Thank you for trying Sticky AMP!!

বিক্রি নেই, পুঁজির সংকটে

প্রথম আলো ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় এপ্রিলে কোনো বেচাবিক্রি হয়নি। ঈদের ১৫ দিন আগে সীমিত পরিসরে দোকানপাট খোলা হলেও বেচাবিক্রি ছিল একেবারেই কম। ফলে বড় ধরনের সংকটে পড়েছে দেশের আসবাবশিল্প খাত। দোকান ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে পারছে না অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান।

এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার কারণে ভয়াবহ পুঁজির সংকটে পড়েছে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান। তাদের টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের প্রণোদনা তহবিল থেকে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে ছোট-মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।

দেশের আসবাব খাতের শীর্ষ ব্র্যান্ডগুলোর একটি নাদিয়া ফার্নিচার। ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করেন প্রায় ৮০০ কর্মী। ঈদের আগে ১০ মে সীমিত পরিসরে দোকানপাট খুলে দেওয়ার পর তাদের যে বিক্রি হয়েছে, তা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৯৫ শতাংশ কম।

এই তথ্য নিশ্চিত করে নাদিয়া ফার্নিচারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ করিম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, আসবাবের ব্র্যান্ডগুলো টুকটাক কিছু বিক্রি করেছে। তবে তা দিয়ে কর্মীদের বেতন-ভাতাও হবে না। অন্যদিকে ছোট-মাঝারি অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের কোনো বিক্রিই হয়নি। ফলে সত্যিকার অর্থেই কঠিন সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আসবাব খাত।

 খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রায় চার দশক আগে ব্র্যান্ডের আসবাবের সঙ্গে দেশের মানুষকে প্রথম পরিচয় করান নিতুন কুন্ডু। তাঁর হাতে গড়া অটবি দেশের পাশাপাশি ভারতের বাজারেও সাড়া ফেলেছিল একসময়। অটবির পরে আসবাবের ব্র্যান্ডে যুক্ত হয় আকতার ও হাতিল। সময়ের ব্যবধানে ঘরবাড়ির পাশাপাশি অফিস ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসবাবের চাহিদা বাড়তে থাকে। এই চাহিদা কাজে লাগিয়ে নাভানা, পারটেক্স, ব্রাদার্স, নাদিয়া, হাইটেক, রিগ্যালের মতো নতুন নতুন ব্র্যান্ড হয়েছে। বর্তমানে সব মিলিয়ে আসবাবের ব্র্যান্ড আছে ১০-১২টি। তার বাইরে আসবাবের ননব্র্যান্ড অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সব মিলিয়ে খাতটির সঙ্গে ২৫-৩০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত।

দেশে কাঠের স্বল্পতা ও অত্যধিক দামের কারণে বেশ কয়েক বছর আগে আমদানি করা কাঠের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বোর্ডের আসবাব তৈরির দিকে ঝুঁকেছে অধিকাংশ ব্র্যান্ড। তবে অনেকের পছন্দ কাঠের আসবাব। সেগুন, মেহগনি, ওক, বিচ ওক প্রভৃতি কাঠ মিয়ানমার, কানাডা, জার্মানি, নাইজেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে আসবাব তৈরি করছে ব্র্যান্ডগুলো।

 ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনায় বিক্রয়কেন্দ্রে বিক্রি কমলেও অনলাইনে আসবাব বিক্রি কয়েক গুণ বেড়েছে। তবে পরিমাণে অনেক কম, বিক্রয়কেন্দ্রের বিক্রির ধারেকাছেও নয়। আবার অনলাইনে বিক্রির ক্ষেত্রে মূলত শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোই এগিয়ে আছে।

ডেকো গ্রুপ গত বছর আসবাবের ব্র্যান্ড ইশো নিয়ে আসে। আপাতত রাজধানীর প্রগতি সরণিতে তাদের একটি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিজনেস হেড ফিরোজ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বিক্রয়কেন্দ্র থেকে আসবাব বিক্রি ভয়াবহভাবে কমে গেছে। তবে অনলাইনে বিক্রি বেশ বেড়েছে।।’

করোনায় দেশীয় বাজারের পাশাপাশি আসবাবের রপ্তানিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭ কোটি ৪৮ লাখ ডলারের আসবাব রপ্তানি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে ৬ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের আসবাব রপ্তানি হয়। তখন পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি ছিল ১৮ শতাংশ। তারপর থেকে করোনার কারণে রপ্তানি কমতে শুরু করেছে।

আসবাব রপ্তানিতে হাতিল অন্যদের চেয়ে এগিয়ে। তবে গত দুই মাসে বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে কোনো নতুন ক্রয়াদেশ পায়নি প্রতিষ্ঠানটি। দেশীয় বাজারে মে মাসে তাদের বিক্রি কমে দাঁড়িয়েছে ছয় ভাগের এক ভাগে। এমন তথ্য দিয়ে হাতিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম এইচ রহমান বলেন, এপ্রিল মাসে তো কোনো বিক্রিই হয়নি। আসলে করোনার কারণে সবকিছু থমকে গেছে।

নাদিয়া ফার্নিচারের এ করিম মজুমদার বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিক্রি না থাকায় কারখানায় কোনো কাজ নেই। ফলে দক্ষ শ্রমিকেরা বেকার হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন। তবে আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে তাঁদের রেখে ঘুরে দাঁড়ানো যায়।’ তিনি আরও বলেন, বর্তমানের সংকট কাটাতে ৩-৬ মাসের জন্য সহযোগিতা দরকার। ইতিমধ্যে সরকার তহবিল গঠন করেছে। তবে ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার বিষয়ে ছোট-মাঝারি উদ্যোক্তারা এখনো কোনো ইতিবাচক বার্তা পাননি। অথচ মাত্র ৫ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঋণ পেলেই অনেকগুলো ছোট-মাঝারি প্রতিষ্ঠান ব্যবসায় টিকে যাবে।