Thank you for trying Sticky AMP!!

ব্যাংক খাতের ওপর বড় চাপ আসবে

আবদুল হালিম চৌধুরী

এখন অর্থনীতিকে ঝুঁকিমুক্ত করে পুনরুদ্ধার করতে হবে। আবার আগের জায়গায় ফিরে যেতে হবে। এই কঠিন অনিশ্চিত সময়ে নতুন বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। ব্যক্তিশ্রেণি ও করপোরটে কর কমে এসেছে, এমন সময়ে এটা ভালো সিদ্ধান্ত। আবার ব্যক্তিশ্রেণির কর দেওয়ার সীমা আড়াই লাখ থেকে তিন লাখ টাকা করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল বেশি মানুষকে করের আওতায় আনা, এর ফলে আরও অনেক মানুষ করের আওতায় বাইরে চলে যাবে।

 কালোটাকা সাদা করার সুযোগকে অনেকে সৎ করদাতাদের জন্য শাস্তি হিসেবে দেখছেন। আর অসৎদের পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। সব টাকা কালো না, অনেক টাকা আছে অপ্রদর্শিত। এভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ না দিয়ে প্রথম বছরে ১০ শতাংশ, পরের বছর ২০ শতাংশ ও এরপর ১৫ শতাংশ টাকা বাজেয়াপ্ত করার হুঁশিয়ারি দিলে ভালো হতো। প্রচলিত করের সঙ্গে কিছু জরিমানা আরোপ করে এই টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া উচিত। নিয়মিত করদাতাদের থেকে অনেক কমে এসব টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া ঠিক হয়নি। এতে যাঁরা কর ফাঁকি দিচ্ছেন, তাঁরা পুরস্কার পাচ্ছেন। যাঁরা নিয়ম মেনে দিচ্ছেন, তাঁরা কিছু পাচ্ছেন না।

১০ লাখ টাকার বড় আমানতকারীদের আবগারি শুল্ক কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। এটা ভালো যে ছোটদের ওপর কোনো চাপ আসেনি। সরকার এ খাতে যত কর আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করে, তার পুরোটাই আদায় করতে পারে। কারণ, ব্যাংকগুলো এ টাকা আদায় করে দেয়। প্রযুক্তির মাধ্যমে এ টাকা কেটে রাখা হয়, ফলে এতে ফাঁকির কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া মোবাইল থেকে যে কর আসে, এতেও ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই। সরকারকে আয় তো করতে হবে, আয়ের উৎস আমরাই। তবে আমার ভয় হলো, আবগারি শুল্ক বাড়ল, আবার আমানতের সুদও অনেক কম। এর ফলে খারাপ কিছু যেন না হয়। গাড়ির ওপর কর বেড়েছে, এটা ভালো। এটা ছোটদের ওপর চাপ পড়বে না।

 আমাদের মূল সমস্যা এখন কর্মহীন মানুষ। অনেকের চাকরি চলে গেছে। তাঁদের সহায়তা করা গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য বাজেটে সামাজিক সুরক্ষায় অনেক টাকা আছে। এটা ভালো দিক। জিডিপি অর্জনের যে লক্ষ্য, তা আসলেই অনেক বেশি। বিশ্বের কেউ বলছে না, এত হবে। তবে লক্ষ্য বেশি থাকা ভালো, এর কাছাকাছি গেলেও ভালো।

সরকার রপ্তানি খাতের শ্রমিকদের বেতনবাবদ ৫ হাজার কোটি টাকা দিয়েছিল। প্রথমে এ টাকা বিতরণ নিয়ে নানা দ্বিধা ছিল। তবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আওতায় বেতন দেওয়ায় সব সমস্যা কেটে গেছে। প্রকৃত শ্রমিকদের হাতে টাকা গেছে। যেটা অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ জন্য সব ধরনের আর্থিক সুবিধা প্রকৃতদের কাছে পৌঁছাতে মোবাইল ব্যাংকিং, ব্যাংকের ব্যবহার করতে হবে। এখনই সময় প্রকৃতদের কাছে সুবিধা পৌঁছানোর।

স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ রাখা টাকার যথাযথ ব্যবহার হবে তো? এই টাকা যথাযথভাবে ব্যবহার করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কী দক্ষতা আছে। এটাই হলো সমস্যা। এটা দক্ষভাবে ব্যবহার হলে করোনা চিকিৎসা ভালোভাবে করা সম্ভব। যেভাবে প্রতিদিন আক্রান্ত ও মারা যাচ্ছে, এটা যেকোনোভাবে রোধ করতেই হবে। আবার স্বাস্থ্য খাতে সরকারের বরাদ্দ যথাযথভাবে ব্যবহার হলে বিদেশে রোগী যাওয়া কমবে। কৃষি খাতে যান্ত্রিকীকরণে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এটা খুবই ভালো, যত যান্ত্রিকীকরণ হবে, ততই কৃষির উন্নতি হবে।

প্রণোদনার ঋণ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে নীতিমালা দিয়েছে, তা খুবই ভালো হয়েছে। এখন এমন অনেকে ভালো ব্যবসায়ী ব্যংকে আসছেন, যাঁরা আগে কখনোই আসতেন না। ফলে সত্যিই সবাই সমস্যায় পড়ে গেছেন। আমরা টাকা দিচ্ছি, কিন্তু টাকা তো ফেরত আনতে হবে। টাকা ফেরত না এলে নতুন করে ঋণ দিতে পারবে না। এ নিয়ে আমরা চিন্তায় আছি। সরকারের প্রণোদনার টাকার কারণেই শিল্প খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। তবে সময় লাগবে। ইউরোপ, আমেরিকা পুরোপুরি চালু না হলে আমরা দাঁড়াতে পারব না।

 এই কঠিন অবস্থার মধ্যে বাজেট খারাপ হয়নি। বাস্তবায়নে দুর্নীতি যত দূর করা যাবে, তত বেশি সেবা মানুষ পাবে। আমি নিজে খুশি, কারণ আমার কর কিছুটা কমে গেছে। যে টাকা বাঁচলে, এই টাকা গরিবদের সহায়তা করব।

বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে তারল্য সহায়তা দিচ্ছে, এভাবে অব্যাহত থাকলে ব্যাংকগুলোর জন্য ভালো হবে। আমাদের বড় ধাক্কা এসেছে সুদহার ৯ শতাংশ বেঁধে দিয়ে, এবার ধাক্কা করোনার। ব্যাংক খাতের ওপর আরও বড় চাপ আসবে। তবে সুনাম থাকায় আমাদের মতো ব্যাংকের সমস্যা হবে না। খেলাপি ঋণের কারণে অনেক টাকা নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হচ্ছে। করোনার এই সময়ে চাপ সামলাতে চাকরি ছাঁটাই, বেতন না কমিয়ে ব্যাংকগুলো বোনাস, অতিরিক্ত ভাতা কমিয়ে আনতে পারে। এই সময়ে চাকরি ছাঁটাই কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এই বাজেটে ব্যাংক সংস্কার, ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের নিয়ে কোনো ঘোষণা নেই। অথচ আমরা ব্যাংকের ওপর ভর করেই অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে চাইছি।

আবদুল হালিম চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পূবালী ব্যাংক