Thank you for trying Sticky AMP!!

পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে এগিয়ে বাংলাদেশ

বাংলাদেশকে শোষণ-নিপীড়নে নিষ্পেষিত করতে চেয়েছিল যে পাকিস্তান, এখন অনেক কিছুতে তার চেয়ে এগিয়ে আছে সে। প্রথম আলো ফাইল ছবি

১৯৭১ সালে বিশ্বের মানচিত্রে নতুন একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ। পাকিস্তানের আগ্রাসী থাবা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নের পথে এগোতে থাকে দেশটি। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির প্রধান লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানো। এর মধ্যে দেশটি ঘুরে দাঁড়িয়েছেও।

স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদ লাখো মানুষ। প্রায় প্রতিটি ঘরেই তখন শোকের মাতম। একই সঙ্গে রাস্তাঘাট, রেলপথসহ অবকাঠামো নষ্ট হয়ে সে এক ধ্বংসস্তূপের বাংলাদেশ। ব্যাংক ও শিল্প খাতেরও একই অবস্থা। অর্থাৎ সবকিছু পেছনে ফেলে নতুন করে শুরু করার প্রত্যয়ে এগিয়ে যেতে হবে বাংলাদেশকে। এমনই এক চ্যালেঞ্জ সামনে। বাংলাদেশ কতটা মোকাবিলা করতে পেরেছে সেই চ্যালেঞ্জ?

সম্প্রতি দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি তুলনা তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশকে শোষণ-নিপীড়নে নিষ্পেষিত করতে চেয়েছিল যে দেশটি, এখন অনেক কিছুতে তার চেয়ে এগিয়ে আছে সে। গত ৪৬ বছরের অগ্রগতিতে বাংলাদেশের মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিমাণ এখন পাকিস্তানের চেয়ে বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশে মাথাপিছু জিডিপির পরিমাণ ১ হাজার ৫৩৮ ডলার। সেখানে পাকিস্তানের তা ১ হাজার ৪৭০ ডলার।

স্বাধীনতার পর বিগত ৪৬ বছরে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তিগুলো পাল্টেছে। ক্রমে শিল্প ও সেবা খাতের বিকাশ হয়েছে, যা অর্থনীতির মৌলিক কাঠামো বদলে দিয়েছে। স্বাধীনতার সময় জিডিপিতে কৃষির অবদান ছিল প্রায় ৫৯ শতাংশ। আর শিল্পের অবদান ছিল ৬ থেকে ৭ শতাংশ। বর্তমানে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান প্রায় ২৯ শতাংশ। জিডিপির তিনটি খাতের মধ্যে কৃষি খাতের অবদান তৃতীয় স্থানে। সেবা খাতের অবদান শীর্ষে। স্বাধীনতার সময় পাকিস্তানে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ছিল ২০ শতাংশের বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্যমতে, বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ১৭ লাখ। এটি এখন বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ। এদিকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে নিজেদের আদমশুমারির ফলাফল প্রকাশ করে পাকিস্তান। এতে দেখা যায়, বর্তমানে পাকিস্তানের জনসংখ্যা ২০ কোটি ৭৮ লাখ। বিশ্বের পঞ্চম জনবহুল দেশ এখন পাকিস্তান। ব্রাজিলকে অতিক্রম করেছে। আর এ কারণেই মাথাপিছু জিডিপির হার কমেছে পাকিস্তানের।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। দেশের অর্থনীতির ইতিহাসে এই প্রথম এত উচ্চমাত্রায় প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হলো, যা ছিল নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি। তবে স্বাধীনতার পর থেকে শুরু করে দীর্ঘ ২৫ বছর পর্যন্ত বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ৪ শতাংশের বেশি বাড়েনি। এর মধ্যে ১৯৭৩-৭৪ থেকে ১৯৭৯-৮০ সময়ে প্রবৃদ্ধির হার ছিল মাত্র গড়ে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। পরের ১০ বছর জিডিপি বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ হারে। এরপর থেকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছাড়িয়ে গেছে ৬ শতাংশ। বর্তমানে জিডিপির আকার ২৪ হাজার ৯৬৮ কোটি ডলার। জিডিপির আকার ১০ হাজার কোটি ডলার ছাড়াতে স্বাধীনতার পর ৩৪ বছর লেগেছে।

উন্নতি হয়েছে মাথাপিছু আয়েও। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৬৭১ টাকা। বর্তমানে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ১ লাখ ২৮ হাজার ৮০০ টাকা বা ১ হাজার ৬১০ মার্কিন ডলার।

স্বাধীনতার পর যেখানে মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার লড়াইয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশই এখন গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে (বিশ্ব ক্ষুধাসূচক) পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে। ২০১৭ সালের গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮; যেখানে পাকিস্তানের ১০৬। যুদ্ধপরবর্তী বাংলাদেশে যখন বস্ত্র-কাপড়ের সংকট তৈরি হয়েছিল, সেই দেশই এখন ভারত, পাকিস্তানের চেয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে এগিয়ে। বাংলাদেশের রপ্তানির প্রধান উৎস এখন তৈরি পোশাক খাত।

এত বছর পরও বাংলাদেশের রপ্তানি খাত এক পণ্যনির্ভর। পাটের বদলে তৈরি পোশাক এসেছে। তবে রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য খুব বেশি আনা সম্ভব হয়নি। দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, রপ্তানিতে তৈরি পোশাকের অবদান বাড়লেও পোশাক কারখানার পরিবেশ পাকিস্তান, ভারতের চেয়ে ভালো নয় বাংলাদেশের। এই অবস্থা থেকে দ্রুত এগিয়ে যেতে হবে বাংলাদেশকে।