Thank you for trying Sticky AMP!!

সামাজিক সুরক্ষার আকারই বাড়ে, বাস্তবায়নে গলদ

বাংলাদেশে প্রতিবছর বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু সেবার মান বাড়ছে না। কারণ, বাজেট বাস্তবায়নে বড় ধরনের গলদ রয়েছে। ফলে গরিব মানুষদের পেছনে যে টাকা খরচ হয়, তাতে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সুবিধাভোগী হিসেবে যখন সত্যিকারের গরিব মানুষকে নির্বাচন করা সম্ভব হবে, তখনই দারিদ্র্যের হার কমে আসবে।

বহুজাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে সরকারের নজর শুধু গ্রামের দরিদ্র মানুষের দিকে। শহরের দরিদ্র মানুষকে নিয়ে সরকারের কর্মসূচি তুলনামূলক কম। শহরে দরিদ্রদের ৫৭ শতাংশই সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা পান না। শহরে ১৯ শতাংশ বা প্রতি পাঁচজন মানুষের মধ্যে একজন দরিদ্র। অথচ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় রয়েছে মাত্র ১১ শতাংশ মানুষ।

বাংলাদেশে অন্তত ১৩০টি (১২৩টি) সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি থাকার উল্লেখ করে সংস্থাটি এই সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সেই সঙ্গে বলেছে, এত বিশাল কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকারের এক সংস্থার সঙ্গে আরেক সংস্থার সমন্বয়হীনতা প্রকট। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ভাতা পাঠানোর যে প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হচ্ছে, সেটিও সঠিক নয়।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশ সোশ্যাল প্রোটেকশন পাবলিক এক্সপেনডিচার রিভিউ’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ অ্যালেন কদঅয়েল ও সংস্থাটির সামাজিক সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ মোস্তফা আমির সাব্বিহ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজমা মোবারক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব দীপক চক্রবর্তী এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তাবিষয়ক টিম লিডার কয়েন এভারেট।

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সামাজিক সুরক্ষা খাতে গরিব মানুষ বাছাইপ্রক্রিয়ায় বড় ধরনের গলদ রয়েছে। তাই সচ্ছল ব্যক্তিরা তালিকায় ঢুকে পড়ছে। গরিব মানুষ বাছাইয়ের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে সরকার জাতীয় খানা জরিপ করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত জরিপের ফল প্রকাশিত হলো না।

হোসেন জিল্লুর আরও বলেন, সরকার থেকে বলা হচ্ছে যে বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৬ শতাংশ সামাজিক সুরক্ষায় ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু এই হিসাবের মধ্যে আমলাদের পেনশনও ধরা হয়। সামাজিক সুরক্ষার যে ধারণা, তার মধ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের পেনশন পড়ে না। তাই সামাজিক সুরক্ষায় সরকারের ব্যয় সাকল্যে বাজেটের দেড় শতাংশের বেশি হবে না।

বিনায়ক সেন বলেন, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সরকারের অনেক দপ্তর মিলে বাস্তবায়ন করছে। এখানে সমন্বয় আনা জরুরি।

ইইউর টিম লিডার কয়েন এভারেট সঠিক ব্যক্তি বাছাইয়ের ওপর জোর দেন। বলেন, সামাজিক সুরক্ষা থেকে সুফল পেতে হলে সঠিক ব্যক্তিকে টার্গেট করতে হবে। সামাজিক সুরক্ষা হওয়া উচিত সর্বজনীন।

বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশে সামাজিক সুরক্ষা খাতের খরচ প্রতিবেশী ভুটান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনের চেয়েও বেশি। কিন্তু এ দেশে গরিব মানুষ নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি অস্বচ্ছ।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ১ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা রাখা আছে, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ১২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা বেশি।