Thank you for trying Sticky AMP!!

বাংলাদেশে বেকারের হার বেশি

দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বেকারত্বের হার বাংলাদেশেই বেশি। ২০১০ সালের পর থেকে প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা ও ভুটান এ হার কমিয়ে এনেছে। ভারতে স্থিতিশীল রয়েছে। তবে বেড়েছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নেপালে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। এতে বিশ্বজুড়ে বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানের অবস্থা এবং পূর্বাভাস তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত বাংলাদেশের বেকারত্বের হার ছিল ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি কিংবা আগামী বছরেও হারটি কমবে না। দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে বেকারের সর্বোচ্চ হারের দিক থেকে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে। তবে বাংলাদেশের চেয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তান ও দ্বীপদেশ মালদ্বীপে বেকার মানুষের হার বেশি।

আরও বলা হয়, বিশ্ব অর্থনীতি মন্দা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। তবে কর্মবাজারে কাজ খুঁজতে আসা মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। ফলে বেকারত্বের পরিস্থিতির বিশেষ কোনো পরিবর্তন হবে না।

আইএলওর প্রতিবেদন বলছে, ২০১৭ সালে বৈশ্বিক বেকারত্বের হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়াবে। বিশ্বব্যাপী বেকার মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে ১৯ কোটি ২০ লাখে। চলতি বছর বেকারত্বের হার কমে সাড়ে ৫ শতাংশ হতে পারে। তবে কর্মবাজারে কাজ খুঁজতে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়বে। ফলে সংখ্যার দিক দিয়ে বেকারত্বের হার গত বছরের চেয়ে বেশি হবে। ২০১৯ সালেও বেকারত্বের হার কমবে না। বেকার মানুষের সংখ্যা ১৩ লাখ বাড়তে পারে।

আইএলওর প্রতিবেদনে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ অঞ্চলের দেশগুলো বেশি হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে। বৈশ্বিক হারের চেয়ে এ অঞ্চলে বেকারত্বের হারও কম থাকবে। গত বছরও এ অঞ্চলের দেশগুলোতে বেকারত্বের হার ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ও আগামী বছর বেকারের হার একই থাকবে। তবে ২০১৬ সালে এই অঞ্চলে বেকারত্বের হার আরও কম, অর্থাৎ ২ দশমিক ৯ শতাংশ ছিল। তখন সংখ্যার দিক দিয়ে বেকার মানুষ ছিল ৯৮ লাখ।

বৈশ্বিক কর্মসংস্থান সম্পর্কে আইএলওর মহাপরিচালক গাই রাইডার বলেন, বৈশ্বিক বেকারত্বের হার স্থিতিশীল হলেও শোভন কাজের এখনো ব্যাপক। বিশ্ব অর্থনীতি এখনো পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে না। আবার কর্মজীবীদের কাজের মান উন্নত করতে বাড়তি উদ্যোগ দরকার, যাতে অর্থনৈতিক উন্নতির ভাগ সবাই পায়।

আইএলও নিয়ম মেনে বাংলাদেশে শ্রমশক্তি জরিপে সপ্তাহে এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজের সুযোগ না পাওয়া কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে বেকার হিসেবে গণ্য করা হয়। আইএলও প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের বেকারত্ব নিয়ে তুলনামূলক চিত্র নেই। তবে প্রতিবেদনের সঙ্গে আইএলও একটি তথ্যভান্ডার দিয়েছে, যেখান থেকে বিভিন্ন দেশের মোট শ্রমশক্তি, বেকারত্বের হার, নাজুক কর্মসংস্থানের হার ইত্যাদি পাওয়া যায়। এ তথ্যভান্ডার তৈরি করা হয়েছে সর্বশেষ প্রাপ্ত উপাত্ত ও পূর্বাভাসের ভিত্তিতে।

আইএলওর তথ্যভান্ডার অনুযায়ী, সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশে সবচেয়ে কম বেকারত্বের হার ছিল ২০১০ সালে। এরপর থেকে তা বাড়ছে। ওই বছর মোট শ্রমশক্তির ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেকার ছিল, যা ২০১৬ সালে ৪ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একই বছর ভারতে বেকারের হার ছিল সাড়ে ৩ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ৪ দশমিক ৪ শতাংশ, পাকিস্তানে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ, নেপালে ৩ দশমিক ১ শতাংশ এবং ভুটানে ২ দশমিক ৪ শতাংশ।

আইএলওর হিসাবে ২০১০ সালে বাংলাদেশে ২০ লাখ লোক বেকার ছিল। ২০১২ সালে ছিল ২৪ লাখ। ২০১৬ সালে তা ২৮ লাখে উঠেছে। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ৩০ লাখে ওঠার আশঙ্কা করছে আইএলও।

এদিকে ২০১২ সালের পর থেকে বিশ্বে নাজুক কর্মসংস্থানের হারটি কমে আসছে। তারপরও গত বছর ৪২ শতাংশ বা ১৪০ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান নাজুক ছিল। তবে উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোতে নাজুক কর্মসংস্থানের হার যথাক্রমে ৭৬ ও ৪৬ শতাংশ। আগামী দুই বছরে নাজুক কর্মসংস্থানের পরিমাণ ১ কোটি ৭০ লাখ বাড়বে বলে আইএলওর প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

বেকারত্বের হার বেশি হলেও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশে নাজুক (ভালনারেবল) কর্মসংস্থানের হার কম। আইএলও তথ্যভান্ডার মতে, বর্তমানে বাংলাদেশের কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা ৬ কোটি ২৫ লাখ। এর মধ্যে ২০১৬ সালে ৫৮ শতাংশ কর্মসংস্থান ছিল নাজুক। ভারতের ক্ষেত্রে হারটি ৭৮ শতাংশ, পাকিস্তানে ৬০ শতাংশ, নেপালে ৭৯ শতাংশ, ভুটানে ৭১ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কায় ৪০ শতাংশ। আনুষ্ঠানিক চুক্তিহীন কাজকে আইএলও নাজুক শ্রেণিতে ফেলে, আর এই শ্রেণিতে পড়ে সাধারণ দিনমজুর, গৃহকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিরা।

এদিকে বাংলাদেশের মোট কর্মসংস্থানের ৯০ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক। কম্বোডিয়া ও নেপালে একই অবস্থা। মূলত কৃষি খাতে কর্মসংস্থান বেশি হওয়ায় এসব দেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের হার বেশি। তবে অকৃষি খাত, যেমন নির্মাণ, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা, হোটেল ও খাদ্যসংক্রান্ত সেবাশিল্পে অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের হার বেশি হয়ে থাকে। চীনের মতো দেশেও ৫০ শতাংশ শ্রমিক অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। আইএলও বলছে, কর্মসংস্থানে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত বেশি থাকার মানেই হচ্ছে দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য তা বাধা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করার হিসাব দিয়ে বেকারত্বের সত্যিকার চিত্র মিলবে না। ফলে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ নয়, বাংলাদেশের বেকারত্বের হার আরও অনেক বেশি। তিনি বলেন, বিবিএসের খানা আয় ব্যয় জরিপেই তো দেখা যায়, আয়বৈষম্য অনেক বেশি। সেই বৈষম্য ধনী-দরিদ্রের। বৈষম্যের বড় কারণ হচ্ছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলেও উৎপাদন খাতে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না।