Thank you for trying Sticky AMP!!

তরুণদের জন্য বিশেষ ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে

>
শ্যামল দাস
হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এমইউসি ফুডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্যামল দাস। রপ্তানিতে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৪ সালে তিনি বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা সিআইপি মনোনীত হন। দেশের মৎস্য খাতে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে জাতীয় মৎস্য পুরস্কার রৌপ্য অর্জন করেন তিনি। যশোরের শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে তিনি প্রথম আলোর সঙ্গে খোলামেলা আলাপ করেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন যশোর প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম

প্রথম আলো: বাংলাদেশে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানির কী অবস্থা?

শ্যামল দাস: একসময় বাংলাদেশ হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে ছিল। বর্তমানে আমরা পঞ্চম বা ষষ্ঠ স্থানে নেমে গেছি। দেশে সামগ্রিকভাবে হিমায়িত চিংড়িশিল্পের প্রবৃদ্ধি নেই। কয়েক বছর আগেও দেশে ২ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জলাভূমিতে চিংড়ির চাষ হতো। এখন হচ্ছে মাত্র ২ লাখ হেক্টরে। দিন দিন চিংড়ি উৎপাদন কমছে। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চিংড়ি উৎপাদন দিন দিন বাড়ছে।

প্রথম আলো: চিংড়ি উৎপাদন কমার কারণ কী?
শ্যামল দাস: আমাদের দেশ থেকে মূলত বাগদা চিংড়ি রপ্তানি হয়। এই চিংড়ি খুবই সুস্বাদু কিন্তু তা উচ্চফলনশীল নয়। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের চিংড়ির দাম বেশি। ভারতে ‘ভ্যানামি’ নামের উচ্চফলনশীল চিংড়ির চাষ হয়। এই ভ্যানামির দাম আমাদের বাগদার চেয়ে অনেক কম। সে জন্য আমাদের হিমায়িত বাগদা চিংড়ি প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে মার খাচ্ছি।

প্রথম আলো: আমাদের দেশে ভ্যানামি জাতের চিংড়ির চাষ হচ্ছে না কেন?

শ্যামল দাস: আমাদের দেশে ভ্যানামি চিংড়ি চাষের সরকারি অনুমোদন নেই। তবে আশার কথা হচ্ছে, সরকার ভ্যানামি চিংড়ি চাষের জন্য পাইলট প্রকল্প হিসেবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কক্সবাজার এলাকায় দুটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। শিগগির এই দুই অঞ্চলে ভ্যানামি চিংড়ি চাষ শুরু হবে।

প্রথম আলো: এই চিংড়ি চাষ বাংলাদেশে এত দিন বন্ধ ছিল কেন?

শ্যামল দাস: ভ্যানামি নিয়ে নেতিবাচক ধারণা আছে। প্রচলিত বাগদা চাষের পদ্ধতি সহজ। বাগদা চিংড়ি চাষে তেমন পরিচর্যা লাগে না, রোগবালাইও কম। চাষিরাও এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। অন্যদিকে ভ্যানামি চিংড়ি চাষ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ চিংড়ি চাষে নিবিড় পরিচর্যা ও পর্যবেক্ষণের দরকার হয়, রোগবালাইও বেশি। হঠাৎ মড়ক লেগে ঘেরের সব চিংড়ি একসঙ্গে মরে যেতে পারে। এতে চাষিরা চিংড়ি চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। এ জন্য সরকার এত দিনে এই চিংড়ি চাষে উৎসাহ দেখায়নি। পরিবেশ বা মানবদেহের জন্য এই চিংড়ি ক্ষতিকর নয়।

প্রথম আলো: যশোরে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর, নৌবন্দর ও বিমানবন্দর আছে। সেই তুলনায় এখানে শিল্পকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কতটা প্রসার ঘটেছে?

