Thank you for trying Sticky AMP!!

মালিকপক্ষের তালিকায় স্বচ্ছতা আসবে না

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জার্মানি সরকারের সহায়তায় রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের কাজ হারানো শ্রমিকদের মাসে তিন হাজার টাকা দেওয়া হবে। অবশ্য গত তিন মাসেও প্রক্রিয়াটি শেষ করতে পারেনি সরকার। এসব নিয়ে গতকাল প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির (বিসিডব্লিউএস) নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার। অনুলিখন করেছেন শুভংকর কর্মকার

কল্পনা আক্তার

মালিকপক্ষের তালিকায় শ্রমিকদের সহায়তা দেওয়া হলে বিষয়টিতে কখনোই স্বচ্ছতা আসবে না। এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতে হলে অবশ্যই কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরকে (ডিআইএফই) দিয়ে তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। প্রয়োজনে একটি অ্যাপ্লিকেশন বা অ্যাপ তৈরি করা যায়। সেই সঙ্গে শ্রমিকদেরও সহায়তার বিষয়টি জানাতে হবে। যাতে ছাঁটাইয়ের শিকার শ্রমিকেরা সরাসরি আবেদন করতে পারেন। তাঁদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত করা প্রয়োজন।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জার্মানি সরকারের সহায়তাটি রপ্তানিমুখী খাতের শ্রমিকের জন্য হলেও পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে অন্যান্য রপ্তানিমুখী খাতের শ্রমিকেরা বঞ্চিত হচ্ছেন। যদিও পোশাকের পাশাপাশি চামড়াশিল্পের শ্রমিকেরাও সহায়তা পাবেন বলে শোনা যাচ্ছে। আবার বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ কর্তৃপক্ষকে তালিকা করতে দিলে সেখানে কেবল তাদের সদস্য কারখানার শ্রমিকের নাম থাকবে। তাতে সাব-কন্ট্রাকটিং বা ঠিকায় কাজ করা কারখানার ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকেরা বাদ পড়ে যাবেন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

ইইউ ও জার্মানি গত মে মাসে ১১ কোটি ৩০ লাখ ইউরো বা ১ হাজার ১৩৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তিন মাস পার হয়ে গেলেও সেই সহায়তা ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের হাতে পৌঁছে দিতে না পেরে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর চরম অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। এখনো তারা প্রক্রিয়াটি শেষ করতে পারেনি। অবস্থা এমন হয়েছে যে ‘ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগী মারা যাবে।’ কারণ, করোনাকালে চাকরি হারানো শ্রমিকেরা অন্নহীন অবস্থায় আছেন। তাঁরা ঋণের ভারে তলিয়ে যাচ্ছেন।

ছাঁটাইয়ের শিকার প্রত্যেক শ্রমিককে তিন হাজার টাকা করে তিন মাস দেওয়ার যে পরিকল্পনা করা হয়েছে, সেটি খুবই নগণ্য। হয়তো যেসব শ্রমিক সহায়তাটি পাবেন, তাঁদের অধিকাংশের ঋণ শোধ করতেই সেই টাকা শেষ হয়ে যাবে। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত এক লাখ থেকে দেড় লাখ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন। ফলে ইইউ ও জার্মানি যে টাকা বরাদ্দ দিয়েছে, সেখান থেকে শ্রমিকদের আরও বেশি সহায়তা দেওয়া সম্ভব। অথবা যত দিন ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকেরা চাকরি না পান, তত দিন দেওয়া যেতে পারে। আবার যদি সেপ্টেম্বরে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আসে, তাহলে সেটির জন্যও প্রস্তুতি থাকা দরকার।

করোনার কারণে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত গর্ভকালীন ছুটিতে থাকা, শিক্ষানবিশ ও যাঁদের চাকরির বয়স এক বছরের কম, তাঁদের ছাঁটাই করেন মালিকেরা। এখনো শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের বেছে বেছে বর্তমানে ছাঁটাই করা হচ্ছে। শ্রমিক ছাঁটাইয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শ্রম আইন মানেন না মালিকেরা। ফলে শ্রমিকেরা ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হন। ডিআইএফই বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে জানে। তারা যদি দোষী কারখানামালিকদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নিত, তাহলে মালিকেরা সতর্ক হতেন। অবশ্যই সে জন্য আগে ডিআইএফইকে শক্তিশালী করতে হবে।