Thank you for trying Sticky AMP!!

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমছে কেন

সঞ্চয়পত্র

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। শুধু যে নতুন বিনিয়োগ কমছে, তা নয়। অনেকে পুরোনো বিনিয়োগ তথা আগে কেনা সঞ্চয়পত্রও ভেঙে ফেলছেন। প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে আজ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমে যাওয়ার এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। তাই এখন প্রশ্ন উঠেছে, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমছে কেন?

সাধারণ অঙ্কের হিসাবে, সঞ্চয় তখনই কমে যখন মানুষের সঞ্চয়ের সক্ষমতা কমে যায়। গত কয়েক মাসে জীবনযাত্রার ব্যয় যে হারে বেড়েছে, তাতে দেশের মানুষের একটি বড় অংশই সেই বাড়তি ব্যয় বা খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। প্রতিদিনের খরচ মেটাতে যেখানে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে, সেখানে ভবিষ্যতের আশায় সঞ্চয় কমবে, এটাই স্বাভাবিক। কয়েক মাস ধরে মূল্যস্ফীতিও ৮ অঙ্কের ওপরে রয়েছে। মূল্যস্ফীতির এ চাপ মোকাবিলা করা এখন সাধারণ মানুষের জীবনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।  

Also Read: গ্রাহকেরা সঞ্চয়পত্র ভাঙাচ্ছেন বেশি, নতুন বিনিয়োগ করছেন কম

সম্প্রতি বাজারে দ্রব্যমূল্য থেকে শুরু করে গাড়িভাড়া, জ্বালানি খরচ, সন্তানের ভরণপোষণ, পড়ালেখার খরচ থেকে শুরু করে সব ধরনের খরচই বেড়েছে। বাড়তি এ খরচের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে বাড়তি বাড়িভাড়া।

প্রথম আলোয় প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৫ বছরে রাজধানীতে বাড়িভাড়া বেড়েছে ছয় গুণের বেশি। রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, ধানমন্ডি, রামপুরা, উত্তরা, শ্যামলী, মগবাজার, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকার ২০ জন ভাড়াটের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন বছরের শুরু থেকেই বাড়িভাড়া বাড়বে বলে বাড়িওয়ালারা জানিয়ে দিয়েছেন। বছরের শুরুতেই গুনতে হবে ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়তি বাড়িভাড়া। শুধু ঢাকা নয়, অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোয়ও বাড়িভাড়া বাড়ানো হচ্ছে।

এ যখন জীবনের বাস্তবতা, তখন বেশির ভাগ মানুষের পক্ষে দৈনন্দিন খরচ মিটিয়ে সঞ্চয়ী হওয়া শুধু কঠিনই নয়, অনেকটা বিলাসিতাও বটে। বাংলাদেশে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশই ধনী শ্রেণি। তারা বাড়তি সুদ ও কর অব্যাহতি সুবিধা নিতে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে। দীর্ঘদিন সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো সীমা ছিল না। ফলে ধনীরা ইচ্ছেমতো সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারত। কিন্তু গত কয়েক বছরের মধ্যে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছুটা কড়াকড়ি আরোপ করেছে সরকার। বেঁধে দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ বিনিয়োগের সীমা। এতে ধনী শ্রেণির বিনিয়োগ এ খাতে কিছুটা কমেছে বলে ধারণা করা হয়।

Also Read: সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন মানুষ

ধনী শ্রেণির বাইরে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ মধ্যবিত্ত শ্রেণি। যাদের বড় অংশই আবার সরকারি-বেসরকারি অবসরভোগী মানুষ। যাঁরা সারা জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় ও চাকরি শেষে পাওয়া অর্থ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেন। সেই বিনিয়োগের বিপরীতে প্রাপ্ত সুদে মাসে মাসে সংসার খরচ চালান। এ কারণে সঞ্চয়পত্র অনেকের কাছে মাসিক আয়েরও একটি উৎস। বাংলাদেশে শহর-গ্রাম, বিভাগ-জেলা ও উপজেলা মিলিয়ে লাখ লাখ সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও চাকরিজীবী রয়েছেন, যাঁদের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ রয়েছে। সম্প্রতি সরকার নিয়ম করেছে, ৫ লাখ টাকা বা তার বেশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থাকলে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন বাধ্যতামূলক। শুধু টিআইএন নয়, আয়কর প্রদানের প্রমাণপত্রও দেখাতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশে এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁদের কোনো টিআইএন নেই। আবার বৃদ্ধ বয়সে টিআইএন খোলার ঝক্কি-ঝামেলাও পোহাতে চান না অনেকে। এ কারণেও অনেকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারছেন না।

Also Read: সঞ্চয়পত্র কেনায় টাকার উৎস দেখাতে না পারলে বিপদ

বাংলাদেশে বর্তমানে যত ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে, সেগুলোর সর্বোচ্চ মেয়াদ পাঁচ বছর। ধরা যাক, পাঁচ বছর আগে কোনো এক উপজেলার একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক চাকরি শেষে পাওয়া তাঁর পুরো অর্থ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে রেখেছেন। এখন সেগুলোর মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু ওই শিক্ষকের টিআইএন না থাকায় ওই বিনিয়োগ নতুন করে আর পুনর্বিনিয়োগ করা যাচ্ছে না। ফলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ বাধ্য হয়ে তাদের বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন। সঞ্চয়পত্রের বদলে হয়তো তাঁরা ব্যাংক কিংবা অন্য কোথাও সেই অর্থ লগ্নি করছেন। এ কারণে সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, সঞ্চয়পত্রে প্রকৃত বিনিয়োগ কমে গেছে।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের চার মাসের ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) সঞ্চয়পত্রে নিট বা প্রকৃত বিনিয়োগ তো হয়ইনি, বরং ৬৩২ কোটি টাকা কম বিনিয়োগ হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, চার মাসে মানুষের কাছ থেকে যত বিনিয়োগ এসেছে, তার চেয়ে বেশি মানুষ সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়েছেন। এ পেছনে অনেক কারণ থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ের জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয় যে একটি বড় কারণ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

Also Read: বিনিয়োগের আকর্ষণীয় এক কর্মসূচি ‘পরিবার সঞ্চয়পত্র’

জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশের মানুষের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতাও দিন দিন কমছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২ অনুযায়ী, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় দেশজ সঞ্চয় কমে আসছে। অর্থাৎ জিডিপি যে হারে বাড়ছে, সঞ্চয় সেভাবে বাড়ছে না। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপির তুলনায় দেশজ সঞ্চয়ের পরিমাণ ছিল ২৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে কমে হয়েছে ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এ ছাড়া ব্যাংকে আমানত রেখে যে সুদ মিলছে, তা দিয়েও মূল্যস্ফীতির ঘাটতি পূরণ হচ্ছে না।

জাতীয় সঞ্চয় কমে যাওয়া অর্থনীতির জন্য মোটেই সুখকর কোনো বিষয় নয়। তবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ায় আপাতত তা সরকারের জন্য স্বস্তির খবর। কারণ, বিক্রি কমলে তাতে সরকারের সুদ বাবদ ব্যয়ও কমবে। কিন্তু সার্বিকভাবে সঞ্চয় কমে যাওয়া সাধারণ মানুষের জন্য বড় দুশ্চিন্তার। কারণ, তাতে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের বিপদ-আপদ ও ভবিষ্যৎ নিয়ে একধরনের অনিশ্চয়তাও দেখা দেয়। সেই অনিশ্চয়তা এখন ঘরে ঘরে।

Also Read: ব্যাংক ও ডাকঘরে বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র মিলবে না