Thank you for trying Sticky AMP!!

তারল্যসংকট কাটাতে আলাদা নীতি দরকার: এ কে এম সাহিদ রেজা

এ কে এম সাহিদ রেজা, চেয়ারম্যান, মার্কেন্টাইল ব্যাংক

বেসরকারি খাতের মার্কেন্টাইল ব্যাংক ২০ বছর পেরিয়ে ২১ বছরে পা রাখছে। দুই দশকের পথচলায় ব্যাংকটির গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ১১ লাখে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সামনে রেখে ব্যাংকটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং দেশের ব্যাংক খাত পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এ কে এম সাহিদ রেজা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুজয় মহাজন

প্রথম আলো: ব্যাংক খাতে তীব্র তারল্যসংকট চলছে। আপনাদের ব্যাংকের অবস্থা কী?

এ কে এম সাহিদ রেজা: ব্যাংক খাতে তারল্যসংকট রয়েছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে ব্যাংক খাতের সামগ্রিক এ সংকটের প্রভাব কিছুটা মার্কেন্টাইল ব্যাংকে আছে। তবে আমাদের ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি অন্য অনেকের চেয়ে ভালো। আমি মনে করি এ সংকট কাটাতে আলাদা নীতি গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। ব্যাংকের বিনিয়োগ বা ঋণের টাকা ঠিকমতো ফিরে না এলে তারল্যসংকট দেখা দেবেই। বর্তমানে যে সংকট রয়েছে, সেটি কাটাতে সাময়িক পদক্ষেপ হিসেবে হলেও ডলারের বিনিময় মূল্য বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া দরকার। এখন এটিকে একটি জায়গায় আটকে রাখা হয়েছে।

প্রথম আলো: আপনি বলছেন, ঋণ যথাসময়ে ফেরত না আসার কারণে ব্যাংক খাতের তারল্যসংকট। কিন্তু যাঁরা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করেন, তাঁদের চেয়ে তো ঋণখেলাপিদের বেশি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তাতে ভালো গ্রাহকেরা কি নিরুৎসাহিত হবেন না?

এ কে এম সাহিদ রেজা: আমি মনে করি না, ইচ্ছে করে ভালো গ্রাহকেরা নতুন করে ঋণখেলাপি হবেন। এ মানসিকতার ব্যবসায়ী এখন বাংলাদেশে অনেক কম। সরকার কখন সুবিধা দেবে, সেই আশায় কেউ ইচ্ছেকৃতভাবে খেলাপি হয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে পিছিয়ে যাবেন, সেটি মনে হয় না হবে। এ ছাড়া সরকার যেসব সুবিধা ঘোষণা করেছে, তার বেশির ভাগ সুবিধা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতিক্রমে ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের আগেও দিত। আমরা নিজেরাই আগে ভালো গ্রাহকদের রিবেট সুবিধা দিতাম। এ ছাড়া যৌক্তিক কারণে কোনো ব্যবসায়ী খেলাপি হয়ে পড়লে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ১০ বছর মেয়াদি ঋণ পুনঃ তফসিল সুবিধা দেওয়া হতো। এটা নতুন কোনো সুবিধা না।

প্রথম আলো: একজন ব্যাংক উদ্যোক্তা হিসেবে এ খাতের সংকটকে কীভাবে দেখেন?

এ কে এম সাহিদ রেজা: ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশমান যে ধারা, সেখানে সবাই সব সময় সমানভাবে ব্যবসা করতে পারবে না। সবাই টিকেও থাকবে না। বাংলাদেশে যতগুলো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে, সবাই সমান ব্যবসা করতে পারবে, তা–ও না। ব্যবস্থাপনা ও তদারকি দুর্বলতার কারণে কিছু ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হয়েছে। যার প্রভাব পুরো খাতের ওপর পড়েছে। একেকটা সময় একেক ধরনের সমস্যা তৈরি হয় ব্যাংক খাতে। সেখান থেকে আমরা শিক্ষা নিই। সামগ্রিকভাবে আমাদের ব্যাংক খাতের বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক এ খেলাপি কমিয়ে আনতে বেশ আন্তরিক। এ কারণে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু সুবিধা ঘোষণা করা হয়েছে। তাতে খেলাপি সমস্যার কিছুটা সমাধান হবে বলে আমরা আশাবাদী।

একনজরে মার্কেন্টাইল ব্যাংক
প্রতিষ্ঠা: ২ জুন, ১৯৯৯ সাল
মোট শাখা: ১৩৯ টি
মোট আমানত: ২৩৬৪০ কোটি টাকা (গত ৩১ মার্চের হিসাব অনুযায়ী)
মোট ঋণ: ২২৬১১ কোটি টাকা (৩১ মার্চের হিসাব অনুযায়ী)
পরিশোধিত মূলধন: প্রায় ৮১৫ কোটি টাকা 

প্রথম আলো: আপনার ব্যাংকের খেলাপি ঋণের অবস্থা কী?

এ কে এম সাহিদ রেজা: সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার যেখানে ১০ শতাংশের ওপর, সেখানে আমাদের ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৫ শতাংশের নিচে রয়েছে। তবু আমরা নিয়মিতভাবে আমাদের ঋণ আদায় কার্যক্রম তদারক করছি। বর্তমানে ব্যাংকে নতুন ঋণের চাহিদা কম। পুরোনো গ্রাহকেরাই ব্যবসা সম্প্রসারণে ঋণের আবেদন করছেন বেশি। পুরোনো গ্রাহককে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে, ঋণের ঝুঁকিও কম থাকে।

প্রথম আলো: ২০ বছর পূর্ণ করে ২১ বছরে পা রাখছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক। দীর্ঘ দুই দশক পেরিয়ে এসে ব্যাংকটিকে নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

এ কে এম সাহিদ রেজা: শুরু থেকে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের একটাই লক্ষ্য ছিল—সাধারণ মানুষের ব্যাংক হওয়া। সেই লক্ষ্যকে আমরা ভবিষ্যতে আরও বেশি বাস্তবে রূপ দিতে চাই। তিন বছর আগে আমরা লক্ষ্য ঠিক করেছিলাম দেশের শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকের একটি হওয়ার। আমরা এরই মধ্যে তার কাছাকাছি চলে এসেছি। আমাদের আরেকটি বড় লক্ষ্য সব দিক থেকে মার্কেন্টাইল ব্যাংককে একটি কমপ্লায়েন্ট ব্যাংকে পরিণত করা। পাশাপাশি সুসম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে গ্রাহকের সংখ্যা বৃদ্ধি, এজেন্ট ও ইসলামি ধারার ব্যাংকিং চালু করাসহ প্রযুক্তিনির্ভর সেবা বাড়াতে কাজ করছি।