়া শুরু হয়। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি কমার সেই প্রবণতা এখনো চলছে।

চামড়া খাতকে আইসিইউতে ঠেলে দিয়েছে করোনা। আইসিইউতে থাকা একজন রোগী যেমন প্রয়োজনীয় সেবা না পেলে বেঁচে ফিরতে পারে না, তেমনি সহায়তা না পেলে রপ্তানি আয়ের এই তৃতীয় শীর্ষ খাতটি পরপারে চলে যেতে পারে।
বিএফএলএলএফইএর চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন

গত পাঁচ বছরে চামড়াশিল্পের ওপর অনেক ঝড়ঝাপটা গেছে। হেমায়েতপুরে কার্যকর সিইটিপি চালু না করতে পারায় উন্নত কর্মপরিবেশ বা কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত হচ্ছে না। তাতে পুরো খাতটি কচ্ছপ গতিতে এগোচ্ছে। চামড়া খাত ঘিরে যে প্রত্যাশা ছিল, তার ধারেকাছে পৌঁছানো যায়নি। এর মধ্যে মহামারি করোনাভাইরাস আসায় পরিস্থিতি জটিল হয়েছে।

বর্তমানে ব্যবসার অবস্থা এতটাই খারাপ যে বলা যায়, চামড়া খাতকে আইসিইউতে ঠেলে দিয়েছে করোনা। আইসিইউতে থাকা একজন রোগী যেমন প্রয়োজনীয় সেবা না পেলে বেঁচে ফিরতে পারে না, তেমনি সহায়তা না পেলে রপ্তানি আয়ের এই তৃতীয় শীর্ষ খাতটি পরপারে চলে যেতে পারে।

করোনাকালে সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে উদ্যোক্তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছে। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সীমাবদ্ধতা ও ধীর গতি রয়েছে। সে কারণে চামড়া খাতের ৯৮ শতাংশ উদ্যোক্তাই প্রণোদনা তহবিল থেকে কোনো ধরনের ঋণ সহায়তা পাননি। আবার তহবিল থেকে ঋণ দেওয়ার জন্য যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে, তা পূর্ণ করা অধিকাংশ উদ্যোক্তার পক্ষেই সম্ভব নয়।

শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম, নতুন করে সম্পত্তি বন্ধক দেওয়া হলে ঋণ দেওয়া হবে। অথচ সেটি যে আমরা পারব না, সেটি সবাই জানেন। কারণ হাজারীবাগের আমাদের জায়গা অবমুক্ত করা হয়নি। আমরা দাবি করেছিলাম, চার বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় হাজারীবাগের জমির ওপর ‘রেড জোন’ তুলে নেওয়া হোক। তাহলে কিছু জমি বেচাবিক্রি করে আমরা আমাদের তারল্য সংকট মোকাবিলা করতে পারতাম। এটা হয়ে ওঠেনি। আমরা চিৎকার করতে করতে গলা ফাটালেও কোনো কাজ হয়নি। আমাদের আরেকটি দাবি ছিল, চামড়া খাতের উদ্যোক্তাদের ব্যাংকঋণ পরিশোধে দীর্ঘমেয়াদি কিস্তি সুবিধা দেওয়া। সেটি হলে উদ্যোক্তাদের ওপর চাপ কমত, ব্যাংকের টাকাও পরিশোধ হয়ে যেত। বরাবার বলার পরও কাজটি হয়নি।

চামড়া পণ্য মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে পড়ে না। তা ছাড়া দুনিয়াজুড়ে অনেক মানুষ চাকরি হারিয়েছে। ঘরের ভেতরে থাকার কারণে জুতার তলাও কম ক্ষয় হচ্ছে। তাই করোনাকালে স্বাভাবিকভাবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে।

তবে বন্যার পর যেমন ভালো ফসল হয়, তেমনি দুর্যোগের পর ভালো কিছুর প্রত্যাশায় কঠোর পরিশ্রম করে মানুষ। তখন ব্যবসা আবার বাড়ে। করোনার টিকা চলে এসেছে। আশা করছি, চলতি বছর চামড়া খাত আবার রানওয়েতে ফিরে যাবে। তার পরের বছর টেকঅফ করবে। তবে রানওয়েতে যাওয়ার জন্য উদ্যোক্তাদের নীতিসহায়তা দিতে হবে। চামড়া শিল্পনগরের সিইটিপির কাজ যথাযথভাবে শেষ করতে হবে, যাতে এলডব্লিউজি সনদ পাওয়ার জন্য আমরা আবেদন করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারি।

আমরা শুনছি, সরকার নতুন করে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করবে। আমাদের অনুরোধ থাকবে যার যতটুকু প্রয়োজন তাকে ততটুকু সহায়তা করুন। যার ১০০ কোটি দরকার, তাকে ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিলে নিঃসন্দেহে বদহজম হবে। সারা বছরে রপ্তানি চামড়া খাতের রপ্তানি আয় ৮ হাজার কোটি টাকার মতো। এক বা দুই প্রতিষ্ঠানকে যদি ৪ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়, তাহলে সেটি কোনো শিষ্টাচারের মধ্যে পড়বে না। এমনটি হলে চামড়া খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।

প্রসঙ্গত, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় তার আগের বছরের চেয়ে ২১ দশমিক ৭৯ শতাংশ কম। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস (জুলাই-নভেম্বর) ৩৫ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ৩২ শতাংশ কম।