শ্যামল দাস: যশোর দেশের পুরোনো একটি জেলা। কিন্তু অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা সত্ত্বেও শিল্পকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের যতটা প্রসার ঘটার কথা ছিল, ততটা ঘটেনি। এখানকার শিল্পকারখানা মূলত পাট, চামড়া ও খাদ্যশস্যনির্ভর। অথচ যশোরে মোটরগাড়ি ও হালকা প্রকৌশল শিল্পের বড় বড় শিল্পকারখানা গড়ে তোলা যেত। যশোর বাস-ট্রাকের কাঠামো তৈরিতে উৎকর্ষ অর্জন করেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এখান থেকে বাস-ট্রাকের কাঠামো তৈরি করে নিয়ে যান। হালকা প্রকৌশল শিল্পের অনেক সুনাম রয়েছে। সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় মোটরগাড়ির যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ যশোরে বেশি আমদানি হয়। এখান থেকে মোটরগাড়ির যন্ত্রাংশ সারা দেশে পাঠানো হয়। কিন্তু সেই তুলনায় ভালো শিল্প গড়ে ওঠেনি। যদিও সম্প্রতি হিরো মোটরসাইকেলের একটি কারখানা হয়েছে যশোরে। যশোরের অটোমোবাইল শিল্পকারখানাভিত্তিক একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের প্রস্তাব আছে সরকারের। কিন্তু এখনো জমি অধিগ্রহণই শুরু হয়নি। অথচ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ প্রায় শেষের দিকে। যশোরে অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে ৫ থেকে ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এতে যশোরের চেহারা বদলে যাবে।

অন্যদিকে বেনাপোল দেশের শীর্ষ স্থলবন্দর। কিন্তু বন্দরটি পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। এ বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয় খুবই সামান্য। যশোরে রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা স্থাপন করা হলে পার্শ্ববর্তী দেশে রপ্তানি বাড়বে। ইপিজেড করা হলে আমদানি-রপ্তানির ঘাটতি অনেকাংশে কমে আসবে।

প্রথম আলো: ব্যবসা-বাণিজ্যে তরুণেরা কতটা আগ্রহী?

শ্যামল দাস: আমাদের তরুণেরা অত্যন্ত মেধাবী। তাঁরা ব্যবসায় আসতে উৎসাহী কিন্তু ইমপ্লিমেন্টেশনে (বাস্তবায়ন) যেতে পারছেন না। ব্যাংকগুলো ব্যবসায়িক পরিকল্পনা দেখে ঋণ দেয় না। ঋণ দেয় সম্পদ দেখে। ব্যাংকের মালিকেরা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের ঋণ দিতে বেশি আগ্রহী। কিন্তু নতুন উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ীদের ঋণ দেন না। এ ক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। নতুন উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়ার জন্য সরকারের রিজার্ভ ফান্ড অথবা ব্যাংকের প্রতি জোরালো নির্দেশনা থাকতে হবে।

প্রথম আলো: দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে কি?

শ্যামল দাস: বিদ্যুতের লোডশেডিং এখন অনেক কম। বিদ্যুৎ সরবরাহ সন্তোষজনক। কিন্তু সরকার দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। নতুন করে বিদ্যুতের দাম আর না বাড়িয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই। শিল্পের জন্য যশোরে গ্যাস দেওয়ারও দাবি জানাচ্ছি।

প্রথম আলো: যশোরে শিল্প ও বণিক সমিতি কি কার্যকর?

শ্যামল দাস: পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে যশোরে শিল্প ও বণিক সমিতি কার্যকর নেই। প্রশাসক নিয়োগ দিয়েই সমিতি চালানো হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা সমিতির ভবনে যান না। এতে ব্যবসায়িক পরিমণ্ডল বড় হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা একসঙ্গে বসে স্বপ্নের কথা শেয়ার করতে পারছেন না। রাজনৈতিক দলাদলির কারণে যশোরে বণিক সমিতির নির্বাচন হচ্ছে না। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

প্রথম আলো: কেমন বাজেট আশা করেন?

শ্যামল দাস: ব্যবসাবান্ধব বাজেট চাই। অন্যান্য দেশের চেয়ে আমাদের দেশে করপোরেট করের হার অনেক বেশি। এটি কমানো দরকার। আগামী বাজেটে ভ্যাট-ট্যাক্স কমালে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। একই সঙ্গে বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে আয়ের একটি অংশ যশোর জেলার উন্নয়নে ব্যয় করার দাবি জানাচ্ছি।