Thank you for trying Sticky AMP!!

চীন, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে তুলনীয় বাংলাদেশ: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল

গত সপ্তাহে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের সুপারিশ করেছে। এই ঘটনাকে বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে প্রভাবশালী মার্কিন পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও ভিয়েতনামের উন্নয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের মিল আছে।

স্বাধীনতার পর প্রায় ৫০ বছর বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশগুলোর এই উপগ্রুপে ছিল। এই উত্তরণর ফলে বাংলাদেশ অবশ্য কিছু অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যসুবিধা হারাবে।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও ভিয়েতনামের উন্নয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের যে তুলনা দেওয়া হয়েছে, তার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এই দেশগুলোও রপ্তানিভিত্তিক উন্নয়নের পথে হেঁটে আজ এত দূর গিয়েছে। আধুনিক ইতিহাসে দেখা গেছে, রপ্তানিমুখী উন্নয়নের বদৌলতে অতি নিম্ন আয়ের দেশও মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারে। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার সফল অর্থনীতি হিসেবেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

গত এক দশকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় মার্কিন ডলারের নিরিখে ৮০ শতাংশ বেড়েছে। বলা বাহুল্য, তৈরি পোশাক খাতের হাত ধরেই এটা ঘটেছে। অথচ এই সময়ে ভারত ও পাকিস্তানের রপ্তানি কিছুটা কমেছে।

২০১১ সালেও বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ভারতের তুলনায় ৪০ শতাংশ কম ছিল। ২০২০ সালে বাংলাদেশ ভারতকে ছাড়িয়ে যায়। ভারতে মহামারিজনিত অর্থনৈতিক সংকোচনের কারণে এমনটি ঘটেছে, যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) মনে করছে, এই ব্যবধান কিছুদিন থাকবে।

Also Read: এলডিসি থেকে উত্তরণের সুপারিশ পেল বাংলাদেশ

একসময় বাংলাদেশকে উচ্চমূল্যেও রপ্তানিপণ্য উৎপাদন করতে হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানি আয় এখন অতিমাত্রায় তৈরি পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল।

বাংলাদেশের উন্নয়নের পেছনে আরও কিছু কারণ আছে বলে মনে করছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। সেগুলো হলো সংখ্যাগরিষ্ঠ তরুণ জনগোষ্ঠী, প্রতিযোগিতামূলক মজুরি, শক্তিশালী ও ক্রমবর্ধমান নারী শ্রমশক্তি—দক্ষিণ এশিয়ায় এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অন্যদের তুলনায় এগিয়ে। তবে উন্নয়নের এই পথ বন্ধুর বলে মনে করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। বলা হয়েছে, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার তুলনায় বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কম। এই দুটি দেশের রপ্তানি গত ১০ বছরে যথাক্রমে তিন গুণ ও দ্বিগুণ হয়েছে। এ ছাড়া ভারতের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, ২০০০-এর দশকের প্রথমভাগে ভারতের রপ্তানি অনেক বাড়লেও একপর্যায়ে স্থবির হয়ে যায়।

একসময় বাংলাদেশকে উচ্চমূল্যেও রপ্তানিপণ্য উৎপাদন করতে হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানি আয় এখন অতিমাত্রায় তৈরি পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোনমিক কমপ্লেক্সিটি বা উৎপাদন সক্ষমতার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৩টি দেশের মধ্যে ১০৮তম। অথচ ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের অবস্থান এর চেয়ে ভালো ছিল।

এ ছাড়া বাংলাদেশে এশিয়া অঞ্চলের প্রধান বাণিজ্য গোষ্ঠীগুলোর অন্তর্ভুক্ত নয়। আসিয়ান, আরসিইপি বা পিটিপিপিতে বাংলাদেশে নেই। রপ্তানিপণ্যের বহুমুখীকরণে বাংলাদেশকে আন্তএশীয় বাণিজ্য অংশীদারিতে যেতে হবে। পূর্বাঞ্চলের প্রতিবেশীদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। প্রতিবন্ধকতা আছে, তবে এলডিসি থেকে বাংলাদেশের এই উত্তরণ উজ্জ্বলতর ভবিষ্যতের লক্ষণ বলেই ধরে নেওয়া যায়। দক্ষিণ এশিয়ায় যারা ভিন্ন পথ অবলম্বন করছে, তাদের জন্য এটা সতর্কবার্তা।

Also Read: এলডিসি থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের লাভ-ক্ষতি