Thank you for trying Sticky AMP!!

সবচেয়ে গরিবের চেয়ে সবচেয়ে ধনীর আয় ১১৯ গুণ

ফাইল ছবি

বাংলাদেশের সবচেয়ে গরিব প্রায় পৌনে ২০ লাখ পরিবারের প্রতি মাসের গড় আয় মাত্র ৭৪৬ টাকা। তারা দেশের সবচেয়ে গরিব ৫ শতাংশ পরিবার। একইভাবে সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ পরিবারের মাসিক আয় লাখের কাছাকাছি। দেশের সবচেয়ে ধনী ১৯ লাখ ৬৫ হাজার পরিবারের মাসিক গড় আয় ৮৯ হাজার টাকা। তার মানে, দেশের সবচেয়ে হতদরিদ্র পরিবারের চেয়ে সবচেয়ে ধনীরা প্রায় ১১৯ গুণ বেশি আয় করে।

দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বনন্দিত হলেও দেশের মানুষের মধ্যে আয়বৈষম্য ক্রমেই বাড়ছে। ২০১৬ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। ২০১৮ সালে প্রতিবেদনটির প্রাথমিক তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। আর গত ২৪ সেপ্টেম্বরে ওই প্রতিবেদনের বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করা হয়।

গিনি সহগের মাধ্যমে আয়বৈষম্য চিহ্নিত করা হয়। ২০১০ সালে গিনি সহগ ছিল দশমিক ৪৫৮। ২০১৬ সালে এসে দাঁড়ায় দশমিক ৪৮৩। অবশ্য প্রাথমিক প্রতিবেদনে এটি ছিল দশমিক ৪৮২। এর মানে, গত ছয় বছরে বাংলাদেশের মানুষের আয় ও সম্পদবৈষম্য বেড়েছে। কোনো দেশের গিনি সহগ দশমিক ৫০-এর বেশি হলে সে দেশকে উচ্চ বৈষম্যের দেশ হিসেবে ধরা হয়। বাংলাদেশ এর কাছাকাছি আছে।

বিবিএস বলছে, বাংলাদেশে সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৯৩ লাখ ২৯ হাজার পরিবার আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গরিব ৫ শতাংশ বা ১৯ লাখ ৭২ হাজার ৩২টি পরিবারে সাড়ে ৬১ লাখ সদস্য রয়েছে। তাদের মধ্যে উপার্জনকারীর সংখ্যা সাড়ে ১৫ লাখ। এই দরিদ্র শ্রেণির প্রতি পরিবারের মাসিক গড় আয় ৭৪৬ টাকা। এই হলো দেশের সবচেয়ে গরিব মানুষের আয়ের চিত্র। অবশ্য এটি ওই সব পরিবারের প্রকৃত আয় নয়। ওই সব পরিবারের মোট আয়কে পরিবারপ্রতি ভাগ করে এ হিসাব করা হয়েছে।

এবার একটু ভিন্ন চিত্র দেখি। দেশের সবচেয়ে ধনী ১৯ লাখ ৬৫ হাজার ১১০টি পরিবারের প্রায় ৩২ লাখ সদস্য উপার্জন করেন। এই শ্রেণির বিত্তবান পরিবারের মাসিক গড় আয় ৮৯ হাজার ৬ টাকা। দেশের মানুষের মোট আয়ের প্রায় ২৮ শতাংশ যায় এই ধনিকশ্রেণির কাছে। আর সবচেয়ে গরিব ৫ শতাংশ পরিবারের আয়ের অংশ মাত্র দশমিক ২৩ শতাংশ।

>বিবিএসের হিসাবে দেশে আয়বৈষম্য ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
বৈষম্য বৃদ্ধির বড় কারণ ভোগ প্রবণতার মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ
সবচেয়ে গরিব ২০ লাখ পরিবারের মাসিক গড় আয় ৭৪৬ টাকা।
সবচেয়ে ধনী ২০ লাখ পরিবারের মাসিক গড় আয় ৮৯ হাজার টাকা।

এমন অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য দূরীকরণ দিবস পালিত হচ্ছে। ১৯৯৩ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ দিবস পালন করে আসছে। ১৯৯২ সালের ২২ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ১৭ অক্টোবরকে এ দিবসের মর্যাদা দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক বিনায়ক সেন প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে বৈষম্য বৃদ্ধির বড় কারণ গত কয়েক দশকে ভোগ প্রবণতার মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ হয়েছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশের কারণে একদিকে যেমন দারিদ্র্য কমেছে, অন্যদিকে বৈষম্যও বেড়েছে। কিন্তু রাষ্ট্র এই সময়ে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করে তা মানবসম্পদ উন্নয়নে ও দরিদ্র মানুষের কল্যাণে যথাযথভাবে পুনর্বণ্টন করতে পারেনি। তাঁর মতে, সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সংগতি রেখে নতুন উচ্চ দারিদ্র্যরেখা ঠিক করা উচিত। পাশাপাশি বিদ্যমান দারিদ্র্যরেখাও (দৈনিক আয় ১ দশমিক ৯০ ডলার ধরে) রাখতে হবে।

২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘প্রভার্টি অ্যান্ড শেয়ার প্রসপারিটি বা দারিদ্র্য ও সমৃদ্ধির অংশীদার’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতিগরিব মানুষের সংখ্যা বেশি, এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। বাংলাদেশে ২ কোটি ৪১ লাখ হতদরিদ্র মানুষ আছে। বাংলাদেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বিশ্বব্যাংক চলতি মাসেই আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্ধেক মানুষই দারিদ্র্যঝুঁকির মধ্যে থাকে।

তবে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের সাফল্য কোনোভাবে খাটো করে দেখার উপায় নেই। স্বাধীনতার পর থেকে দারিদ্র্য বিমোচনকে সামনে রেখেই সব সরকার বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি নিয়েছে। এগিয়ে আসে দাতা সংস্থা ও বেসরকারি সংস্থাগুলো। ১৯৭৩-৭৪ সালে প্রথম খানা আয় ও ব্যয় জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের সাড়ে ৮২ শতাংশই মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত। হতদরিদ্রের হার ছিল ৪৮ শতাংশ। গত ৪২ বছরে, অর্থাৎ ২০১৬ সালে দারিদ্র্যের হার কমে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ এবং হতদরিদ্রের হার ১২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসে।

বিবিএসের হিসাব ধরে প্রতিবছর পরিকল্পনা কমিশন দারিদ্র্যের হারের একটি অনুমিত হিসাব করে থাকে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের জুন মাস শেষে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ১৯ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। আর প্রথমবারের মতো অতিদরিদ্রের হার একক অঙ্কে বা ৯ দশমিক ৭ শতাংশে নেমেছে।