Thank you for trying Sticky AMP!!

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিভাজন বাড়ছে

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের সহকারী অধ্যাপক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রেশমান হুসসাম। তিনি ২০১৫ সালে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। উন্নয়ন ও আচরণগত অর্থনীতির বিভিন্ন দিক নিয়েই তিনি মূলত গবেষণা করেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। বাংলাদেশে অবস্থানকালে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের গবেষণা, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আশরাফুল ইসলাম
রেশমান হুসসাম

প্রথম আলো: অর্থনীতির কোন বিষয় নিয়ে আপনি কাজ করছেন? 
রেশমান হুসসাম: আমার পড়ালেখা মূলত উন্নয়ন ও আচরণগত অর্থনীতি নিয়ে। আর কাজ করছি ব্যষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। স্বাস্থ্য, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, শৌচাগার ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্রঋণ, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মতো বিষয়ে আমি কাজ করি। এ অর্থে আমাকে প্রায়োগিক অর্থনীতিবিদ বলা যেতে পারে। দারিদ্র্য দূরীকরণ বা কমিয়ে আনতে যেসব নীতি-কৌশল কাজ করে, সেগুলোর মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করে আমি কাজ করি। যেমন উন্নয়নশীল বিশ্বে স্কুলের শ্রেণিকক্ষে পড়ালেখার মান উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়, এগুলোর কোনটি বেশি কার্যকর, তা গবেষণার মাধ্যমে খুঁজে বের করার কাজ করি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় ও শৌচাগার ব্যবহারের পর হাত ধোয়ার অভ্যাস কার্যক্রমের ওপর ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কাজ করেছি। বাংলাদেশেও এ ধরনের গবেষণাকাজ করার ইচ্ছা ও পরিকল্পনা আমার আছে। 

প্রথম আলো: হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি কী পড়ান? 
রেশমান হুসসাম: আমার গবেষণার ক্ষেত্র মূলত উন্নয়ন অর্থনীতি নিয়ে। তবে হার্ভার্ডে আমি এমবিএতে বাণিজ্য, সরকার ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতি বিষয়ে পড়াই। অর্থনীতিতে ঘটে যাওয়া বড় ধরনের ঘটনা ও এর প্রভাব নিয়ে বিষয়টি পড়ানো হয়। যেমন ২০০৭-০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মহামন্দা, যুক্তরাজ্যের ব্যাংক খাতের সংকট, ইউরোপের অর্থনীতিতে সিরিয়া থেকে পালিয়ে আসা নাগরিকদের কারণে সৃষ্ট প্রভাব ইত্যাদি। সামষ্টিক অর্থনীতিতে এসব ঘটনার বিভিন্ন প্রভাব নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়। ব্যবসায় স্কুলের শিক্ষার্থীদের এসব বিষয় পড়ানোর কারণ হলো অর্থনীতিতে এসব ঘটনার প্রভাব যাতে তারা বুঝতে পারে। 

প্রথম আলো: ২০০৭ সালের আর্থিক মহামন্দার পর বিশ্ব অর্থনীতি এখন কেমন বলে আপনি মনে করেন?
রেশমান হুসসাম: সব দেশেই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিভাজন আগের চেয়ে বাড়ছে। রক্ষণশীল জাতীয়তাবাদের প্রভাব এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার কারণে একটি দেশের নীতির পরিবর্তন হলে সেটি অন্য দেশকে কোনো না কোনোভাবে প্রভাবিত করে। যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতের মতো দেশের রক্ষণশীল মনোভাবে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
প্রথম আলো: যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল নীতির কারণে সেখানে বসবাসরত প্রবাসী বাঙালিরা সমস্যায় পড়ছেন। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
রেশমান হুসসাম: আমি মনে করি, এই প্রবণতা খুবই উদ্বেগজনক ও ভয়ংকর। হতে পারে এখন যা হচ্ছে সেটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরের শাসনামলের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু এ প্রবণতা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে সেটা প্রবাসীদের জন্য বড় ধরনের দুঃসংবাদ। তবে আগামী কয়েক বছরে পরিস্থিতি কী হবে তা এখনই বলা কঠিন। যেমন মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের আলাদা করে যেভাবে অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হচ্ছে, আবার এসব নির্যাতনের খবরকে ভুয়া ও মিথ্যা বলে অস্বীকার করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। ট্রাম্প প্রশাসন এখন যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকদের আলাদা করছে, এটি খুবই উদ্বেগের।
প্রথম আলো: অর্থনীতিতে নৈতিকতার সম্পর্ক কমে যাওয়ার বিষয়টি এখন আলোচনায় এসেছে। বিষয়টি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
রেশমান হুসসাম: অর্থনীতির সঙ্গে মূল্যবোধ ও নৈতিকতার সম্পর্ক কমে যাচ্ছে বলে যে আলোচনা চলছে, তার সঙ্গে আমি একমত। অর্থনীতি হলো মূলত মানুষের আচরণের বহিঃপ্রকাশ। অর্থনীতিবিদেরা বিভিন্ন তত্ত্বের মাধ্যমে এসব আচরণের ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ জন্য অনেক গাণিতিক মডেলও ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু গাণিতিক মডেলের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে অর্থনীতির সঙ্গে মানবিকতার সম্পর্ক কমছে। এ ধারা পরিবর্তনে এখন উন্নয়ন ও আচরণগত অর্থনীতিতে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রথম আলো: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে কোন বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করেন?
রেশমান হুসসাম: স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের বিনিয়োগে সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়লে তা একটি সুস্থ-সবল জাতি তৈরিতে ভূমিকা রাখবে। এর সঙ্গে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি না হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে রাতারাতি এ দুটি বিষয়ে উন্নতি অর্জন সম্ভব নয়। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে।
প্রথম আলো: আপনার মতো অনেক বাংলাদেশি তরুণ হার্ভার্ড, এমআইটিতে পড়ালেখা করতে চান। তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
রেশমান হুসসাম: হার্ভার্ড, এমআইটি এখন তাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈচিত্র্য বাড়ানোয় জোর দিচ্ছে। উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রতি এসব বিশ্ববিদ্যালয় এখন আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশের তরুণেরা এ সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেন। তবে এ জন্য তরুণদের একটু উচ্চাভিলাষী হতে হবে।