Thank you for trying Sticky AMP!!

মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোমে ছয় মাসে ১৬৩ বাংলাদেশি

মালয়েশিয়ায় দ্বিতীয় নিবাস গড়ার কর্মসূচি বা মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোমে (এমএম ২ এইচ) চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ১৬৩ জন বাংলাদেশি অংশ নিয়েছেন। ফলে সব মিলিয়ে এতে অংশ নেওয়া বাংলাদেশিদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৫৬ জনে। সেকেন্ড হোম কর্মসূচির ওয়েবসাইটে এ পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে।

২০০২ সালে চালু হওয়া এমএম ২ এইচ হলো এমন একটি কর্মসূচি, যেখানে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিয়ে অন্য দেশের একজন নাগরিক মালয়েশিয়ায় দীর্ঘমেয়াদি বসবাস ও অন্যান্য সুবিধা পান। বিভিন্ন দেশ থেকে এ কর্মসূচিতে গত জুন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৩৪ হাজার ৫৯১ জন অংশ নিয়েছেন।

এ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। আর প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে চীন ও জাপান।

বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় নিবাস গড়তে বৈধভাবে অর্থ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ফলে সেকেন্ড হোম কর্মসূচিতে যাঁরা অংশ নিয়েছেন তাঁরা টাকা পাচার করেছেন।

এই সুবিধা পেতে হলে একজন ব্যক্তিকে ৭ হাজার, স্বামী-স্ত্রীর জন্য সাড়ে ৭ হাজার এবং একটি পরিবারের জন্য ৮ হাজার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা) মালয়েশীয় রিঙ্গিত ফি দিতে হয়। পরিবার বলতে স্বামী ও স্ত্রী ছাড়া তাঁদের দুজনের সন্তানকে নিয়ে একটি পরিবার বিবেচনা করা হয়। পরিবারের সদস্য এর চেয়ে বেশি হলে প্রতিটি সন্তানের জন্য বাড়তি আড়াই শ মালয়েশীয় রিঙ্গিত ফি দিতে হয়।

দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, মালয়েশিয়ায় অর্থ পাচারকারীদের ধরতে সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম কর্মসূচি অর্থপাচারের একটি বড় মাধ্যম হয়ে গেছে। সেখানে শুধু কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার ফি নয়, বাসস্থান, গাড়ি ইত্যাদি কেনা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্যও বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার হয়।

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, বাংলাদেশের মতো মালয়েশিয়া জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনে সই করেছে। এর আওতায় বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার কাছে তথ্য চাইতে পারে। তিনি বলেন, ‘সরকার সুযোগ থাকার পরও কেন অর্থ পাচারকারীদের ধরছে না, সেটাই অবাক করার বিষয়।’

বাংলাদেশিরা সেকেন্ড হোম কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শুরু করে ২০০৩ সাল থেকে। ওই বছর ৩২ জন বাংলাদেশি এতে অংশ নেয়। পরের বছর সংখ্যাটি ৬ গুণ বেড়ে ২০৪ জনে উন্নীত হয়। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বাংলাদেশি সেকেন্ড হোম কর্মসূচিতে অংশ নেয় ২০০৫ সালে। ওই বছর অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ৮৫২ জন। এরপর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমে অংশ নেওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা বছরে ১০০ জনের কম ছিল। পরে তা বেড়ে যায়। ২০১৬ সালে ২৮৩ জন বাংলাদেশি সেকেন্ড হোম কর্মসূচিতে অংশ নেন। যা আগের বছরের চেয়ে ৭৮ জন বেশি। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ১৬৩ জন ওই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ায় বছর শেষে এ সংখ্যা ৩০০ জনের বেশি হওয়ার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে।

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে গত জুলাইয়ে সেকেন্ড হোম নিয়ে এক জাতীয় কর্মশালায় দেশটির পর্যটন ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী নাজরি আজিজ জানান, সেকেন্ড হোম কর্মসূচি থেকে স্থাবর সুবিধা ও রাজস্ব হিসেবে মোট ১ হাজার ২৮০ কোটি মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত জাতীয় অর্থনীতিতে যোগ হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার সমান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের উপপ্রধান মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার কঠিন কোনো কাজ নয়। এ দেশে যাঁরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করেন, তাঁরাই সেকেন্ড হোম প্রকল্পে অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, এখন সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে বের করতে হবে কারা মালয়েশিয়ায় দ্বিতীয় নিবাস গড়েছেন। দেশীয় আইনে তাঁদের অর্থপাচারের বিচার করতে হবে।